Monday, July 14, 2025
Homeপঞ্চগড়পঞ্চগড়ে আষাঢ় শেষেও কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টির দেখা নেই, সেচ ব্যবস্থায় চলছে আমন রোপণ

পঞ্চগড়ে আষাঢ় শেষেও কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টির দেখা নেই, সেচ ব্যবস্থায় চলছে আমন রোপণ

- Advertisement -

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

ইকবাল বাহার, পঞ্চগড় প্রতিনিধি:
পঞ্চগড়ে আষাঢ় মাসের শেষ প্রান্তে এসেও দেখা মেলেনি কাঙ্ক্ষিত বর্ষণের। মাঝে মাঝে আকাশে মেঘ জমলেও সেভাবে বৃষ্টি না হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন জেলার হাজারো কৃষক। চাষাবাদের সবচেয়ে ব্যস্ত এই মৌসুমে বাধ্য হয়েই সেচ নির্ভর হয়ে পড়েছে আমন ধান রোপণ। এতে কৃষকদের উৎপাদন ব্যয় যেমন বেড়েছে কয়েকগুণ, তেমনি চরম শ্রমিক সংকটেও পড়তে হচ্ছে তাদের।

পঞ্চগড় সদর উপজেলার গড়িনাবাড়ি ইউনিয়নের ভাউলাপাড়া এলাকা ঘুরে দেখা যায়—জমিতে প্রচণ্ড রোদের তাপদাহের মধ্যেই সেচ দিয়ে চলছে আমন রোপণের প্রস্তুতি। জমি শুকিয়ে ফেটে চৌচির হয়ে থাকায় প্রাকৃতিক বৃষ্টির বদলে সেচের ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছে চাষিদের।

স্থানীয় সেচ মেশিনচালক দোলাল হোসেন জানান, “প্রতি ঘণ্টায় ৩০০ টাকায় সেচ দিচ্ছি। এক বিঘা জমি সেচে লাগে প্রায় তিন ঘণ্টা। কিন্তু এত কৃষকের চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না সময় সংকটে।”

চাষি আরিফ হোসেন জানান, “৩ বিঘা জমির বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে অনাবৃষ্টি আর রোদে। বাধ্য হয়ে সেচ দিয়েই চারা রোপণ করছি। প্রতি বিঘায় দেড় থেকে দুই হাজার টাকা বেশি খরচ হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে ধান চাষে লাভ তো দূরের কথা, পুঁজি ফেরত আসবে কিনা তাও অনিশ্চিত।”

একই অভিযোগ আরেক কৃষক পশির উদ্দিনেরও। তিনি বলেন, “আগে বর্ষার মৌসুমে জমি নরম থাকত, রোপণ সহজ হতো। এখন রোদে মাটি শক্ত, সেচ দিতে হচ্ছে, কাজ করাও কঠিন। রোদের মধ্যে অনেক শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়ছে।”

শ্রমিক আমিরুল ইসলাম জানান, “আগে বিঘা প্রতি ১২-১৫শ টাকায় কাজ করতাম। এখন ২ হাজারেও ঠিক মতো চলছে না। প্রচণ্ড রোদে ঘেমে একেবারে নাজেহাল অবস্থা। আকাশে মেঘ দেখলেই মনে হয় বৃষ্টি হবে—কিন্তু হয় না।”

পঞ্চগড় সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আসাদুন্নবী জানান, “চলতি মৌসুমে সদর উপজেলায় ২৩ হাজার ৯৫৫ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। তবে বৃষ্টির ঘাটতির কারণে আমন রোপণ এখন পুরোপুরি সেচনির্ভর হয়ে পড়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “এখন পর্যন্ত মাত্র ২৭ হেক্টর জমিতে আমন রোপণ হয়েছে। যাদের চারার বয়স ৩০ দিন অতিক্রম করেছে, তাদেরকে সেচের মাধ্যমে দ্রুত রোপণের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি সচেতনতামূলক কার্যক্রমও চলছে।”

বৃষ্টির এমন অনিয়মিত আচরণ ও খরার প্রভাবে জেলার কৃষিতে যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে, তা কেবল উৎপাদন নয়—সমগ্র কৃষিভিত্তিক জীবনযাত্রাতেই বিরূপ প্রভাব ফেলছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

 

Facebook Comments Box
spot_img
এ বিভাগের আরও খবর
- Advertisment -spot_img

সর্বাধিক পঠিত খবর