Monday, May 12, 2025
Homeনীলফামারীকিশোরগঞ্জে হারিয়ে যাচ্ছে মুখরোচক খাবার সিদল

কিশোরগঞ্জে হারিয়ে যাচ্ছে মুখরোচক খাবার সিদল

- Advertisement -

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

রাশেদ নিজাম শাহ, কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী) প্রতিনিধিঃ

শুঁটকি মাছ ও কচুর ডাটা দিয়ে তৈরি করা এক প্রকারের খাবারের নাম সিদল যা নীলফামারী অঞ্চলের একটি বিশেষায়িত খাবার। গ্রাম বাংলার মুখরোচক খাবার হিসেবে এর কদর রয়েছে।

নাকে ঘান পেলেই সিদল প্রিয় মানুষের জিহ্বায় লালা আসে। ‘সিদল’ একবার যারা খেয়েছে, না পেলে অবশ্যই পস্তাবে। শহুরে নিকট আত্মীয়ের মন জোগাতেও অস্ত্র হিসাবে স্বল্প আয়ের মানুষ ব্যবহার করে এই ‘সিদল’। ভোজনপ্রিয়রা ‘সিদলের’ জন্য লালায়িত থাকে। স্বাদে ও গুনে ভরপুর। রংপুর অঞ্চলের জনপ্রিয় ও ঐতিহ্যবাহী খাবার ‘সিদল’ এখনও জনপ্রিয়। এই প্রজন্মের অনেকেই সিদল চোখে না দেখলেও, কেই হয়তো নাম শুনে থাকতে পারে। গ্রামের শৌখিন বধূরা মাঝে-মধ্যে সিদল তৈরি করে। নিত্যপণ্যের মুল্যবৃদ্ধি ও এর তৈরি প্রক্রিয়া একটু সময় নেয় বলে কম দেখা যায় সিদলের।

নানা জাতের দেশীয় ছোট মাছের শুঁটকি, কচুর কুচি ডাটা, রসুন-আদা, কাচা মরিচ, লবণ, হলুদ, খাঁটি সরিষার তেল সিদল তৈরির মূল উপাদান। দেশী পুঁটি, খৈলশা, চান্দা, দারিকা, মউকা চেলী, শাটি, বাইলা, ছোট ট্যাংরা ও চিংড়ি রোদে শুকিয়ে প্রাকৃতিক উপায়ে শুঁটকি করে শৌখিন প্রিয় গ্রামের বধূঁরা। কচুর ডাটা কুচি করে কেটে রোদে শুকিয়ে শুঁটকি সহ শিলপাটা কিংবা উরুণ-গাউনে পিষে চিতই পিঠে কিংবা বড় আকারের বরইয়ের মত ‘সিদল’ বানাবার দৃশ্য চোখে পরে। সিদলের মানবৃদ্ধি ও ভিন্নতা আনার জন্য মশলা হিসাবে দেয়া হয় রসুন-আদা, কাচা মরিচ, লবণ, হলুদ ও খাঁটি সরিষার তেল।

এতে তৈরি হয় অমৃত সুধার মত সুঘ্রাণ ‘সিদল’। কালো ও হালকা সবুজে ছড়ানো রূপহীন ‘সিদল’। কিন্তু স্বাদে ও গুণে ভরা। দিন যত গড়ায় ততো মজাদার হয়ে উঠে। দীর্ঘদিন সংরক্ষণের জন্য ‘সিদল’ হাঁড়ি-পাতিল ভর্তি ছাইয়ের মাঝে রাখার প্রচলন আছে। এ কারণে পোকার আক্রমণ কম হয়। তবে আধুনিক যুগে ডিপ ফ্রিজে এখন অনেকেই ‘সিদল’ রাখেন।

খাবারে অরুচি আসলে ভোজনপ্রিয়রা খোঁজে ফিরেন ‘সিদল’। রুচিতে যেন জুড়ি নেই সিদলের। মাছ কিংবা সবজির সাথে রান্না করলে সুঘ্রাণ চারদিক ছড়িয়ে পরে। এক সময় ঘরে ঘরে সিদল পাওয়া যেত। এখন অনেকটাই দুষ্প্রাপ্য। সংসারের হাল ধরা গৃহবধূরা কাজের চাপে তেমন একটা সময় দিতে পারেন না।

এছাড়া রয়েছে, দেশী ছোট মাছের সংকট। আগে ঘর থেকে বের হলেই চারদিক পুকুর, ডোবা, খাল-বিল ও নদীতে মিলত ছোট মাছ। থৈ থৈ করত পানি। জাল ফেললেই উঠে আসতো ঝাঁকে ঝাঁকে মাছ। বর্ষার শেষ দিকে প্রায় শুকিয়ে যাওয়া জলাশয়গুলোতে অনেক বেশী মাছ পাওয়া যেতো। এর মধ্যে সব ধরনের ছোট মাছ পাওয়া যেত। এখন জলাশয় কম। যত্রতত্র মাছও মিলে না।

নীলফামারী সদর উপজেলার কচুকাটা গ্রামের রোকেয়া বেগম জানান, ‘কচুবাটার সাথে দেশী মাছের শুকটা, আর তার সাথে কাঁচা আকালী, নুন, রসুন ও আদা বাটা একটে করিবার নাগে। এ্যারপর হাতের মুটোত চিপিয়া গোল করা যায়, ফির চিতাউ পিঠার মোতন চ্যাপটাও করা যায় সিদল। মাছ নাহয় সবজিত দিয়া আন্না করলে হাউসে হাউসে খাওয়া যায়।’

নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার যদুমনি গ্রামের কৃষক আলম হোসেন বলেন, এক সময় পিছিয়ে পড়া নারীরা ডালিতে করে ‘সিদল’ বিক্রি করত। দেশীয় ছোট মাছের আকাল ও নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে এসব পিছিয়ে পড়া মানুষ সখের সিদল আর তৈরি করতে পারেন না। এ কারণে আর চোখে পড়ে না ছিড়ে যাওয়া মলিন শাড়ীতে ফেরি করা সেই ‘সিদল’ বিক্রেতার হাক। বাতাসেও তেমন ছড়ায় না মন ভোলানো সিদলের সুঘ্রাণ।

Facebook Comments Box
spot_img
এ বিভাগের আরও খবর
- Advertisment -spot_img

সর্বাধিক পঠিত খবর