Monday, June 30, 2025
Homeজাতীয়বিএনপি চোরাবালিতে পা দিয়েছে, ভুলের চোরাবালি : জিল্লুর রহমান

বিএনপি চোরাবালিতে পা দিয়েছে, ভুলের চোরাবালি : জিল্লুর রহমান

- Advertisement -

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

মোজো ডেস্কঃ
টিভি উপস্থাপক ও সাংবাদিক জিল্লুর রহমান বলেছেন, দেশের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় বর্তমান পরিস্থিতিতে যে দলটি বাংলাদেশকে আসলে মধ্যপন্থার একটা ডিরেকশনে নিয়ে যেতে পারত, সেই দলটি আমার মনে হয় একটা চোরাবালিতে পা দিয়েছে, ভুলের চোড়াবালি। লক্ষ্য করলে দেখবেন, বিএনপির যারা একদা মিত্র, তারা সবাই ধীরে ধীরে বিএনপির প্রতিপক্ষ শিবিরে চলে যাচ্ছে। যে ইসলামী আন্দোলন-জামায়াত কোনোদিন একসঙ্গে রাজনীতি করতে পারত না, যে হেফাজতে ইসলাম-জামাত কোনোদিন এক ছিল না- তারা সবাই এখন এক শিবিরে। সাম্প্রতিক ইসলামী আন্দোলনের মহাসমাবেশে সবাই, এমনকি গণঅধিকার পরিষদ গিয়ে সেখানে যুক্ত হয়েছে, জামায়াত ছিল এবং গণঅধিকার পরিষদের নেতাদের নিশ্চয়ই কিছু কষ্ট দুঃখ আছে বিএনপির সঙ্গে রাজনীতি করতে গিয়ে।

গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যান্য নেতারা বা অন্যান্য মিত্রদেরও আমি দেখছি যে দুদিকেই তারা তাল রেখে চলার চেষ্টা করছেন। বিএনপির অনেক কিছুর সঙ্গেই তাদের ঐকমত্য সেই অর্থে আমি লক্ষ্য করছি না। তাই জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার যে চেষ্টা চলছে, কোনো ঐকমত্য হবে বলে আমার মনে হয় না।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন যেটা আমরা সবাই চাইছি এই অভ্যুত্থানের পরে, সেটা হলে ২৫ ডিসেম্বরের মধ্যে হবে, ২৫ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন না হলে বাংলাদেশে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে নির্বাচন হবে না।

কেন হবে না- সেটার অনেক রকমের কারণ আছে। বিএনপি তো একদম প্রথম দিন থেকেই খুবই আশাবাদী। যদিও এই আন্দোলন সংগ্রামের পুরো নেতৃত্ব, কৃতিত্ব- তারা দাবি করার সক্ষমতাই ছিল না, করতেও পারেনি, অনেক ত্যাগ স্বীকার করবার পরেও। আওয়ামী লীগ মার্জিনালাইজড।

বিএনপিও আসলে ধীরে ধীরে মার্জিনালাইজড হবার পথে। এটা বিএনপি বুঝতে পারছে না।

জিল্লুর রহমান বলেন, একদিকে সারাদেশের নেতাকর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। নানা অপকর্ম এবং তাদের বিরুদ্ধে প্রচারণা আছে, মিথ্যে প্রচারণাও আছে- এ কথা সত্যি। অন্যদিকে আমার ধারণা, বিএনপির নেতাকর্মীদের একটা বড় অংশ বর্তমান অবস্থায় সন্তুষ্ট।

ক্ষমতায় যাওয়া, রাজনীতি করা, দেশের মানুষের সেবা করা, দলটাকে আরো শক্তিশালী করা- এগুলোর চাইতে তাদের ব্যক্তিগত লাভ, ব্যবসা-বাণিজ্য এইদিকে তারা অনেক বেশি মনোযোগী। আওয়ামী লীগের বিদায় পর্বে তারা কিছুটা সুবিধা নিয়েছে এবং তারপরে নিজেদের হারানো অনেককিছু তারা পুনরুদ্ধার করেছে। নতুন নতুন অনেক জায়গায় নিজেদেরকে বিস্তৃত করবার একটা চেষ্টা করছে। কিন্তু সেটা করতে গিয়ে আসলে তারা রাজনীতি থেকে ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছে।

এ সাংবাদিক বলেন, আমার ধারণা জুলাই ঘোষণা এবং জাতীয় সনদ নিয়ে বিভাজনটা আরো ক্রমশ বাড়বে। ইতোমধ্যেই জামায়াত এবং তার মিত্ররা- এটা বলবার চেষ্টা করছে এবং এই মিত্রশক্তি কিন্তু অনেক বড়। ইসলামী সকল দল, তার সঙ্গে এনসিপি যুক্ত হয়েছে এবং তার সঙ্গে আরো অনেক রাজনৈতিক দল ধীরে ধীরে যুক্ত হবে। এটা কারো ভাষায় শুভ, কারো ভাষায় অশুভ চক্র এই শক্তিগুলোর পেছনে আছে। দেশের দেশের ভেতর-বাইরে মূল বিষয়টা কিন্তু এখানে ইসলাম নয়। মূল বিষয়টা ধর্ম। আলেম-ওলামা অনেকে বলেন যে আমরা তাদের বিরোধিতা করছি। ব্যাপারটা এরকম না। ব্যাপারটা হচ্ছে একটা ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক শক্তি বাংলাদেশে, কেউ কেউ তাদেরকে উগ্রপন্থীও বলতে পারেন, পলিটিক্যাল স্পেসটা দখল করে নিচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, বিএনপি-আওয়ামী লীগের অন্যায়-অবিচার আর বিএনপির অপরিণামদর্শিতা এর জন্য মূলত দায়ী। বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাসের সঙ্গে এই রাজনীতি যায় না। একটা আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার যারা আকাঙ্ক্ষা করেন, তাদের সঙ্গে এই রাজনীতি যায় না। কিন্তু বাস্তবে সেটাই হতে চলেছে। প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস যাকে একটা লিবারেল ডেমোক্রেট হিসেবে সবাই চেনেন। তিনিও এর এখন প্যাট্রন হয়ে দাঁড়াচ্ছেন, জেনে-বুঝে অথবা না জেনে। সবার মধ্যে একটা ক্ষমতা লোভ, সবার মধ্যে কিছু প্রাপ্তির আশা বা যা কিছু পেয়েছি তাকে বিস্তৃত করবার চেষ্টা দেখা যাচ্ছে।

জিল্লুর রহমান আরও বলেন, এরা এখন স্থানীয় সরকারের নির্বাচন আগে চাইছে, এরা গণপরিষদের নির্বাচন চাইবে, এরা রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ চাইবে, নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ চাইবে, এরা সেনাপ্রধানের পদত্যাগ চাইবে। এটাও বলে রাখি, সেনাপ্রধান হিসেবে জেনারেল ওয়াকার যতক্ষণ আছেন, ততক্ষণ নির্বাচনের একটা আশা থাকে। এর পরে নির্বাচন বহুদূর। কারণ বাংলাদেশের পুরো পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ চেঞ্জ হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ এজন্য প্রধানত দায়ী। আওয়ামী লীগকে যারা পেছন থেকে সহায়তা দিয়েছে আমাদের প্রতিবেশী ভারতকেও এখানে দায়ী করা চলে। তারা জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক করতে চায়নি।

অন্যান্য রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে সম্পর্ক করতে চায়নি। পুরো আওয়ামী লীগের উপর নির্ভর করেছে। এখন তারাও ব্যাকফুটে। লো প্রোফাইল মেনটেইন করতে হচ্ছে। আওয়ামী লীগ কোথাও নেই। তারাও (আওয়ামী লীগ) মনে করেছে, ভারত তাদের সব করে দেবে। ওইদিকে চীনের সঙ্গে তারা একটা ভারসাম্য বজায় রেখেছে। ঘুষ-দুর্নীতি যত কিছু করা যায়, বড় বড় মেগা প্রজেক্ট করে, মেগা দুর্নীতি- সেখানে চীনের সহায়তা তারা পেয়েছে। আমরা এটাও লক্ষ্য করেছি, চীন আর ভারত বিভিন্ন নির্বাচনের পরে কে আগে অভিনন্দন শেখ হাসিনাকে জানাবেন তার জন্য এক ধরনের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত ছিল।

Facebook Comments Box
spot_img
এ বিভাগের আরও খবর
- Advertisment -spot_img

সর্বাধিক পঠিত খবর