Saturday, July 5, 2025
Homeদিনাজপুরগ্যাপ পদ্ধতিতে আম চাষ করে বিদেশে রফতানি করছেন হাকিমপুরের কৃষক নিরঞ্জন রায়

গ্যাপ পদ্ধতিতে আম চাষ করে বিদেশে রফতানি করছেন হাকিমপুরের কৃষক নিরঞ্জন রায়

- Advertisement -

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

গোলাম মোস্তাফিজার রহমান মিলন, হিলি (দিনাজপুর) প্রতিনিধিঃ
উত্তরের জেলা দিনাজপুর কৃষি নির্ভরশীল হলেও লিচু উৎপাদনে শীর্ষে রয়েছে দিনাজপুর জেলা। এই জেলার বিভিন্ন অংশে আম চাষ বা উৎপাদনের জন্য তৈরি করা হয়েছে প্রজেক্ট বা আম বাগান। দিনাজপুরের সীমান্তবর্তী হাকিমপুর হিলি পৌর শহরের উদ্যোক্তা কৃষক গ্যাপ পদ্ধতিতে (উন্নত কৃষি পরিচর্যা বা গুড এ্যাগ্রিকালচার অব ফ্রুটস) আম চাষ করে প্রথম বারের মতো বিদেশে রফতানি করছেন হাকিমপুরে কৃষক নিরঞ্জন চন্দ্র রায়। তিনি এখন হাকিমপুর উপজেলায় আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন।

উপজেলা কৃষি অফিসের সার্বিক তত্বাবধান, পরামর্শ ও সহোযোগিতায় প্রথম বারের মতো বিদেশে বারি-৪ আম রফতানি সম্ভব হয়েছে বলে জানান উদ্যোক্তা কৃষক নিরঞ্জন চন্দ্র রায়।
গ্যাব বা ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতি। এ পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে বেশি উৎপাদন ও খরচ কম হয় বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা।

আর উপজেলা কৃষি বিভাগ বলছে, গ্যাব পদ্ধতি বলতে, উন্নত কৃষি পরিচর্যা বা গুড এ্যাগ্রিকালচার অব ফ্রুটস বা ফ্রুড ব্যাগিং এ পদ্ধতিতে ফল গাছে থাকা অবস্থায় একটি নির্দিষ্ট সময়ে বা যখন ফল মেচুয়েট হবে সেই সময় বিশেষ ধরনের ব্যাগ দিয়ে ফলকে আবৃত করাকে বোঝায়। ব্যাগিং করার পর থেকে ফল সংগ্রহ করা পর্যন্ত গাছেই লাগানো থাকে ব্যাগটি। এপদ্ধতিতে নিরাপদ, বিষমুক্ত ও রফতানিযোগ্য আম উৎপাদন করা যায়। এছাড়া বালাইনাশক ব্যবহার ছাড়াই শতভাগ রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণমুক্ত আম পাওয়া সম্ভব। গ্যাব পদ্ধতিতে ব্যাগিং করলে বালাইনাশকের ব্যবহার কমবে ৭০-৮০ শতাংশ। যেকোনো জাতের আমের ত্বক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও হলুদাভ করা যায় এবং আমের সংরক্ষণকাল বাড়ানো যায়, যা রফতানির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

হাকিমপুর হিলি সদর থেকে মাত্র আড়াই থেকে তিন কিঃ মিঃ পূর্বে পৌর শহরের গোহাড়া গ্রামের কৃষক নিরঞ্জন চন্দ্র রায় গ্যাব পদ্ধতি অনুসরণ করে এক একর জমিতে বারী-৪, গৌরমতি ও আম্রপালি জাতের আম চাষ করেছেন। প্রোগ্রাম অন এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড রুরাল ট্রান্সফরমেশন ফর নিউট্রিশন অন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ অ্যান্ড রেসিলিয়েন্স ইন বাংলাদেশ (পার্টনার) ও ক্লাস্টার ডেমোনস্ট্রেশন ফর গ্যাপ স্ট্যান্ডার্ড অব ফ্রুটস প্রকল্পের আওতায় আমবাগান করেছেন তিনি।

সরজমিনে বাগানে গিয়ে দেখা যায়, আম গাছের সবুজ পাতার ভিতরে থোকায় থোকায় দুলছে আম। আবার ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে আম মোড়ে রাখা হয়েছে। বাগানের ভিতরে প্রবেশ করলে পাকা আম এর গন্ধে মুখরিত আম বাগান।
এসময় কথা হয় বাগানের পরিচর্যা কর্মী হাকিম মন্ডলের সাথে তিনি বলেন, এই বাগানের বয়স ৫ বছর আর আমি গত ৪ বছর থেকে এই আম বাগান মৌসুমের শুরুতেই দেখা শুনা বা পরিচর্যার দ্বায়িত্ব পালন করে আসছি। এবারে বাজারে আম এর দাম না থাকায় লোকসন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

উদ্যোক্তা কৃষক নিরঞ্জন চন্দ্র রায় বলেন, প্রথমে এটি আবাদি জমি ছিলো। তারপর ইউক্লিকট্যাসের বাগন করা হয়। পরবর্তীতে পরিবারের সিদ্ধান্তে আম বাগান তৈরি করা হয়। পরে এই গ্রামে উপজেলা কৃষি অফিসের সহায়তায় গ্যাব পদ্ধতিতে আম চাষের জন্য ‘গুড এ্যাগ্রিকালচার অব ফ্রুটস স্কুল চালু করা সেখান থেকে, গ্যাপ ও পার্টনার প্রকল্পের মাধ্যমে প্রথমে প্রশিক্ষণ নিয়েছি। পরে প্রকল্পের আওতায় আমবাগান করেছি। মাটির ধারণ ক্ষমতা, পানি পরীক্ষা করা হয়েছে এবং আম যখন পরিপক্ব সময় হয়ে আসে তখন কীটনাশক ব্যবহারের ফলে মানব দেহের ক্ষতিকর কোন উপাদান আছে কি না এবং রফতানি যোগ্য আমের জন্য এমআরএল টেষ্ট জরুরি। যা আমি কৃষি অফিসের মাধ্যমে করেছি। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। সে মোতাবেক আমের পরিচর্যা করে ভালো ফলন পেয়েছি। আবহাওয়া ভালো থাকায় আমের ফলন বেশ ভালো হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সহযোগিতায় হাকিমপুর উপজেলায় এই প্রথম আমার বাগানের বারি-৪ আম বিদেশে (ইউরোপ কান্ট্রিতে) রফতানি করা হয়েছে এতে সত্যি সত্যিই আমি খুবই গর্বিত।

তিনি বলেন, আগে আমরা গ্যাপ বা ব্যাগিং পদ্ধতি ছাড়াই আম চাষ করেছি। সেক্ষেত্রে দাম খুব একটা ভালো না পাওয়ায় লাভজনক হয়নি। এছাড়া গ্যাপ বা ব্যাগিং পদ্ধতি ছাড়া আম চাষের ফলে ক্ষতিকর পোকা দমনে কীটনাশক ব্যবহারের ফলে মানবদেহের ক্ষতিও হয়। যার ফলে গ্যাপ বা ব্যাগিং পদ্ধতিতে আম চাষ করা উত্তম। পোকামাকড় থেকে ফলকে মুক্ত রাখার জন্য সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ও হলুদ আঠালো ফাঁদ বেশ উপকারী। কীটনাশক ব্যবহারের ফলে খরচ বেশি হয়। আর এ পদ্ধতিতে আমের গুণাগুণ যেমন ভালো থাকে, তেমনি খরচও কম হয় বলে জানান তিনি।

হাকিমপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরজেনা বেগম জানান, উপজেলায় চলতি মৌসুমে প্রথমবারের মতো গ্যাপ পদ্ধতিতে পার্টনার প্রকল্পের আওতায় আম চাষ প্রদর্শনী বাস্তবায়ন হয়েছে। পৌর শহরের গোহাড়া গ্রামের উদ্যোক্তা কৃষক নিরঞ্জন রায়কে এক একর আমবাগানের একটি প্রদর্শনী দেয়া হয়েছে। বাগানের মাটি ও পানি পরীক্ষা, পরিচর্যা থেকে শুরু করে কখন, কোন বালাইনাশক স্প্রে করতে হবে, সব বিষয়ে তাকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে নিয়মিতভাবে তার বাগান মনিটরিং করা হচ্ছে। ফল হারভেস্ট করার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত যে পরিচর্যাগুলো না করলেই নয়, তার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। সেফ ফ্রুটস হারভেস্ট বা প্রসেসের ক্ষেত্রে ব্যাগিং পদ্ধতি খুব জরুরি একটি পরিচর্যা। যেখানে বালাইনাশকের পরিমিত ব্যবহার থেকে শুরু করে একটি ফলের সবকিছুই এ পদ্ধতির মাধ্যমে করা যায়।

তিনি আরও জানান, উপজেলা কৃষি অফিস যখন যে পরামর্শ দিয়েছে কৃষক নিরঞ্জন রায় তা কাজে লাগিয়ে গ্যাপ পদ্ধতি অনুসরণ করে বারি-৪ আম চাষ করে প্রথম বারের মতো হাকিমপুর উপজেলা থেকে ৪৫০ কেজি আম ইউরোপ কান্ট্রিতে রফতানি করা সম্ভব হয়েছে। এটি সত্যি সত্যিই এই উপজেলায় কৃষি ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক বলে আমি মনে করি। আগামীতে কৃষি অফিসের পরামর্শ অনুসরণ করে কৃষক আম চাষ করলে উৎপাদিত আম বিদেশে রফতানি সম্ভব বলে আশা করেন তিনি।

Facebook Comments Box
spot_img
এ বিভাগের আরও খবর
- Advertisment -spot_img

সর্বাধিক পঠিত খবর