ইকবাল বাহার, পঞ্চগড় প্রতিনিধঃ
কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উপলক্ষ্যে দেশের উত্তরাঞ্চলে এক হাজার শয্যার একটি হাসপাতাল উপহার দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন চীন সরকার। এই হাসপাতালটি সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে স্থাপনের দাবি জেলাবাসীর। সেই দাবিকে জোরালো করতে এবার প্রধান উপদেষ্টা বরাবর আবেদন করেছেন ব্যারিস্টার মুহম্মদ জমির উদ্দিন সরকার। জন্মভূমির উন্নয়নে এই দায়িত্বশীল ভূমিকা দেখিয়ে নিজ জেলা পঞ্চগড়ে প্রশংসায় ভাসছেন ৯৩ বছর বয়সি এই রাজনীতিক।
সর্ব উত্তরের জনপদ পঞ্চগড়ের উল্লেখযোগ্য উন্নয়নে জড়িয়ে আছে ব্যারিস্টার মুহম্মদ জমির উদ্দিন সরকারের নাম। দীর্ঘদিন রাজনৈতিক প্রতিকূলতায় ক্ষমতার বাইরে থাকলেও এই ব্যক্তির নাম মানুষের মুখে মুখে। তিনিও জন্মভূমির মানুষের আবেগকে প্রাধান্য দিয়ে আসছেন। এর প্রমাণ দিলেন জেলার সাধারণদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টার কাছে লেখা আবেদনের মাধ্যমে।
ব্যারিস্টার মুহম্মদ জমির উদ্দিন সরকার বাংলাদেশের সাবেক স্পিকার এবং সাবেক ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি। তিনি ১৯৩১ সালের ১ ডিসেম্বর পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর ইউনিয়নের নয়াবাড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মৌলভী মোহাম্মদ আজিজ বক্স।
গত ২৯ এপ্রিল ব্যারিস্টার মুহম্মদ জমির উদ্দিন সরকার চীন সরকারের উপহারের হাসপাতালটি পঞ্চগড়ে স্থাপনের দাবি জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর আবেদনটি করেন। সেই আবেদনের অনুলিপি সম্প্রতি ব্যাপক ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে।
আবেদনে তিনি লিখেছেন- ‘জনাব, আসসালামু আলাইকুম, বিনীত নিবেদন এই যে, রংপুর ও সৈয়দপুর বিমান বন্দরের আশেপাশে চীন সরকার কর্তৃক অর্থায়নে একটি ১০০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল নির্মাণ করা হবে মর্মে আপনার দপ্তর থেকে একটি পত্র প্রেরণ করেছেন, সে আলোকে উক্ত চীন সরকার অর্থায়নে নির্মিত হাসপাতালটি পঞ্চগড়ে স্থাপনের অত্যন্ত প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। রংপুরে একটি উন্নত মানের মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল রয়েছে, দিনাজপুরেও একটি ভালো মানের মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল রয়েছে, নীলফামারীতেও একটি সরকারি মেডিকেল কলেজ আছে। পঞ্চগড় এবং ঠাকুরগাঁও-এ এখন পর্যন্ত কোন কোন মানেরই সরকারি বা বেসরকারি মেডিকেল কলেজ নেই। প্রান্তিক জেলা পঞ্চগড় রংপুর এবং দিনাজপুর হতে সবচেয়ে দূরের জেলা। এ জেলায় উন্নত কোন চিকিৎসা ব্যবস্থা না থাকায় এখানকার সহজ সরল মানুষগুলো সুচিকিৎসার অভাবে দীর্ঘদিন ধরে ভোগান্তিতে আছেন। চীন সরকার কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উপলক্ষ্যে ১০০০ শয্যা বিশিষ্ট ১টি হাসপাতাল উপহার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এই হাসপাতালটি পঞ্চগড়ে স্থাপন করা হলে পঞ্চগড় এবং ঠাকুরগাঁও জেলার মানুষ যেমন উপকৃত হবে তেমনি ভাবে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত এবং নেপাল থেকেও প্রচুর মানুষ চিকিৎসা সেবা নেওয়ার জন্য বাংলাদেশে আসবেন। ফলে প্রান্তিক জেলা দুটির মানুষের দীর্ঘদিনের কষ্ট যেমন লাঘব হবে তেমনিভাবে বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের এটি কাঙ্ক্ষিত সুযোগ তৈরি হবে। অতএব জনাবের নিকট আবেদন উপরোক্ত বিষয়ে বিবেচনা পূর্বক পঞ্চগড় জেলায় চীন সরকারের সহায়তায় হাসপাতাল স্থাপনে জনাবের সু-দৃষ্টি কামনা করছি।’
এদিকে, আবেদনের অনুলিপির ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে এই প্রবীণ রাজনীতিককে ধন্যবাদ জানিয়েছেন জেলার বিভিন্ন স্তরের মানুষ। এই বয়সে এসেও নিজ জেলার প্রতি তার দায়বদ্ধতাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন তারা। এক হাজার শয্যার হাসপাতালটি পঞ্চগড়ে স্থাপনের ব্যাপারেও এখন অধিক আশাবাদী এখানকার সাধারণ মানুষ।
৮নং ধাক্কামারা ইউনিয়ন বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক মানিকুল ইসলাম মানিক আবেদনের কপির সঙ্গে জমির উদ্দীন সরকারের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে লিখেছেন, ‘আমাদের পঞ্চগড়ের অভিভাবক, পঞ্চগড়ের বটবৃক্ষ ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার স্যার। জীবন সায়াহ্নে তিনি আমাদের জন্য লড়ে যাচ্ছেন।’
সোয়েব আলী সবুজ লিখেছেন, পঞ্চগড়ের বটবৃক্ষ আমাদের সকলের প্রিয় লিডার ব্যারিস্টার মুহম্মদ জমির উদ্দিন সরকার মহোদয়কে অনেক ধন্যবাদ।
জেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক জুয়েল রানা লিখেছেন, চীন বাংলাদেশ মৈত্রী (চীন সরকারের সহায়তায়) হাসপাতাল পঞ্চগড়ে স্থাপন প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারক লিপি প্রদান করেন পঞ্চগড়ের অহংকার ব্যারিস্টার মুহম্মদ জমিরউদ্দিন সরকার স্যার।
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাড. আদম সুফি বলেন, ব্যারিস্টার মুহম্মদ জমির উদ্দিন সরকার হলেন পঞ্চগড়ের উন্নয়নের রূপকার। নিজের জেলাকে নিয়ে সবসময় স্বপ্ন দেখেন। দীর্ঘ সময় ক্ষমতার বাইরে থাকায় সব স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারেননি তিনি। তবে পঞ্চগড়কে নিয়ে এবং এখানকার মানুষদের নিয়ে তিনি এখনও ভাবেন, তার প্রমাণ তিনি দিয়েছেন। আমরা আশাকরছি প্রবীণ এই রাজনীতিকের আবেদন আমলে নিয়ে সরকার এই জেলায় এক হাজার শয্যার হাসপাতালটি স্থাপনের উদ্যোগ নিবেন।
উল্লেখ্য, ব্যারিস্টার মুহম্মদ জমির উদ্দিন সরকার বর্তমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য পদে রয়েছেন। তিনি একাধিকবার পঞ্চগড়-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এছাড়া বিভিন্ন সময় দিনাজপুর-১, ঢাকা-৯ এবং বগুড়া-৬ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ সরকারের গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, ভূমি প্রতিমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী এবং আইন মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন।