রংপুর নিউজ ডেস্কঃ
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি সিন্ডিকেট সভার মাধ্যমে মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলেও উপাচার্য ড. শুচিতা শরমিনের অপসারণের এক দফা দাবি ঘোষণা করেছেন একদল শিক্ষার্থী।
রবিবার (০৪ মে) দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে উপাচার্যের বাসভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন উপাচার্য শুচিতা শরমিন। এরপর বেলা ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাউন্ডফ্লোরে উপাচার্যকে অপসারণের এক দফা দাবি ঘোষণা করেন শিক্ষার্থীরা।
সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্য বলেন, ‘সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামকে অপসারণ করা হয়েছে। সাত দিনের মধ্যে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নতুন রেজিস্ট্রার নিয়োগ দেওয়া হবে।’
শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে করা মামলা ও জিডি প্রসঙ্গে উপাচার্য বলেন, ‘আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীদের আচরণগত কারণে থানায় জিডি করা হয়েছিল। এর আগে উপাচার্যের বাসভবনের অফিস কক্ষে সিন্ডিকেট সভা চলাকালে ভবনের প্রধান গেট ভাঙচুর করা হয়েছিল। সেজন্য মামলা করা হয়। এর মধ্যে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী ভুল বুঝতে পেরে লিখিতভাবে মুচলেকা দিয়েছে। তারা সবাই মুচলেকা দিলে সিন্ডিকেট সভায় আলোচনা করে মামলা ও জিডি প্রত্যাহার করা হবে।’
সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিল থেকে ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মহসিন উদ্দীনকে অব্যাহতির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আগের সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মহসিন উদ্দীনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এরপর তিনি হাইকোর্টে রিট করেন। বিষয়টি হাইকোর্টে বিচারাধীন। এ কারণে এখন সিন্ডিকেট সভায় তার বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার নেই আমাদের। আদালতের রায় যা হবে, তা মেনে নেওয়া হবে। একইসঙ্গে ফ্যাসিস্ট সরকারের সমর্থক শিক্ষক-কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করতে ও ব্যবস্থা নিতে একজন সিন্ডিকেট সদস্যকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আর শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামকে অপসারণ করা হয়েছে।’
উপাচার্য বলেন, ‘২০১১ সালে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। ওই সময় যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তারা প্রায় সবাই ফ্যাসিস্ট সরকারদ্বারা নিয়োগপ্রাপ্ত। তবে ঠিক কারা ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর ছিল, তা আমার জানা নেই। এ কারণে সিন্ডিকেট সভায় এক সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটি ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসরদের তালিকা করবে। এরপর তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
সম্প্রতি ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জেবুন্নেছা হকের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে উপাচার্য বলেন, ‘জেবুন্নেছা চিকিৎসা সহায়তার আবেদন করলেও তা আমার কাছে পৌঁছায়নি। কেন আবেদন পৌঁছায়নি বিষয়টি তদন্ত করতে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এক সদস্যের ওই কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলে এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে দুপুর সাড়ে ১২টায় উপাচার্যের সংবাদ সম্মেলন শেষ হওয়ার দেড় ঘণ্টা পর বেলা ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিচতলায় সংবাদ সম্মেলন করেন আন্দোলনরত একদল শিক্ষার্থী। এতে নেতৃত্বদানকারী সুজয় শুভ বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের নামে দফায় দফায় পুলিশের হয়রানির যে ব্যবস্থা করা হয়েছে, এর মাধ্যমে উপাচার্য দায়িত্ব পালনে নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন। এমনকি দাবি আদায়ে থাকা শিক্ষার্থীদের মুখ বন্ধ রাখতে ন্যক্কারজনক প্রচেষ্টা চালিয়েছেন তিনি। যারা ফ্যাসিস্টদের দোসর ছিলেন তাদের পুনর্বাসন করছেন উপাচার্য। গত ১৮ দিন ধরে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। অথচ তাদের সঙ্গে কোনও ধরনের বৈঠকে বসেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ ধরনের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক এবং শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। কাজেই অতিদ্রুত উপাচার্যকে অপসারণের মধ্য দিয়ে একজন শিক্ষার্থীবান্ধব উপাচার্য নিয়োগের দাবি জানাই আমরা।’
সুজয় শুভ অভিযোগ করে বলেন, ‘ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জেবুন্নেছা উপাচার্য বরাবর আর্থিক সহায়তার আবেদন করলেও তা স্বাক্ষরের অভাবে অনুমোদন পায়নি। এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা মনে করছেন উপাচার্যের অপসরণ জরুরি। তাই তাকে অপসারণের জন্য এক দফা দাবি ঘোষণা করছি আমরা। দ্রুত সময়ের মধ্যে দাবি না মানলে কঠোর আন্দোলনের ডাক দেবো।’
সংবাদ সম্মেলন শেষে সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করেন শিক্ষার্থীরা।
গত ২৭ এপ্রিল রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামের অপসারণের দাবিতে আন্দোলনে নামেন একদল শিক্ষার্থী। তারা রেজিস্ট্রারকে ‘ফ্যাসিস্টদের দোসর’ দাবি করে কুশপুত্তলিকা দাহ করেন ও রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে তালা লাগান। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার (নিরাপত্তা) কে এম সানোয়ার পারভেজ ১০ জনের নামসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১২ জন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে জিডি করেন। এর আগে ১৬ ফেব্রুয়ারি উপাচার্যের অপসারণ দাবিতে শিক্ষার্থীরা তার বাসভবনের ফটক ভাঙচুর করলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৩২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্র জানায়, রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামের চার বছরের চাকরির মেয়াদ শেষ হয় ৩০ জানুয়ারি। এরপর উপাচার্য তাকে দায়িত্বে রাখার নির্দেশ দেন এবং পরবর্তী সিন্ডিকেট সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা উল্লেখ করেন। শিক্ষার্থীদের একটি অংশ মনিরুলকে অপসারণের জন্য আন্দোলন শুরু করেন। গতকাল শনিবার অনুষ্ঠিত ৮৮তম বিশেষ সিন্ডিকেট সভায় মনিরুল ইসলামকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।