মো:আব্দুল্লাহ আল মামুন, ডোমার (নীলফামারী) প্রতিনিধিঃ
নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার বুড়ি তিস্তা নদীকে বালুমহাল ঘোষণা করে বালু উত্তোলনের অনুমতি দেওয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে নদী তীরবর্তী এলাকার ভূ-প্রকৃতি, জীববৈচিত্র্য ও কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত নদী রক্ষা বাঁধ। নদী থেকে বালু পরিবহনের কারণে পাউবোর (পানি উন্নয়ন বোর্ড) নির্মিত গুরুত্বপূর্ণ বাঁধ ভারী ট্রাকের চাপে দেবে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এতে বর্ষা মৌসুমকে সামনে রেখে এলাকায় নতুন করে প্লাবনের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জলঢাকার গোলমুন্ডা ইউনিয়নের পাড়ঘাট এলাকায় বুড়ি তিস্তা নদীর দুই পাড়ে ড্রেজার মেশিন ও ভারী শ্যালো মেশিন দিয়ে প্রতিনিয়ত লক্ষ লক্ষ ঘনফুট বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এসব বালু প্রতিদিন ৫০০-র বেশি ড্রাম ট্রাকে করে নদীর দুই তীর ঘেঁষা বাঁধের উপর দিয়ে পরিবহণ করা হচ্ছে। প্রতিটি ট্রাকের বালু বিক্রি হচ্ছে গড়ে ৩ হাজার টাকায়। ফলে বাঁধের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে এর অবকাঠামো ধসে পড়ছে। স্থানীয়দের দাবি, পরিবহণ কার্যক্রম থেকে চাঁদার নামে মোটা অঙ্কের অর্থ যাচ্ছে একটি প্রভাবশালী চক্রের পকেটে।
বাঁধের পাশের বাসিন্দা আলিম উদ্দিন বলেন, “বাঁধটা বানানো হয়েছিল আমাদের ঘরবাড়ি রক্ষার জন্য। কিন্তু এখন দেখছি এই বাঁধই ভেঙে আমাদের ডুবাবে।”
একই এলাকার গৃহবধূ শিরিনা বেগম জানান, “দিনরাত ট্রাক চলে। অনেকবার বলেছি, কেউ শোনেনি। এখন বিপদে পড়েছি আমরা।”
বালু উত্তোলনকারীরা দাবি করছে, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে নিলামের মাধ্যমে তারা অনুমতি পেয়েছে। তবে এ বিষয়ে তারা কোনো লিখিত কাগজ দেখাতে পারেনি।
এ ব্যাপারে নীলফামারী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আতিকুল ইসলাম বলেন,
“এই বাঁধ মূলত বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য নির্মিত। এখানে কোনো যানবাহন চলাচলের অনুমোদন ছিল না। কে বা কারা এটি ব্যবহার করেছে, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জ্যোতি বিকাশ সাংবাদিকদের জানান,
“বাঁধটি আমরা পরিদর্শন করেছি। দ্রুত মেরামতের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সচেতন নাগরিকরা বলছেন, এ ঘটনা শুধু পরিবেশগত বা অবকাঠামোগত সংকট নয়, বরং এটি প্রশাসনিক গাফিলতি ও স্বার্থান্বেষী মহলের দাপটের এক ভয়াবহ উদাহরণ। সময়মতো ব্যবস্থা না নিলে বর্ষায় চরম মাশুল গুনতে হবে এলাকাবাসীকে।