Home দিনাজপুর খানসামায় বিএনপির শান্তিপূর্ণ সমাবেশে হামলা, আহত ২৫

খানসামায় বিএনপির শান্তিপূর্ণ সমাবেশে হামলা, আহত ২৫

খানসামায় বিএনপির শান্তিপূর্ণ সমাবেশে হামলা, আহত ২৫

মাসুদ রানা, খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধি:
দিনাজপুরের খানসামা উপজেলায় বিএনপির এক শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সমাবেশে সশস্ত্র হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ৪০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন এবং ভাঙচুর করা হয়েছে ৬০টি মোটরসাইকেল। হামলার ঘটনায় এলাকায় চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

গত শুক্রবার (১১ জুলাই) বিকেলে খানসামার ভাবকী ইউনিয়নের কাচিনিয়া বাজারে বিএনপির কেন্দ্রীয় ৩১ দফা কর্মসূচির অংশ হিসেবে একটি প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এর আগে দুপুরে স্থানীয় বিএনপি নেতা জলিল শাহের ওপর হামলা হয়। অভিযোগ রয়েছে, তাকে লাঞ্ছিত ও বিবস্ত্র করা হয়। এসময় তাকে রক্ষা করতে গিয়ে সাবেক ইউপি সদস্য আশরাফ আলীও গুরুতর আহত হন।

এই ঘটনার প্রতিবাদে সন্ধ্যায় বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বে কাচিনিয়া বাজারে একটি প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শেষ হওয়ার আগমুহূর্তে রাত সাড়ে ৮টার দিকে একদল অস্ত্রধারী হঠাৎ হামলা চালায়। লাঠি, রড, দেশীয় অস্ত্র ও ইট-পাটকেল দিয়ে চালানো এই হামলায় কর্নেল মোস্তাফিজ, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মিজানুর রহমানসহ অন্তত ৪০ জন গুরুতর আহত হন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলার সময় অনেকে রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে যান। আহতদের মধ্যে কয়েকজনকে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও খানসামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

বিএনপি নেতা কর্নেল (অব.) মোস্তাফিজুর রহমান অভিযোগ করেন, এই হামলার নেতৃত্ব দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক এমপি আখতারুজ্জামান মিয়া এবং ভাবকী ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক রবিউল আলম তুহিন। তারা তাদের সমর্থকদের নিয়ে সমাবেশে অতর্কিত হামলা চালান। এ সময় বাজারের দোকানপাটেও হামলা হয় এবং ব্যবসায়ীরা আতঙ্কে দোকান বন্ধ করে পালিয়ে যান।

খামারপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক এই হামলাকে “গণতন্ত্রের চরম অপমান হিসেবে আখ্যায়িত করে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দল থেকে বহিষ্কারের দাবি জানান।

এদিকে খানসামা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নজমুল হক বলেন, সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এখন পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এখনো কোনো পক্ষ মামলা করেনি, তবে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

শনিবার (১২ জুলাই) সকালে উপজেলার চৌধুরী রাইস মিল চত্বরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা বিএনপির নেতারা হামলার নিন্দা জানিয়ে দোষীদের বিচার ও বহিষ্কারের দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে কর্নেল (অব.) মোস্তাফিজুর রহমান লিখিত বক্তব্যে বলেন, “এই হামলা পূর্বপরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে। হামলাকারীরা লাঠি, রড, পাইপ ও ইটপাটকেল দিয়ে আমাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।” তিনি জানান, হামলায় ৪০ জনের বেশি নেতাকর্মী আহত হন এবং অনেক মোটরসাইকেল ও দোকান ভাঙচুর করা হয়।

বক্তারা অভিযোগ করেন, “হামলার সময় পুলিশ মাত্র কয়েক গজ দূরে থাকলেও কোনো হস্তক্ষেপ করেনি। যদি আগেভাগে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হতো, তাহলে এমন ঘটনা ঘটত না।”

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, “বিএনপি কখনোই সহিংস রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। যারা দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে এ ধরনের হামলা চালাচ্ছে, তাদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে।

তারা কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান, যেন দ্রুত সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়ে দলের মধ্যে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা হয়।

Facebook Comments Box

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here