মাসুদ রানা, খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম নলবাড়ীতে দাঁড়িয়ে থাকা একটি শিক্ষা বাতিঘর এখন বিলীন হওয়ার অপেক্ষায়। ইছামতি নদীর অবারিত ভাঙন হুমকির মুখে ফেলেছে ৩৭ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত নলবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়কে। বিদ্যালয় ভবন থেকে নদীর দূরত্ব এখন মাত্র ৩ থেকে ৭ ফুট! আতঙ্ক আর অনিশ্চয়তার মাঝে প্রতিদিন শ্রেণিকক্ষে বসে পাঠ নিচ্ছে শত শত শিক্ষার্থী।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের মাঠের পাশেই ভয়ংকর রূপ নিয়ে গর্জে উঠছে ইছামতি নদী। ভাঙনের ক্ষত চিহ্ন যেন শিক্ষার অন্ধকার ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিদ্যালয়ের পশ্চিম দিকে অবস্থিত পাঁচটি শ্রেণিকক্ষ, কমনরুম, লাইব্রেরি ও দুটি ব্যবহারিক কক্ষ রয়েছে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে। সেখানেই প্রতিদিন শিক্ষার্থীরা ক্লাস করছে আতঙ্ক নিয়ে।
নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী আর্নিকা আকতার চোখে ভয় আর কণ্ঠে আশঙ্কার সুরে বলেন, “জানি না কখন ক্লাস করতে করতে নদীতে পড়ে যাবো। এই ভয়ে পড়াশোনা করতে খুব কষ্ট হয়।”
স্থানীয় বাসিন্দা মিম শাহ্ বলেন, “এই বিদ্যালয় শুধু শিক্ষার কেন্দ্র না, আমাদের এলাকার আত্মার অংশ। এটি নদীতে ভেঙে গেলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বপ্নও হারিয়ে যাবে।”
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রশিদা বানু জানান, “বছরের পর বছর ধরে নদীভাঙন সহ্য করছি, কিন্তু এবার পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এখনই ব্যবস্থা না নিলে হয়তো আগামী বর্ষা দেখার আগেই ভবনটা নদীতে হারিয়ে যাবে।”
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুজ্জামান সরকার বলেন, “আমরা বিষয়টি খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। দ্রুত সরেজমিনে পরিদর্শন করে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানানো হবে, যাতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া যায়।”
১৯৮৮ সালে প্রতিষ্ঠিত নলবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয় বর্তমানে প্রায় ৪৫০ শিক্ষার্থী ও ১৮ জন শিক্ষক-কর্মচারী নিয়ে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে। কিন্তু যদি সময়মতো নদী শাসনের ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে হারিয়ে যাবে একটি প্রতিষ্ঠানের ইতিহাস, আর থেমে যাবে শিক্ষার স্বপ্ন।
নদী ভাঙনের আগেই পদক্ষেপ—এটাই এখন নলবাড়ীবাসীর একমাত্র দাবি।