Friday, June 13, 2025
Homeপঞ্চগড়গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আত্মদানকারী শহীদ ও আহতদের পাশে পঞ্চগড় জেলা বিএনপি

গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আত্মদানকারী শহীদ ও আহতদের পাশে পঞ্চগড় জেলা বিএনপি

- Advertisement -

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

ইকবাল বাহার, পঞ্চগড় প্রতিনিধিঃ
গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আত্মদানকারী শহীদ ও আহতদের পরিবারের মুখে এবার ঈদের হাসি নয়, ছিলো স্মৃতির ভার। পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর মানবিক ও ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছে পঞ্চগড় জেলা বিএনপি।

রোববার (৮ জুন) বোদা উপজেলার পাঁচপীর ইউনিয়নের ম্যানাগ্রামে আয়োজিত ঈদ উৎসবটি যেন হয়ে উঠেছিল এক আবেগঘন মিলনমেলা—যেখানে রাজনীতি ছাপিয়ে উঠে এসেছে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর দায়।

শহীদ সাজু ইসলামের স্ত্রী শারমিন আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমার স্বামী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শহীদ হয়েছেন। আমার ছোট ছেলেটি আজ ঈদের নামাজে বাবার হাত ধরে যেতে পারেনি। যে স্বৈরাচারী শক্তি আমার ছেলেকে এতটুকু বয়সে পিতৃহারা করেছে, আমি সেই খুনির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।”

তিনি আরও বলেন, “আমার ছেলের বাবা নেই। সে কাকে বাবা বলে ডাকবে? এই শোক কোনো ঈদে মুছে যাবে না। তারেক রহমানের কাছে আমার একটাই আবেদন—যে মানুষগুলো আমাদের এত কষ্ট দিয়েছে, তাদের যেন দেশের জনগণের সামনে বিচার হয়।”

শহীদ সাগর ইসলামের পিতা রবিউল ইসলাম বলেন, “আমার ছেলে ঢাকার বাড্ডায় নির্মমভাবে গুলি খেয়ে মারা গেছে। আমি শুধু তার হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই। আজকের এই অনুষ্ঠানে এসে মনে হচ্ছে, আমরা একা নই। ফরহাদ হোসেন আজাদ ভাই আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, এটাই আমাদের বড় প্রাপ্তি।”

শহীদ মো. সুমনের পিতা আব্দুল হামিদ বলেন, “আমার ছেলে বলেছিল—‘বাবা, তোমাকে আর কাজ করতে হবে না। আমি উপার্জন করে খাওয়াবো।’ কিন্তু সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট শাসনে আমি ছেলেকে হারিয়েছি। আমি তার বিচার চাই।”

জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ও কেন্দ্রীয় পল্লী উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক ফরহাদ হোসেন আজাদ বলেন, “গণতন্ত্রের জন্য যাঁরা জীবন দিয়েছেন, তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাঁদের আত্মত্যাগ শুধু মনে রাখলেই চলবে না, তাঁদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।”

তিনি আরও বলেন, “এই ঈদ উৎসব শুধুই আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি একটি প্রতিশ্রুতি—যে শহীদদের রক্ত বৃথা যাবে না। তাঁদের স্মৃতি ও পরিবারের প্রতি ভালোবাসাই আমাদের সংগঠনের শক্তি।”

জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও পঞ্চগড় জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি অ্যাড. আদম সুফি বলেন, “এই আয়োজন শুধু রাজনৈতিক নয়, এটি এক মানবিক বার্তা বহন করে। রাজনীতি মানেই কেবল ক্ষমতা নয়, এটি মানুষের দুঃখে পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ।”

তিনি আরো বলেন, “রাজনীতিতে সহানুভূতি ও দায়িত্ববোধ এখন খুবই দুর্লভ বিষয়। কিন্তু পঞ্চগড় জেলা বিএনপির এই আয়োজন দেখিয়ে দিয়েছে—শুধু পতাকা নয়, ভালোবাসাও হতে পারে নেতৃত্বের প্রতীক। শহীদ বাবার ছেলেরা হয়তো আজ বাবার কাঁধে উঠে ঈদের নামাজে যেতে পারেনি, তবে তাঁদের হৃদয়ে ছিল পুরো জাতির শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।

অনুষ্ঠান শেষে শহীদ ও আহত পরিবারের সদস্যদের নিয়ে একসঙ্গে মধ্যাহ্নভোজ করেন নেতৃবৃন্দ। তাঁদের সঙ্গে সময় কাটান, খোঁজখবর নেন এবং ভবিষ্যতেও পাশে থাকার অঙ্গীকার করেন। পুরো আয়োজন জুড়ে ছিলো আবেগ, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও সাহসিকতার এক অনন্য সম্মিলন।

Facebook Comments Box
spot_img
এ বিভাগের আরও খবর
- Advertisment -spot_img

সর্বাধিক পঠিত খবর