Wednesday, July 16, 2025
Homeগাইবান্ধাথামছে না তিস্তার ভাঙন, বিলীন হচ্ছে বসতবাড়ি ফসলি জমি

থামছে না তিস্তার ভাঙন, বিলীন হচ্ছে বসতবাড়ি ফসলি জমি

- Advertisement -

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

আনোয়ার হোসেন, গাইবান্ধা প্রতিনিধিঃ
বৃষ্টি ও উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। জিও ব্যাগ-জিও টিউব এবং ব্লক ফেলে ঠেকানো যাচ্ছে না ভাঙন। অব্যাহত ভাঙনে গত ৩৬ ঘন্টার ব্যবধানে ১০টি পরিবারের বসতবাড়ি ও শতাধিক একর ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলিন হয়েছে। ভাঙনের মুখে পড়েছে আরোও ২০০ একর ফসলি জমি শতাধিক পরিবারের বসতবাড়ি।

গত এক সপ্তাহ ধরে উপজেলার কাপাশিয়া, হরিপুর, শ্রীপুর ও চন্ডিপুর ইউনিয়নে বিভিন্ন চরে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনের মুখে পরিবারগুলো তাদের ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছে। তিস্তায় পানি বেড়ে যাওয়ায় চরাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। নৌকা ছাড়া এক চর হতে অন্য চরে যাওয়া আসা করা সম্ভব হচ্ছে না। বিশেষ করে উপজেলার কাপাসিয়া ইউনিয়নের লালচামার গ্রামে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর, বেলকা হরিপুর, চন্ডিপুর, শ্রীপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা নদী। প্রতিবছর তিস্তায় পানি বাড়ার সাথে সাথে শুরু হয় নদী ভাঙন। চলতে থাকে বছর ব্যাপী। নদী পাড়ের মানুষের দাবি, স্বাধীনতা পরবর্তী দীর্ঘ দিনেও স্থায়ী ভাবে নদী ভাঙন রোধ, ড্রেজিং, নদী খনন, ও সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহন করেনি সরকার। যার কারনে প্রতি বছর পাঁচ শতাধিক বসতবাড়ি, হাজারও একর ফসলি জমি বিলিন হচ্ছে নদীগর্ভে। সরকার কোটি টাকা খরচ করে ব্লক, জিও ব্যাগ এবং জিও টিউব ফেলেও ভাঙন ঠেকাতে পারছে না।

কাপাসিয়া ইউনিয়নের ভাটি কাপাশিয়া গ্রামের রফিকুল ইসলাম জানান, হঠাৎ করে তিস্তার পানি বাড়তে থাকায় নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে তার বসতবাড়িসহ এক বিঘা জমির তোষাপাটসহ নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। ভাঙনের মুখে আরও শতাধিক বিঘা ফসলি জমি। তিনি আর বলেন, নদীতে পানি বাড়লে এবং বন্যা আসলে তিস্তার চরাঞ্চলের মানুষের কষ্টের সীমা থাকে না। অথচ দেখার কেউ নাই। সামান্য ত্রান বিতরণ করে দায় এড়িয়ে যান সকলে।

হরিপুর লখিয়ার পাড়া গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক মিয়া বলেন, প্রতিবছর নদীর ভাঙনে বসতবাড়ি, আবাদী জমি বিলিন হচ্ছে নদীগর্ভে। একজন চরবাসিকে মৌসুমে কমপক্ষে ৪ বার ঘরবাড়ি সরাতে হচ্ছে। কিন্তু আজও স্থায়ীভাবে নদী ভাঙন রোধের কোন ব্যবস্থা হচ্ছে না।

কাপাসিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মঞ্জু মিয়া বলেন, গত ৩৬ ঘন্টার ব্যাবধানে তার ইউনিয়নের উত্তর লালচামার গ্রামে তিস্তার তীব্র ভাঙনে ১০ পরিবারের বসতবাড়ি ও শতাধিক একর ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। ভাঙনের মুখে শতাধিক পরিবার তাদের বসতবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছে। এখন পর্যন্ত সরকারি ভাবে কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।

হরিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মোজাহারুল ইসলামের দাবি নদী খনন, ড্রেজিং, স্থায়ীভাবে ভাঙন রোধ কল্পে বহুবার চাহিদা প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু আজও কোন ব্যবস্থা সরকারের পক্ষ হতে নেয়া হয়নি। শুধুমাত্র ভাঙন রোধে প্রাথমিক ভাবে জিও ব্যাগ ও জিও টিউব ফেলা হচ্ছে। স্থায়ী ভাবে ভাঙন ঠেকানো না হলে চরবাসির দুঃখ কোন দিনও দুর হবে না। ভাঙ্গনে প্রতিবছর পাঁচ শতাধিক বসতবাড়ি এবং হাজারও একর ফসলি জমি বিলিন হচ্ছে নদীগর্ভে।

উপজেলা কৃষি অফিসার মো. রাশিদুল কবির জানান, কাপাসিয়া ও হরিপুর ইউনিয়নের কয়েকটি চরে তিস্তার ভাঙনে তোষাপাটসহ অন্যান্য ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলিন হচ্ছে। এতে করে কৃষকদের ক্ষতি হচ্ছে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মশিযার রহমান বলেন, কাপাসিয়া ইউনিয়নের নদী ভাঙনের বিষয়টি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে জেনেছি। এছাড়া তিস্তার পানি বেড়ে যাওয়ায় কিছু কিছু চরে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে খোঁজ খবর রাখতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে ত্রান সরবরাহ করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাজ কুমার বিশ্বাস বলেন, ভাঙন ঠেকানোর জন্য উপজেলা প্রশাসনে করনীয় কিছু নেই। প্রশাসনের পক্ষ হতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহায়তা নেয়া হয়। কাপাসিয়া ইউনিয়নে নদী ভাঙনে কয়েকটি পরিবারের বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবগত করা হয়েছে।

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবার্হী প্রকৌশলী হাফিজুল হক বলেন, ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ও জিও টিউব ফেলা হচ্ছে। তবে স্থায়ী ভাবে ভাঙন রোধ সরকারের উপর মহলের সিদ্ধান্তের ব্যাপার।

Facebook Comments Box
spot_img
এ বিভাগের আরও খবর
- Advertisment -spot_img

সর্বাধিক পঠিত খবর