মোঃ বুলবুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ
কুড়িগ্রামের বিনোদনপ্রেমী মানুষের বহুদিনের স্বপ্ন কুড়িগ্রামে একটি বিনোদন পার্ক হোক। কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক নুসরাত সুলতানার উদ্যোগে ইতোমধ্যে ধরলা নদীর পূর্ব প্রান্তে ‘ডিসি পার্ক’ নামে সেই কাঙ্ক্ষিত পার্কটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। বিশাল এই উন্নয়ন কর্মযজ্ঞকে বাধাগ্রস্ত করতে নামকরণ নিয়ে কিছু লোক ফেসবুকে কমেন্টের মাধ্যমে মিথ্যা প্রপাগান্ডা ছড়ানোর চেষ্টা করছে।
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক নুসরাত সুলতানা বলেন, কুড়িগ্রামের উন্নয়নে আমি আপনাদের পাশে আছি সাথেই আছি। আপনারা পাশে থাকলে কোনো বাধা- বাধাই না।
উল্লেখ্য কুড়িগ্রামে ‘ডিসি পার্ক’ হচ্ছে। পার্কের নামকরণ নিয়ে গুটি কয়েক লোক বিতর্ক করছে। জেলার বেশিরভাগ চিন্তাশীল সাধারণ মানুষজন বলছে, বিতর্ক সৃষ্টি করে কুড়িগ্রামের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে একটি কু-চক্রি মহল ষড়যন্ত্র করছে। কুড়িগ্রামের উন্নয়ন যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় এজন্য সকলকে সজাগ থাকারও আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
কুড়িগ্রাম ধরলা ব্রিজের পূর্ব প্রান্তে প্রস্তাবিত ‘ডিসি পার্ক’ কাজের অগ্রগতি দেখতে গিয়ে পার্কের নাম নিয়ে ফেইসবুক পোস্টে যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে সে ব্যাপারে জানতে চাইলে পার্কের কাজ দেখতে আসা পৌর শহরের বাসিন্দা এডভোকেট আসরাফ আলী, পারভেজ আহমেদ দম্পতি, রোকসানা,পারভীন বেগম সহ অনেকে পার্কের নির্মাণ কাজ কবে শেষ হবে তাদের আকাঙ্ক্ষার কথা বলতে গিয়ে জানান, কুড়িগ্রামে একটি বিনোদন পার্ক খুবই প্রয়োজন। আমাদের কাঙ্ক্ষিত পার্ক হচ্ছে দেখে আমরা খুবই খুশি।
পার্কের নাম ‘ডিসি পার্ক’ রাখা হয়েছে এ নিয়ে কেউকেউ বিতর্ক করছে আপনাদের মতে পার্কের নাম কি হলে ভালো হয় জানতে চাইলে তারা সরাসরি জানান, যারা নামকরণ নিয়ে বিতর্ক করছে ওরা সংখ্যায় মাত্র দুই- একজন, ওদের সংখ্যা হাজার হলেও তাতে কী আসে যায়, ওদের দ্বারা কুড়িগ্রাম উন্নয়নে একটা কলার গাছও কোথাও লাগাতে শুনিনি আমরা। ওরা ফেইসবুকে লাইক ভিউ ব্যবসার প্রোপাকান্ড চালাচ্ছে। ওরা কুড়িগ্রামের উন্নয়ন চায়না। ফজলুল হক ফারাজি, সাইদ আহমেদ বাবু, সাইফুর রহমান, মাসুদ রানা, আহমেদুল কবির মিডিয়ায় কাজ করেন। তারা জানান, কেউকেউ সেফ ফাজলামো করার জন্য নামকরণ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করে সুবিধা নেয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের মধ্যে ফারাজি বলেন, ইতোমধ্যে শুনেছি দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় ডিসি পার্ক নামে কয়েকটি বিনোদন পার্ক রয়েছে, কুড়িগ্রামে হলে ক্ষতি কি। আসলে পার্কের কাজ যাতে না হয় এজন্য জেলা প্রশাসনের উদ্যোগকে অন্যদিকে সরিয়ে নিয়ে তারা স্বার্থ হাসিলের গভীর ষড়যন্ত্র করছে।
কোন কারণে পার্কটির নির্মাণ কাজ বন্ধ হলে কুড়িগ্রামের বিনোদন প্রেমী মানুষ দাঁতভাঙা জবাব দিবে বলে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
উল্লেখ্য যে, কুড়িগ্রাম জেলা শহরে বিনোদনের কোনো জায়গা নেই। বিভিন্ন অকেশনে মানুষজন ধরলা ব্রিজে গিয়ে ব্রিজ ও ব্রিজ নিয়ন্ত্রিত দু’প্রান্তের বাঁধে একটু ঘোরাঘুরি করে সময় কাটায় মাত্র। কুড়িগ্রাম শহরে একটি বিনোদন পার্ক হোক। মানুষের সেটি বহুদিনের স্বপ্ন। চলতি বছরের ২০ এপ্রিল জেলা প্রশাসনের একটি মিটিংয়ে জেলার প্রায় সকল রাজনৈতিক দলের (বিএনপি, জামায়াত, ইসলামি আন্ দলন, এনসিপি, এবিপার্টি, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন) নেতৃবৃন্দ সহ আমন্ত্রিত বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, মিডিয়া প্রতিনিধি, শহরের গণ্যমান্য সুধীজন, সরকারি- বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকতা সকলের মতামতের ভিত্তিতে কুড়িগ্রাম ধরলা ব্রিজের পূর্বপ্রান্তে
‘ডিসি পার্ক’ নামে একটি পার্ক নির্মাণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক নুসরাত সুলতানা অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে সিদ্ধান্তটি মিটিংয়ে রেজুলেশনের মাধ্যমে ধরলা সেতুর পূর্ব প্রান্তে ‘ডিসি পার্ক’ নামকরণে একটি পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এরই প্রেক্ষিতে ধরলা সেতুর পূর্বপ্রান্তে কুড়িগ্রাম- ভূরুঙ্গামারী সড়কের পাশে সরকারের পড়ে থাকা প্রায় ৩৫ একর জমিতে পার্ক নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়। গত প্রায় এক মাসের মধ্যে বালু ভরাটসহ কিছু নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। জেলা প্রশাসক পার্কের নির্মাণ কাজ নিয়মিত পরিদর্শন ও তদারকি করছেন। যতটুকু জানা যায়, পার্কে মিনি চিড়িয়াখানা, রেস্তোরাঁ, বিভিন্ন রাইড, পিকনিক স্পট, শোভা বর্ধনের বিভিন্ন স্পট, নামাজ ঘর, শিশু কর্নার, ভাওয়াইয়া কর্নার, কছুমুদ্দিন কর্নার সহ বিভিন্ন সুবিধা রাখার পরিকল্পনা রয়েছে। বিভিন্ন প্রজাতির গাছ (ফল-ফুল)লাগিয়ে পরিবেশ বান্ধব ও দৃষ্টিনন্দন করা এবং পার্কটি ঘিরে মানুষের কর্ম সংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে বেকারত্ব কমানোর জন্য অভ্যন্তরে ও বাহিরে দোকান ঘর সহ বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে পরিচালনার কথাও বলা হয়েছে।
কুড়িগ্রাম শহরে পার্ক হচ্ছে বিষয়টি এরি মধ্যে সর্বত্র জানাজানি হলে নামকরণ নিয়ে কেউকেউ শুরু করে বিতর্ক। বিতর্কের বিষয়টি বিভিন্ন মিডিয়াতেও সংবাদ আকারে প্রকাশ পায়। কেউ বলছে কুড়িগ্রামে পার্ক হচ্ছে তার নাম কুড়িগ্রাম পার্ক হতে হবে, কেউ বলছে ধরলা নদী তীরবর্তী স্থানে হচ্ছে পার্কের নাম ধরলা পার্ক হওয়াই বাঞ্ছনীয়। কেউ বলছে কুড়িগ্রামে ইকো পার্ক হোক। অনেকে ভিন্ন ভিন্ন নাম আশা করছেন। আবার বেশির ভাগ সাধারণ মানুষ বলছেন নাম দিয়ে কি হবে। কুড়িগ্রাম উন্নয়নে একটি পার্ক হচ্ছে সেটিই বা কম কিসে। জেলা প্রশাসক পার্কটি করছেন এজন্য অনেকেই জেলা প্রশাসককে ধন্যবাদ জানান।
এমন ধন্যবাদ জানাতে গিয়ে কুড়িগ্রাম শহরের প্রাণকেন্দ্র ঘোষপাড়ার যুবসমাজের আইকন এমডি এডি হেলাল কুড়িগ্রাম ‘ডিসি পার্ক’ নামকরণ নিয়ে ফেইসবুকে দুই একজন তাদের নিজ আইডি থেকে অহেতুক জরিপ ও বিতর্কিত পোস্ট দেখে নিজে একটি পোস্ট করে বলেন, বিষয়টি আমার দৃষ্টিতে খুবই অবান্তর মনে হয়েছে। আমার অবস্থান থেকে আমি যতটুকু বুঝি সৃষ্টিশীল ও উন্নয়নশীল যে কোন কাজে আপামর জনসাধারণ ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করা উচিত। এখানে কাজটির গুরুত্ব কতটুকু সেটাই অনুভব করা দরকার। যেকোনো কাজের একটা শিরোনাম থাকে, সেটার দিকে নজর নাদিয়ে কাজটির গুরুত্বের দিকে খেয়াল রাখা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।
আঞ্চলিকতা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অবহেলার কারণে আমাদের এই জেলাটি অবহেলিত ও বৈষম্যের শিকার। এখানে উন্নয়নের কোন ছোয়া লাগেনি, যে কাজগুলো আমাদের স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে হাওয়ার কথা স্বাভাবিকভাবে সেই কাজগুলোই আমরা করতে পারিনি। এর কারণ হিসেবে আমি বিগত দিনের রাজনৈতিক নেতৃত্বের ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরকেই দায়ী করি। তাদের হীনম্মন্যতার কারণেই এই জেলায় আজ পর্যন্ত কোন উন্নয়নের ছোয়া লাগেনি। এখানে নেই কোন কলকারখানা, নেই মানুষের কোন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা, নেই কোন বিনোদনের জায়গা। স্বাভাবিকভাবে সরকারি বরাদ্দের কাজগুলোতেই আবার বাধার সৃষ্টি করাই যেন এদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। তিনি
উদাহরণ দিয়ে বলেন, এক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় যার স্থান নির্ধারণ নিয়ে টানা হ্যাঁচড়া করতে গিয়ে অনেক সময় বিলম্ব হয়েছে। এরকম আরও অনেক উদাহরণ দেয়া যাবে। বর্তমান কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মহোদয় যে উদ্যোগটি গ্রহণ করেছেন, আমাদের সকলের উচিত তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে কাজটি তিনি যেন ভালোভাবে করতে পারেন সেজন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া। কিন্তু আমরা তানা করে আমরা আমাদের চিরাচরিত স্বভাবেই আবার আবির্ভূত হতে চলেছি। তিনি এও বলেন, তর্ক বিতর্কের কারণে সুযোগ্য জেলা প্রশাসক মহোদয় যদি এটা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে তার কোন ক্ষতি হবে না কিন্তু আমরা কুড়িগ্রামবাসী ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাব এই স্বাভাবিক বিষয়টাই আমাদের বুঝতে হবে।
উন্নয়ন সেটা যেকোনো নামেই হতে পারে আবার মনমতো না হলে সেটার সংস্কারও করা যেতে পারে। আমি জেলা প্রশাসক মহোদয়কে ধন্যবাদ জানাই, তিনি তার নিজের নামে নামকরণ না করে ডি সি পার্ক নামকরণ করেছেন। আর আমাদের বিতর্ক সৃষ্টিকারী আবালদের বুঝতে হবে ডিসি কোন ব্যক্তিগত সম্পদ নয়, এটি একটি রাষ্ট্রীয় কাঠামো। রাষ্ট্রীয় ভাবে জেলার প্রধান। এখানে ব্যক্তির পরিবর্তন হতে পারে কিন্তু পদটির কোনো পরিবর্তন হয় না। এ ব্যাপারে তিনি উদ্ধৃতি দিয়ে আরও বলেন, ইতঃপূর্বে আমরা দেখেছি একজন জেলা প্রশাসক রাষ্ট্রীয় অর্থ ব্যয় করে তার নিজের নামে নামকরণ করে(সুলতানা সরেবর) করেছেন। এটা মানসিকতার ব্যাপার।
আমাদের বর্তমান জেলা প্রশাসক সেটা করেননি, এজন্য তাকে আমার পক্ষ থেকে ও আপামর জনসাধারণের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
পার্কের নামকরণ নিয়ে বিতর্ক বিষয়ে বলতে গিয়ে কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির সদস্য সচিব জনাব সোহেল হোসাইন কায়কোবাদ ফেইসবুক পেইজের এক ভিডিয়ো পোস্টে বলেন, ধরলা ব্রিজের পূর্ব পাড়ে ডিসি পার্ক নির্মাণে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ফেসিস্ট সরকার পতনের আন্দোলনে আমরা যে সকল রাজনৈতিক দল ছিলাম সকলের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে এবং জেলা প্রশাসক মহোদয় সম্মতি দিয়েছেন এবং আমরা মনে করি যে, কুড়িগ্রাম জেলায় বিনোদনের তেমন কোন ব্যবস্থা নেই, এজন্য ডিসি পার্ক হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং আমরা বুজতে পারি বিভিন্ন ঈদ পর্বে এবং বিভিন্ন সময় ধরলা ব্রিজ পাড়ে মানুষের যে সমাগম ব্যাপক উপস্থিতি এতেই বুঝা যায় যে, কুড়িগ্রামে একটা বিনোদনের জায়গা প্রয়োজন, ডিসি পার্ক’টা ওখানে হলে শুধু বিনোদন ছাড়াও আমরা বিভিন্ন অনুষ্ঠান ওখানে করতে পারবো, পাশে একটা মঞ্চ থাকবে। জেলা প্রশাসক মহোদয়কে পার্কটি দ্রুত বাস্তবায়নের আহবান জানান একই সাথে তিনি নাম করণ বিতর্ক নিয়ে বলেন যারা নামকরণ নিয়ে বিতর্ক করছে তার নিঃসন্দেহে ফেসিস্ট সরকারের প্রতাত্না।
নামকরণ বিতর্ক নিয়ে জানতে চাইলে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম বেবু বলেন, কই আমি তো তেমন কাউকে দেখছি না কেউ নামকরণ নিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছে, তবে কিছুকিছু ফেইসবুক যোদ্ধা তাদের ফেইসবুক আইডিতে অহেতুক প্রোপাকান্ড চালাচ্ছে। শুধু তাদের উদ্দেশ্যই বলতে চাই, কুড়িগ্রামে যখন শেখ রাসেল পার্ক, কুড়িগ্রাম টাউনহল নাম পরিবর্তন করে শেখ রাসেল হল করা হয়েছে তখন ওইসব যোদ্ধারা কোথায় ছিল। কুড়িগ্রামের উন্নয়নে তখন কিছুই বলা হয়নি, আমি আশা করছি এখনও কেউ কিছুই বলছে না বলবেও না। মতামত দেয়ার অধিকার সবার আছে, থাকা দরকার তবে কুড়িগ্রামের উন্নয়নে কেউ বাধা সৃষ্টি করতে চাইলে উপযুক্ত জবাব দেয়া হবে।
নামকরণ বিতর্ক নিয়ে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক নুসরাত সুলতানা বলেন, জেলা প্রশাসনের মিটিংয়ে উপস্থিত সকলের মতামতের ভিত্তিতে ‘ডিসি পার্ক’ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে আমার ব্যক্তিগত কোন মত নেই। পার্কের নামকরণ নিয়ে ভিন্নমত থাকতেই পারে। আমরা সেগুলোকে স্বাগত জানাই। তবে যতোদিন থাকবো
সরকারি বিধি অনুযায়ী কুড়িগ্রামের উন্নয়নে আপনাদের পাশে আছি সাথেই আছি, আপনারা পাশে থাকলে কোন বাধা- বাধাই না বলে জানান তিনি ।