ইকবাল বাহার, পঞ্চগড় প্রতিনিধিঃ
পঞ্চগড় শহরের তাওহীদ মডেল মাদ্রাসায় হেফজ বিভাগের ছাত্রী সুমনা (১৩)-এর রহস্যজনক মৃত্যুতে শোক ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে স্থানীয়ভাবে। নিহত সুমনা সদর উপজেলার পানিমাছপুকুরি এলাকার নূরে আলম সিদ্দিকের কন্যা। পরিবারের দাবি, এটি স্বাভাবিক মৃত্যু নয়, বরং নির্যাতন ও অবহেলার মাধ্যমে একটি সম্ভাবনাময় জীবন নিভিয়ে দেওয়া হয়েছে।
মাদ্রাসা সূত্রে জানা গেছে, ১৮ মে বিকেলে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে সুমনা। কয়েকবার বমি করার পর তাকে পঞ্চগড় সদর আধুনিক হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের বড় বোন আমেনা খাতুন জানান, কিছুদিন আগে সুমনা কাঁদতে কাঁদতে বলেছিল, “আমাকে আর ওখানে পাঠাইও না। ওরা আমাকে পড়তে দেয় না, শুধু কাজ করায়। আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি।”
আমেনার অভিযোগ, মাদ্রাসার মুহতামিমের পুত্রবধূ তাকে অতিরিক্ত কাজ করাতেন ও গালিগালাজ করতেন। মাঝে মাঝেই বিভিন্ন বাড়িতে কাজের জন্য পাঠানো হতো তাকে। আমেনা আশঙ্কা করছেন, সুমনাকে ইলেকট্রিক শক দিয়ে মারা হতে পারে।
সুমনার এক আত্মীয়, যিনি তার গোসলের ব্যবস্থা করেন তিনি জানান—মেয়েটির এক হাত বাঁকা ছিল এবং মুখের পাশে ও মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিল। তার বক্তব্য, “এই চিহ্নগুলো দেখে মনে হয়নি এটি স্বাভাবিক মৃত্যু।”
নিহতের আরেক বোন জান্নাতুল ফেরদৌস জুলি বলেন, “সে সম্পূর্ণ সুস্থ ছিল। মাত্র দুইবার বমি করলেই কেউ মারা যায় না। মরদেহ স্পর্শ করে মনে হয়েছে সে বেশ কিছুক্ষণ আগেই মারা গেছে।”
সুমনার মা জানান, মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ তাদের বোঝান যে ময়নাতদন্ত হলে হাফেজা মেয়েটির মর্যাদা ক্ষুণ্ন হবে। এতে তারা বিভ্রান্ত হয়ে ময়নাতদন্তের দাবি থেকে সরে আসেন।
দুলাভাই শান্ত অভিযোগ করেন, মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ‘জিনাত লাইফস্টাইল’ এবং ‘স্যামসাং শোরুম’-এর মালিক পরিচয় দিয়ে পরিবারকে নানা ভয়ের কথা বলে চুপ করিয়ে দেন।
মাদ্রাসার মুহতামিম লাকি নাহার জানান, “মাগরিবের সময় বমি করার খবর পেয়ে আমরা সঙ্গে সঙ্গেই হাসপাতালে পাঠাই। কীভাবে মৃত্যু হয়েছে, তা আমাদের জানা নেই।”
পঞ্চগড় সদর থানার ওসি (তদন্ত) বলেন, “পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো লিখিত অভিযোগ না থাকায় মরদেহ আইনানুগভাবে হস্তান্তর করা হয়েছে।”
সুমনার পরিবার ও স্থানীয় সচেতন নাগরিক সমাজ দাবি তুলেছেন, এ মৃত্যুতে সঠিক তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
পরিবারের কথায়, “আমাদের মেয়ের মৃত্যু নিয়ে কেউ যেন গা-ছাড়া ভাব না দেখায়। ন্যায়বিচার পেতেই হবে।”