Thursday, July 31, 2025
Homeপঞ্চগড়পঞ্চগড়ে কোটি টাকার চা কারখানা নিয়ে টানাপোড়েন, দুই পরিচালক বঞ্চিত

পঞ্চগড়ে কোটি টাকার চা কারখানা নিয়ে টানাপোড়েন, দুই পরিচালক বঞ্চিত

- Advertisement -

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

ইকবাল বাহার, পঞ্চগড় প্রতিনিধিঃ

পঞ্চগড় সদর উপজেলার কেচেরাপাড়া এলাকায় স্থাপিত কোটি টাকার ‘উত্তরা গ্রীন টি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড’ চা কারখানাকে কেন্দ্র করে মালিকানা জটিলতা চরমে পৌঁছেছে। কারখানাটির দুই পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক ও তারিকুল ইসলাম অভিযোগ করেছেন, একটি মহল তাদের জোরপূর্বক সরিয়ে দিয়ে পুরো কারখানার নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেছে।

এই ঘটনায় তাঁরা লিখিত অভিযোগ করেছেন জেলা প্রশাসন, বাংলাদেশ চা বোর্ডসহ একাধিক দপ্তরে। অভিযোগকারীরা জানান, তাদেরকে না জানিয়ে কারখানাটি অন্যদের কাছে লিজ দেওয়া হয়েছে। আর জোরপূর্বক চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করিয়ে মালিকানা হস্তান্তরের নামে প্রতারণা করা হয়েছে।

স্থানীয়দের শঙ্কা, মালিকানা বিরোধের কারণে দীর্ঘদিন চা উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ থাকলে শতাধিক শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়বেন।

২০১৮ সালে তৎকালীন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী বোরহান উদ্দিনের উদ্যোগে কেচেরাপাড়ায় ৭ বিঘা জমির উপর কারখানাটি স্থাপিত হয়। সরকারি কর্মকর্তা হওয়ায় তিনি নিজ নামে নয়, বরং তার আস্থাভাজন কাজী এ এন এম আমিনুল হকের নামে জয়েন্ট স্টক কোম্পানিতে কারখানাটি ৬৫% শেয়ারসহ নিবন্ধন করান। বাকি শেয়ার ৩০% ছিল আব্দুর রাজ্জাক এবং ৫% তারিকুল ইসলামের নামে।

পরবর্তীতে কাজী আমিনুল হক তার মালিকানার কিছু অংশ হস্তান্তর করেন স্ত্রী আইরিন পারভিন (১০%), ছেলে শায়মান সাদিক (৩৫%) এবং ভায়রা শাহ আলমের (১০%) নামে। কাজী আমিনুল হকের মৃত্যুর পর বাকি ১৫% শেয়ারের মালিকানা অনির্ধারিত থাকে।

পরবর্তীতে আব্দুর রাজ্জাক ও তারিকুল ইসলাম পুনঃবণ্টনের মাধ্যমে যথাক্রমে ২০% ও ১০% শেয়ারের মালিক হন। এরপর ঢাকার রূপালী ব্যাংক, দিলকুশা শাখা থেকে মর্টগেজের মাধ্যমে ২৬ কোটি ৭৪ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে কারখানাটি চালু করা হয়। প্রতিদিন ২০-৩০ হাজার কেজি চা উৎপাদিত হতো।

অভিযোগকারীদের দাবি, কিছুদিন পর হিসাব-নিকাশে অস্পষ্টতার অভিযোগ তুলে কাজী বোরহান উদ্দিন, তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার সাদাত সম্রাটের ছত্রছায়ায়, দুই পরিচালককে কারখানা থেকে জোরপূর্বক বের করে দেন।

২০২২ সালের ২৪ মার্চ রাজনৈতিক চাপ ও হুমকির মুখে আব্দুর রাজ্জাক ও তারিকুল ইসলামকে ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকার বিনিময়ে শেয়ার হস্তান্তরের একটি চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা হয়। শর্ত ছিল তিন মাসের মধ্যে সম্পূর্ণ অর্থ পরিশোধ করা হবে। কিন্তু প্রায় তিন বছর কেটে গেলেও ৫০ লাখ টাকা দেওয়ার পর আর কোনো অর্থ দেওয়া হয়নি।

পরবর্তীতে বোরহান উদ্দিন ও তাঁর পরিবার স্থানীয় কিছু চা ব্যবসায়ীর কাছে কারখানাটি তিন বছরের জন্য লিজ দিয়ে দেন। অভিযোগকারীদের দাবি, জয়েন্ট স্টক রেজিস্ট্রেশনে তারা এখনও বৈধ পরিচালক, অথচ তাদেরকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখন তারা ব্যাংক ঋণের বোঝা বইছেন, অথচ কারখানায় প্রবেশেরও সুযোগ পাচ্ছেন না।

অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সুমন চন্দ্র দাশ বলেন, “আমরা অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তের জন্য বিষয়টি চা বোর্ডের পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয়কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।”

তবে পঞ্চগড় চা বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরিফ খান ছুটিতে থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

অন্যদিকে, সব অভিযোগ অস্বীকার করে কাজী বোরহান উদ্দিন বলেন, “তারা শেয়ার আমাদের কাছে হস্তান্তর করেছে। কোনো রাজনৈতিক নেতার শেল্টার নেওয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।”

Facebook Comments Box
spot_img
এ বিভাগের আরও খবর
- Advertisment -spot_img

সর্বাধিক পঠিত খবর