ইকবাল বাহার, পঞ্চগড় প্রতিনিধিঃ
“একজন বিচারক এজলাসে বসে কখনও ন্যায় বিচার করতে পারেন না, কারণ তিনি বাস্তবতার নিরিখে নয়, বরং সাক্ষ্য ও উপস্থাপিত নথিপত্রের ভিত্তিতে বিচার করেন। ফলে সত্য ঘটনা জানা সত্ত্বেও সাক্ষ্যপ্রমাণের অভাবে অনেক সময় বাদী ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হন।” — এমন মন্তব্য করেছেন পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক মো. সাবেত আলী।
সোমবার (২৬ মে) সকাল ১১টায় পঞ্চগড় সদর উপজেলা পরিষদের হলরুমে আয়োজিত ‘গ্রাম আদালত বিষয়ক দুইদিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কোর্স’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, “বিচারক কখনও ঘটনাস্থলে গিয়ে সত্যতা যাচাই করেন না। তিনি শুধু আদালতে উপস্থাপিত কাগজপত্র, আইন অনুযায়ী ব্যাখ্যা এবং সাক্ষীদের জবানবন্দির ওপর নির্ভর করেই রায় দেন। এতে অনেক সময় প্রকৃত অপরাধী ছাড়া পেয়ে যায় কিংবা নিরীহ কেউ শাস্তি পায়। এ কারণেই বাস্তবমুখী ও প্রাথমিক স্তরে বিচার কার্যক্রমকে শক্তিশালী করা জরুরি।”
তিনি আরও বলেন, “গ্রাম আদালত আইন অনুযায়ী অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে, যার মূল উদ্দেশ্য হলো—সাধারণ মানুষ যেন অল্প সময়ে ও বিনা খরচে ন্যায় বিচার পায়। আমাদের সমাজের নিম্নবিত্ত ও গ্রামাঞ্চলের মানুষদের বিচার প্রক্রিয়ায় সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতেই এই আইনের কার্যকারিতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।”
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. জাকির হোসেন।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন—অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সীমা শারমিন, সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল্লা হিল জামানসহ অন্যান্য প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা।
প্রশিক্ষণ কোর্সটি বাংলাদেশ গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ (তৃতীয় পর্যায়) প্রকল্প এর আওতায় অনুষ্ঠিত হয়। এতে সদর উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের প্রায় ৭২ জন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, গ্রাম আদালত সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় বিচার পৌঁছে দিতে পারে। স্থানীয়ভাবে সহজ বিচারিক সমাধান দেওয়ায় এটি সময় ও অর্থ দুটোই সাশ্রয় করে। পাশাপাশি এটি উচ্চ আদালতের ওপর মামলার চাপও কমিয়ে আনে।
জেলা প্রশাসক মনে করেন, আদালতের বাইরে, সামাজিক বাস্তবতা ও স্থানীয় জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার বড় সুযোগ রয়েছে গ্রাম আদালতের মাধ্যমে।