ইকবাল বাহার, পঞ্চগড় প্রতিনিধিঃ
পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় সরকার প্রদত্ত ভিডব্লিউবি (Vulnerable Women Benefit) কর্মসূচির আওতায় চাল বিতরণের সময় অর্থ লেনদেনের অভিযোগে ঝলই শালশিরি ইউনিয়ন পরিষদের ১১ ইউপি সদস্যকে আটক করেছে সেনাবাহিনী। সোমবার (২৬ মে) রাতে ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গণ থেকে আট পুরুষ ও তিন নারী সদস্যকে আটক করা হয়। আটককৃতদের কাছ থেকে আদায়কৃত ১ লাখ ১৩ হাজার ৯০০ টাকা জব্দ করা হয়েছে।
পরে তাদের বোদা থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারি সহায়তার অংশ হিসেবে ভিডব্লিউবি কার্ডধারী ২৫৮ জন নারী উপকারভোগীর মাঝে জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত প্রতিজনের জন্য ৩০ কেজি করে মোট ১৫০ কেজি চাল বিতরণ করা হচ্ছিল। অভিযোগ রয়েছে, এই চাল নিতে গেলে উপকারভোগীদের কাছ থেকে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়। বিষয়টি জানাজানি হলে ভুক্তভোগীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ শুরু করেন এবং অভিযুক্তদের অবরুদ্ধ করে রাখেন।
খবর পেয়ে বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহরিয়ার নজির, সহকারী কমিশনার (ভূমি) এসএম ফুয়াদ, সেনাবাহিনী এবং বোদা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মিললে সেনাবাহিনীর সদস্যরা অভিযুক্তদের আটক করেন।
আটককৃত ইউপি সদস্যরা হলেন:
খলিলুর রহমান (১ নম্বর ওয়ার্ড), হামিজ উদ্দিন (২), প্রিয় নাথ রায় (৩), সুনীল চন্দ্র রায় (৫), দাহির উদ্দিন (৬), খাদিমুল ইসলাম (৭), মামুন ইসলাম (৮), আশরাফুল ইসলাম (৯), শেফালী রাণী (১,২,৩ নম্বর সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ড), বিলকিস বেগম (৪,৫,৬), এবং রুপালী বেগম (৭,৮,৯)।
বিভিন্ন ভুক্তভোগীর অভিযোগে জানা যায়, টাকা না দিলে চাল দেওয়া হবে না বলে হুমকি দেওয়া হয়। স্থানীয় বাসিন্দা দুলাল রহমান জানান, “চাল না দিলে চাল দেবে না বলায় আমরা টাকা দিতে বাধ্য হয়েছি।” আরেকজন, হাসিবুল ইসলাম বলেন, “সরকার যেখানে বিনামূল্যে চাল দিচ্ছে, সেখানে জনপ্রতিনিধিরা টাকা নিচ্ছে—এটা চরম দুর্নীতি।”
একপর্যায়ে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য মামুন ইসলাম স্বীকার করেন, “চাল পরিবহনে খরচ হওয়ায় আমরা ৫০০ টাকা করে নিয়েছিলাম। যদিও আমরা পরে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছি। তবু আমাদের আটক করা হয়েছে।”
এ বিষয়ে বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহরিয়ার নজির বলেন, “স্থানীয়দের অভিযোগ এবং ঘটনাস্থলে পাওয়া আলামতের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।” বোদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজিম উদ্দিন জানান, তদন্ত ও আইনি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।