Friday, May 2, 2025
Homeদিনাজপুরঘোড়াঘাটে ১৯২৫হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ, উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২৩ হাজার মেঃ টন

ঘোড়াঘাটে ১৯২৫হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ, উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২৩ হাজার মেঃ টন

- Advertisement -

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

মোঃ মাহফুজুর রহমান সরকার, ঘোড়াঘাট (দিনাজপুর) প্রতিনিধিঃ

রৌদ্রের প্রখর তাপে হাঁসফাঁস জনজীবন। সেই তাপেও খুশিতে ভুট্টা চাষিরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে ভালো হয়েছে ভুট্টার ফলন।বাজারে মিলছে ভুট্টার ভালো দাম। সব মিলিয়ে আনন্দে আত্মহারা ভুট্টা চাষিরা।

চলতি মৌসুমে ঘোড়াঘাট উপজেলায় ১ হাজার ৯২৫হেক্টর জমিতে ভুট্টার চাষ হয়েছে। হেক্টর প্রতি ফলন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১২ মেট্রিক টন। এ হিসেবে ২৩ হাজার মেঃ টন উৎপাদনের আশা করছেন কৃষি অফিস।
সরেজমিনে সোমবার সকাল থেকে উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, বিস্তৃত ফসলের মাঠে জমি থেকে ভুট্টা ভাঙতে ব্যস্ত চাষি ও শ্রমিক। নানা বয়সী নারী-পুরুষ গাছ থেকে ভুট্টা ভাঙছেন। কেউবা ভুট্টার খোসা ছড়িয়ে বস্তায় ভরছেন। বস্তায় ভর্তি এসব ভুট্টা জমি থেকে চলে যাচ্ছে চাতালে অথবা কৃষকের বাড়ির আঙিনায়।

কৃষকের সাথে কথা বলে জানা যায়, ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। আশানুরূপ দাম পাওয়ার পাশাপাশি ভুট্টা বিক্রয়ের ক্ষেত্রে কোন ধরনের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে না কৃষককে। খুচরা ও পাইকারি ক্রেতা এবং বিভিন্ন কোম্পানি সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ভুট্টা ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছে।
গবাদি পশুর উন্নত মানের খাবার হিসেবে ব্যবহার করায় দিন দিন এর চাহিদা বেড়েই চলেছে। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের কৃষকরা বলেন, এক সময় এই এলাকার গমের চাষাবাদ ছিল চোখে পড়ার মতো। বর্তমানে গো-খাদ্য, মাছের খাবার ও মুরগির খাবার হিসেবে ভুট্টার ব্যাপক চাহিদা বেড়ে গেছে।

ঘোড়াঘাটের করতোয়া নদীর বুক চিরে জেগে ওঠা ধু-ধু বালুচরসহ বিভিন্ন এলাকায় ভুট্টা চাষের বিপ্লব ঘটিয়েছে কৃষকরা। ভুট্টা চাষে বদলে গেছে এ সব এলাকার মানুষের জীবন চিত্র। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর বেশি জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে। এ সব জমির বেশিরভাগ অংশেই চাষ হচ্ছে ভুট্টা। উপজেলার ভুট্টা চাষ শুরু হয় রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের সহযোগিতায় ২০০১ সালের দিকে। মাত্র ১০০০ হেক্টর জমি দিয়ে ভুট্টা চাষ শুরু হয়। বর্তমানে ধীরে ধীরে উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে ভুট্টা চাষ বাড়তে থাকে। অন্যতম রবিশস্য ভুট্টা, যা সম্প্রতি এ অঞ্চলের ব্র্যান্ডিং পণ্য বলে খ্যাত। সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বুলারকীপুর থেকে ঘোড়াঘাট পর্যন্ত মাইলের পর মাইল বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ভুট্টা আবাদ করা হয়েছে।

নদীর দুই তীরে এক সময় দেখা যেত শুধুই রাশি রাশি বালু। নদীতে ভিটে-বাড়িসহ ফসলি জমি হারানো মানুষের দুঃখ কষ্ট ছিল নিত্য দিনের সঙ্গী। অন্যান্য ফসলের তুলনায় লাভজনক হওয়ায়, ঘোড়াঘাটের সর্বত্র এখন চাষ হচ্ছে এই ভুট্টা। ভুট্টা চাষের মাধ্যমে পাল্টে যাচ্ছে এ উপজেলার মানুষের জীবনযাত্রা। তবে, কৃষকদের দাবি, এখানে সরকারিভাবে ভুট্টা ক্রয় কেন্দ্র চালু করা হলে, তারা পাবেন ন্যায্যমূল্য।

উপজেলার ভর্নাপাড়া এলাকার মাসুদ বলেন, ভুট্টা চাষের মাধ্যমে আমাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে এটা সত্য। কিন্তু আমরা ন্যায্য দাম পাই না।তাছাড়া এবার সার ও বীজের দাম অনেক বেশি। ফলে আমাদের উৎপাদন খরচও বেড়ে গেছে।
উপজেলার সিংড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান প্রভাষক মোঃ সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ভুট্টা চাষের মাধ্যমে পাল্টে যাচ্ছে করতোয়া তীরবর্তী চরাঞ্চলসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ হচ্ছে। এলাকার মানুষ ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসলের চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছে। ভাগ্যেরে চাকা ঘুরিয়েছে আবাদ করে।এ উপজেলার মানুষের জীবনযাত্রা অনেক উন্নত হয়েছে। তবে সরকারিভাবে ভুট্টাকেন্দ্রিক শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলে এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটবে।

ঘোড়াঘাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ রফিকুজ্জামান বলেন, এ উপজেলার উপজেলায় ১ হাজার ৯২৫হেক্টর জমিতে ভুট্টার চাষ হয়েছে। হেক্টর প্রতি ফলন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১২ মেট্রিক টন। এ হিসেবে ২৩ হাজার মেঃ টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ভুট্টা চাষের মাধ্যমে কৃষকরা কৃষিতে বিপ্লব ঘটানোর চেষ্টা করছে। আমরা তাদেরকে সব সময় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।

Facebook Comments Box
spot_img
এ বিভাগের আরও খবর
- Advertisment -spot_img

সর্বাধিক পঠিত খবর