মোঃ রুকুনুজ্জামান, পার্বতীপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধিঃ
দিনাজপুরের পার্বতীপুরের মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনি প্রকল্প ঘিরে রেলপথে পাথর পরিবহনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ রেলওয়ের ৭১৩ কোটি ১৬ লাখ টাকার বিশাল প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও তা আজ কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে। পাথর পরিমাপক স্কেল নষ্ট হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন জটিলতা ও অবহেলার কারণে থেমে গেছে পরিবহন কার্যক্রম, রেলপথ পরিণত হয়েছে পরিত্যক্ত ভূখণ্ডে।
সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালের দিকে ভবানীপুর থেকে মধ্যপাড়া খনি পর্যন্ত ৩৯ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণের উদ্যোগ নেয় রেল কর্তৃপক্ষ। ২০০৫ সালে এই রেলপথ খনি কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ২০০৯ সালে সর্বশেষ মধ্যপাড়া থেকে রাজশাহী ও চট্টগ্রামে ৫৭ হাজার টন পাথর পরিবহন করা হলেও এরপর থেকে কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
অথচ রেলপথে পাথর পরিবহনের খরচ যেখানে প্রতি টন ৬০০ টাকা, সেখানে সড়কপথে তা ১,১০০ থেকে ১,৩০০ টাকা। কম খরচ ও অধিক সক্ষমতার পরও রেলপথ ব্যবহারে অনীহা এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার না করায় প্রতি বছর সরকারের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, দীর্ঘদিন রেলপথ ব্যবহৃত না হওয়ায় লাইনচ্যুত ফিশপ্লেট, চুরি হওয়া রেলসামগ্রী এবং দখল হওয়া জমি—সব মিলিয়ে এক হতাশাজনক চিত্র। অনেক জায়গায় রেলভূমিতে বসবাস শুরু করেছে ভূমিহীন পরিবার, দখল হয়েছে জমি ও গাছপালা। ফলে রেলপথের অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
রেলপথ রক্ষণাবেক্ষণে নিয়োজিত কর্মকর্তারা জানান, লোকবল সংকট, বারবার চাহিদাপত্র পাঠানো হলেও কোনো সাড়া মেলেনি। পশ্চিমাঞ্চল রেলের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার বলেন, “পাথর ও কয়লা পরিবহন সচল থাকলে রেলপথের এমন অবস্থা হতো না। আমরা লোকবল নিয়োগে কাজ করছি।”
অপরদিকে খনি কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ ডি এম ফরিদুজ্জামানের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কর্মকর্তার ভাষ্য, খনির সীমানায় রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব খনি কর্তৃপক্ষের, আর বাইরে রেলের—তবে কোন পক্ষের অবহেলায় এত বড় ক্ষতি হলো, সে দায় কেউই নিচ্ছে না।
বিশ্লেষকদের মতে, সঠিক পরিকল্পনা ও সমন্বয়ের অভাবে বিপুল বিনিয়োগে গড়ে তোলা রেলপথ এখন ব্যবহৃত না হয়ে পড়ে রয়েছে। নতুন করে ব্যবহারের উপযোগী করতে আবারও বিপুল ব্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে।