ইকবাল বাহার, পঞ্চগড় প্রতিনিধিঃ
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ কুদরত-ই-খুদা মিলনকে তার পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯-এর ৩৪(৫) ধারা অনুযায়ী জনস্বার্থে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
সরকারি সূত্রে জানা যায়, চেয়ারম্যান কুদরত-ই-খুদা মিলনের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ, জমি জবরদখল, সীমান্তবর্তী বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে শ্রমিক নিয়োগে অনিয়ম ও বাণিজ্য, ট্রাক প্রতি লোড-আনলোড কার্যক্রমে সিন্ডিকেট গঠন করে চাঁদা আদায়ের মতো একাধিক গুরুতর অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে ওঠে আসছিল। এছাড়াও তিনি ০৫ আগস্ট ২০২৪ তারিখ থেকে ইউনিয়ন পরিষদে নিয়মিত দায়িত্ব পালন না করে অনুপস্থিত থাকেন।
অভিযোগগুলো যাচাই-বাছাইয়ের জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রাথমিক তদন্ত করে অভিযোগসমূহের প্রমাণ পায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে চেয়ারম্যান মিলনকে সাময়িক বরখাস্ত করে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়।
তবে, দাখিলকৃত জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় এবং সরেজমিনে পুনঃতদন্তে অভিযোগগুলোর সত্যতা পুনরায় প্রমাণিত হওয়ায়, স্থানীয় সরকার বিভাগ চূড়ান্তভাবে তাকে তার পদ থেকে অপসারণের সিদ্ধান্ত নেয়।
২৬ মে ২০২৫ তারিখে জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯-এর ৩৪(৪) (খ) ও (ঘ) ধারার অধীন সংঘটিত অপরাধের কারণে তাকে ৩৪(৫) ধারায় অপসারণ করা হয় বলে সংশ্লিষ্ট আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে। একইসঙ্গে, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের পদটি শূন্য ঘোষণা করে প্রয়োজনীয় গেজেট বিজ্ঞপ্তি জারির জন্য তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাবান্ধা ইউনিয়ন পরিষদ বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত ইউনিয়ন, যেখানে স্থলবন্দর ও আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম কেন্দ্র করে বিশাল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান ও আর্থিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এ ধরনের এলাকায় জনপ্রতিনিধিদের জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে অভিমত বিশ্লেষকদের।
বাংলাবান্ধা ইউনিয়নে এই সিদ্ধান্তকে ঘিরে সাধারণ মানুষের মধ্যেও নানা প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। কেউ কেউ বলছেন, দীর্ঘদিনের দুর্নীতির অবসান শুরু হয়েছে, আবার কেউ মনে করছেন মিলনের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
একজন স্থানীয় শিক্ষক বলেন, “বছরের পর বছর ধরে অভিযোগ শুনেছি, এখন সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে দেখে কিছুটা আশাবাদী।”
অন্যদিকে মিলনের এক অনুসারী দাবি করেন, “এসবই ষড়যন্ত্র। মিলন ভাই এলাকার উন্নয়নে কাজ করেছেন, তার জনপ্রিয়তাই ঈর্ষার কারণ।”
এই বিষয়ে মিলন চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তার সাথে কোনো ভাবে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
প্রজ্ঞাপনটি রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে স্বাক্ষর করেন উপসচিব মো. নূর আলম। এতে আরও বলা হয়, এই আদেশ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং সংস্থাগুলোর অবগতির জন্য জারি করা হয়েছে এবং তা অবিলম্বে কার্যকর হবে।