ইকবাল বাহার, পঞ্চগড় প্রতিনিধিঃ
পঞ্চগড় সদর উপজেলার কামাত কাজলদিঘী ইউনিয়নের গলেহা বাজার থেকে গলেহা পাড়া পর্যন্ত মাত্র ৭৫০ মিটার দীর্ঘ একটি পাকা রাস্তার কাজ দীর্ঘ ১১ মাসেও শেষ হয়নি। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা, শিক্ষার্থী ও পথচারীরা। বিশেষ করে গলেহা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গলেহা উচ্চ বিদ্যালয় ও একটি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের প্রতিদিনই পোহাতে হচ্ছে ভোগান্তি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় এক বছর আগে ‘অনু ট্রেডার্স’ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রাস্তাটি পাকাকরণের কাজ শুরু করে। প্রকল্পের মেয়াদ ছিল এক বছর। কিন্তু ১১ মাসে অর্ধেক কাজও শেষ হয়নি। প্রথমে মাটি খুঁড়ে রেখে দেয়ার পর বর্ষায় রাস্তা প্লাবিত হয়ে আশপাশের বাড়িঘরেও পানি ঢুকে পড়ে। এরপর কিছুটা মাটি ফেলে ও সামান্য খোয়া ছিটিয়ে চলাচলের ব্যবস্থা করা হলেও প্রায় চার মাস ধরে সম্পূর্ণভাবে কাজ বন্ধ রয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তায় হাঁটুসমান পানি জমে থাকে। কোথাও কোথাও গর্ত হয়ে গেছে, খোয়া উঠে গেছে অনেক অংশে। এই অবস্থায় পথচারীরা তো বটেই, যানবাহন চলাচলও প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। স্থানীয় কৃষকেরা জানিয়েছেন, এই রাস্তা ব্যবহার করে কৃষিপণ্য বাজারজাত করা এখন দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে।
গলেহা উচ্চ বিদ্যালয় ও আশপাশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা জানায়, প্রতিদিন এই রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে চরম ঝুঁকি নিতে হচ্ছে। কোনো বিকল্প রাস্তা না থাকায়, বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করছে সবাই। শিক্ষার্থীদের দাবি, বর্ষা শুরু হওয়ার আগেই যেন রাস্তাটির কাজ সম্পন্ন করা হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা শারমিন আক্তার, মুর্শিদা বেগম, শফিকুল ইসলাম বলেন, “রাস্তা খুঁড়ে রেখে যাওয়ার ফলে বর্ষায় হাঁটু পানি জমে যায়। ছোট বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারে না। চারটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও সেবাগ্রহীতারা চরম কষ্টে রয়েছেন।”
স্থানীয় পল্লি চিকিৎসক সাথিকুর রহমান বলেন, “রোগীদের বাড়িতে গিয়ে চিকিৎসা দিতে গেলে ভীষণ দুর্ভোগ পোহাতে হয়। আমরা দ্রুত রাস্তাটির কাজ শেষ করার দাবি জানাই।”
গলেহা উচ্চ বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী বলেন, “সংশ্লিষ্টদের একাধিকবার জানিয়েছি- শিক্ষার্থীদের সমস্যা হচ্ছে। তারা প্রতিবার কাজ করবেন বলে আশ্বাস দেন, কিন্তু কার্যত কোনো পদক্ষেপ নেননি।”
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আইআরআইডিপি-৩ প্রকল্পের অধীনে ৬২ লাখ ২৯ হাজার ৯৯০ টাকা ব্যয়ে এই রাস্তার কাজ শুরু হয়। কাজের দায়িত্বে ছিল ‘অনু ট্রেডার্স’, যা পরবর্তীতে তিনি বিক্রি করে দেন ‘মেসার্স ইমান এন্টারপ্রাইজ’-এর মালিক নুর মো. শাহীন ইবনে ইমান (ওরফে ভাটা শাহীন)- এর কাছে।
তবে একাধিকবার চেষ্টা করেও তাদের কারো সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
সদর উপজেলা প্রকৌশলী রমজান আলী বলেন, “কাজ দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে একাধিকবার তাগিদ দিয়েছি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না করলে রি-টেন্ডার করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”