আনোয়ার হোসেন, গাইবান্ধা প্রতিনিধিঃ ঋতু বৈচিত্র ও ষড়ঋতুর দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ। এই ছয়টি ঋতুর প্রত্যেকটি ঋতুর আছে একেকটি আলাদা রূপ। আষাঢ় শ্রাবণ এ দু’মাস বর্ষাকাল। প্রকৃতিতে এখন বর্ষা মৌসুম। আর বর্ষাকাল হওয়ায় প্রায় প্রতিদিনই নামছে থেমে থেমে বৃষ্টি। সেই সঙ্গে থাকছে রোদও। তবে এই রোদ-বৃষ্টির অন্যতম অনুষঙ্গ হলো ছাতা। যাদের ছাতা নষ্ট হয়ে গেছে তারা ছুটছেন ছাতার কারিগরের কাছে। যাদের ছাতা নেই তারা কিনছেন নতুন ছাতা।
কিন্তু নতুন ছাতা কেনার বদলে পুরোনো ছাতা মেরামত করে নেয়ার প্রবণতাও বহুদিনের। আর এই চাহিদা পূরণ করেন মৌসুমি ছাতা মেরামতের কারিগররা, যারা বছরের অন্যান্য সময় অন্য পেশায় থাকলেও বর্ষার শুরুতেই ফিরে আসেন তাদের পুরোনো কারবারে। এ যেন এক জুতসই মৌসুমি কারবার।
ছাতা মেরামতের এই কারবারকে কারিগররা নিজেরাই বলেন, এটা বর্ষাকালের অস্থায়ী কারবার। বিশেষ করে লেপ-তোশক সেলাইয়ের ধুনকর, জুতা-স্যান্ডেল মেরামতকারী রবিদাস সম্প্রদায়ের লোকজনসহ অন্যান্য পেশার লোকজনও বর্ষায় বৃষ্টি শুরু হলেই এই পেশাতে ঝুঁকে পড়েন। কেননা বৃষ্টির মৌসুম না এলে সাধারণত মানুষ ছাতা ব্যবহার করেন না। বৃষ্টি শুরু হলেই প্রয়োজন পড়ে বাড়িতে রাখা পুরোনো ছাতাটির। প্রায় প্রতিটি পরিবারেই দীর্ঘ ৮ থেকে ১০ মাস অযত্নে অবহেলায় পড়ে থাকা ছাতাটি মেরামত করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় বর্ষায়। ফলে বর্ষা এলেই ছাতা মেরামতের কারিগরদের চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। এ জন্য সুযোগ বুঝে কারিগররা বেশি দামে ছাতা মেরামতের কাজটি সম্পন্ন করে থাকেন। আর এ কারণেই তারা অন্য পেশা ছেড়ে এসে অস্থায়ী এবং লাভজনক এই মৌসুমি পেশায় যুক্ত হন।
গাইবান্ধা জেলা শহরসহ গ্রামীণ জনপদে বর্ষা আসার আগেই রাস্তার মোড়ে মোড়ে, বাজারের পাশে অথবা পাড়া-মহল্লার অলিগলিতে দেখা মেলে এই ছাতা মেরামতের কারিগরদের। ভাঙা ছাতা, ছেঁড়া ছাতা, আলগা হয়ে যাওয়া ছাতার শলাকা সবকিছুই যেন তাদের জাদুকরী হাতের ছোঁয়ায় নতুন জীবন ফিরে পায়। ৫০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যেই ছোটখাটো মেরামতের কাজ থেকে শুরু করে ফ্রেম পরিবর্তন পর্যন্ত সব ধরনের সেবা পাওয়া যায় তাদের কাছে।
বর্ষায় ছাতা মেরামতের এই মৌসুমি কারবার প্রসঙ্গে গাইবান্ধা প্রেস ক্লাব সভাপতি অমিতাভ দাশ হিমুন বলেন, এটি মৌসুমি কারবার হওয়ার পেছনে রয়েছে বেশ কিছু কারণ। প্রথমত ছাতা একটি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস হলেও এর ব্যবহার মূলত বর্ষাকেন্দ্রিক। ফলে সারা বছর এর মেরামতের চাহিদা থাকে না। দ্বিতীয়ত নতুন ছাতা কেনার চেয়ে পুরোনো ছাতা মেরামত করে নেয়া তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের কাছে এটি একটি বড় সুবিধা। তৃতীয়ত অনেক মানুষ তাদের পুরোনো ছাতার প্রতি এক ধরনের মায়া অনুভব করেন এবং সেটি ফেলে দিতে চান না।
গাইবান্ধা শহরের কাছারি বাজার এলাকায় রাস্তার পাশে বর্ষার এই সময়ে ছাতা মেরামতের রমরমা কারবারে ব্যস্ত সময় পার করেন কারিগররা। এই এলাকায় একসঙ্গে ৮ থেকে ১০ জন ছাতা মেরামতকারী সারিবদ্ধভাবে বসে কাজ করে থাকেন। এদের মধ্যে আবার অনেকেই অস্থায়ী। তাদের সঙ্গে
কথা বলে জানা যায়, বর্ষা মৌসুমে যেহেতু শ্রমজীবী মানুষের কাজের অভাব থাকে, সেজন্য বিকল্প পেশা হিসেবে তারা ছাতা মেরামতের কাজটি শিখে নিয়েছেন যাতে অভাবের সময়টিতে তারা এই কাজ করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতে পারেন।
এবারের বর্ষাতেও গাইবান্ধায় বেড়েছে ছাতা মেরামতের কারিগরদের চাহিদা। বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন এলাকা থেকে সাধারণ মানুষ ভিড় করছেন নষ্ট ছাতা মেরামত করতে। তবে বছরের অন্য সময়ে অনেক কারিগরই ছাতা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানে চুক্তিভিত্তিক ছাতা তৈরি করে থাকেন। গাইবান্ধা প্রেস ক্লাবের সামনে রাস্তার ধারে ছাতা মেরামতের কাজে ব্যস্ত থাকা কয়েকজন কারিগরের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্যই পাওয়া গেছে।
কাছারি বাজার এলাকায় অবস্থান করা সদর উপজেলার পূর্বকোমরনই মিয়াপাড়া গ্রামের কয়েকজন কারিগরের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখন চলছে ছাতা মেরামতের ভরা মৌসুম।