Home নীলফামারী নীলফামারীতে দেশি-বিদেশি আমে রঙিন রুমার স্বপ্নবাগান

নীলফামারীতে দেশি-বিদেশি আমে রঙিন রুমার স্বপ্নবাগান

নীলফামারীতে দেশি-বিদেশি আমে রঙিন রুমার স্বপ্নবাগান

মো. নাঈম শাহ্, নীলফামারী প্রতিনিধিঃ
রুমা অধিকারীর শৈল্পিক শখ এখন পরিণত হয়েছে এক সম্ভাবনাময় কৃষি উদ্যোগে। স্বামী পুলিশের চাকরির সুবাদে তিনি দীর্ঘদিন ছিলেন রংপুরে। সেখানে বসবাসকালে ইউটিউবে বড় বড় বিদেশি আমের ভিডিও দেখে তার মনে জাগে আম চাষের আগ্রহ। শখ থেকেই শুরু। ২০২৩ সালের শেষের দিকে রংপুর থেকে ফিরে স্বামীর বাড়ি, নীলফামারী সদর উপজেলার কুন্দপুকুর ইউনিয়নের উত্তর বালাপাড়ায় এক একর জমিতে শুরু করেন নানা জাতের আমের চাষ।

রোপণকৃত ৩০০টি আমগাছের মধ্যে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন দেশের জনপ্রিয় দশটি ভিন্ন ভিন্ন জাতের আম। এর মধ্যে রয়েছে জাপানের কিং অফ চাকাপাত, চীনের চ্যাং মাই, ডকমাই, ব্যানানা আম এবং আমেরিকার রেড পালমার, হানি ডিউসহ আরও নানা জাতের উন্নত মানের আম।

এই আমগাছগুলোতে মার্চ মাসে মুকুল আসে এবং জুলাই-আগষ্ট মাসে পরিপক্ব হয়। লেট ভ্যারাইটির হওয়ায় এসব আম তুলনামূলক দেরিতে পাকে, ফলে দেশীয় আমের মৌসুম শেষে বাজারে এই আমের চাহিদা থাকে তুঙ্গে। বাজারে দেশীয় আমের সরবরাহ যখন কমে যায়, তখন রুমার বাগানের আমই হয় বিকল্প উৎস। এতে যেমন চাষিরা লাভবান হন, তেমনি বাজারেও মেলে উন্নত জাতের আম।

আজ তার সেই আমবাগান যেন রঙিন এক আমের স্বর্গরাজ্য। যেদিকেই চোখ যায়, সেদিকেই নানা আকৃতি, রং ও স্বাদের আম। রুমা অধিকারী নিজেই পরম যেতœ গাছগুলো পরিচর্যা করেন। স্বামী দুলাল অধিকারী ছুটিতে বাড়ি এলে তিনিও সহায়তা করেন এই কর্মযজ্ঞে। শুরুটা ছিল স্বল্প পুঁজি নিয়ে, কিন্তু রুমা অধিকারীর স্বপ্ন অনেক বড়।

জানতে চাইলে রুমা অধিকারী বলেন,“প্রথমে তো এটা ছিল শুধুই একটা শখ, কিন্তু এখন এটা আমার স্বপ্ন। আমি চাই, দেশের মানুষের কাছে ভিন্ন জাতের উন্নতমানের আম পৌঁছাক, যেন আম আমরাও বিশ্বমানের ফল চাষে পিছিয়ে না থাকি। নিজের হাতে গাছ লাগানো, পরিচর্যা করা, আর একেক সময় ফল আসতে দেখা—এই আনন্দ ভাষায় বোঝানো যায় না। আমি বিশ্বাস করি, নারী হয়েও সফল কৃষি উদ্যোগ গড়ে তোলা সম্ভব।”

তিনি আরও বলেন,“এখন আমার স্বপ্ন হলো, এই আমবাগানকে আরও বড় করে তোলা, যাতে এলাকার আরও মানুষ কাজের সুযোগ পায়। সরকার যদি সুদমুক্ত ঋণ দেয়, তাহলে আমি এই উদ্যোগকে বাণিজ্যিকভাবে আরও শক্ত অবস্থানে নিতে পারব।”
রুমা অধিকারীর স্বামী দুলাল অধিকারী বলেন,“ আমি যখনই ছুটি পাই তখনই বাসায় আসি। এখানে এসে আমার স্ত্রীকে আম বাগানের পরিচর্যায় সহযোগিতা করি।”

স্থানীয় উত্তম রায় নামে এক যুবক বলেন, “রুমা বৌদি যে পরিশ্রম করে তার আম বাগান সাজিয়েছে, তা আমরা যুবকরাই পাবো কি না সন্দেহ। তার আম চাষ দেখে আমাদেরও আম চাষের অনুপ্রেরণা যুগছে।”
শওকত ইসলাম নামে আরেক যুবক বলেন,“মানুষের শুনেছিলাম এখানে বিভিন্ন ধরনের আম গাছ আছে। তাই আমগুলো দেখতে এবং খেতে এসেছিলাম। আমগুলো খেতে অনেক সুস্বাদু।”

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আতিক আহমেদ বলেন,“ আম চাষে রুমা অধিকারীকে শুরু থেকে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তার সফলতা শুধু একটি ব্যক্তিগত গল্প নয়, বরং এটি একটি উদাহরণ। যা দেখিয়ে দেয় পরিকল্পনা, শ্রম ও অদম্য ইচ্ছাশক্তি থাকলে কৃষিতেও গড়ে তোলা সম্ভব টেকসই ভবিষ্যৎ। যদি এমনভাবে তরুণ-তরুণীরা কৃষি খাতে এগিয়ে আসে, তবে তা দেশের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী ও সম্ভাবনাময় করে তুলবে।”

Facebook Comments Box

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here