ইকবাল বাহার, পঞ্চগড় প্রতিনিধিঃ
বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন আওয়ামী লীগের ৭৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ঘিরে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে তৈরি হয়েছে নতুন বিতর্ক ও উত্তেজনা। দলটি এখনো আইনের চোখে অবৈধ, তবুও তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন ও প্রকাশ্যে আয়োজন সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে মঙ্গলবার পঞ্চগড়ে বিভিন্ন এলাকায় আয়োজন করা হয় খাবার বিতরণ কর্মসূচি ও কেক কাটার অনুষ্ঠান।
এ সময় পাথর শ্রমিকদের মাঝে খাবার বিতরণ করেন কেন্দ্রীয় যুব মহিলা লীগের সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নাঈমুজ্জামান ভূঁইয়া মুক্তার সহধর্মিণী (অবসরপ্রাপ্ত মেজর) কাজী মৌসুমী এবং জেলার যুব মহিলা লীগের সভাপতি নিলুফার ইয়াসমিন।
এছাড়া, একটি কক্ষে কেক কেটে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবু তোয়াবুর রহমান, কাজী মৌসুমীসহ স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
এই আয়োজনের ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিন্দার ঝড় বইছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, আইন বহির্ভূতভাবে একটি নিষিদ্ধ সংগঠনের প্রকাশ্য কর্মসূচি কিভাবে আয়োজন করা হয় এবং প্রশাসন নীরব কেন?
পঞ্চগড় জেলার জুলাই আন্দোলনের সমন্বয়ক ফজলে রাব্বি তাঁর ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন: “এই ডেবিলদের দ্রুত গ্রেফতার করতে হবে। যারা হাজার হাজার মায়ের বুক খালি করেছে, যাদের কারণে অসংখ্য মানুষ হাত-পা, চোখ হারিয়েছে — সেই আওয়ামী লীগের দোসর নেতাকর্মীদের আইনের আওতায় আনা এখন সময়ের দাবি।”
একজন শিক্ষক ও সমাজকর্মী বলেন: “যে সংগঠনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তাদেরকে কেন প্রকাশ্যে সভা-সমাবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে? এটা রাষ্ট্রীয় নীতির পরিপন্থী।”
তিনি আরো বলেন, “যদি কোনো নিষিদ্ধ সংগঠন এমন আয়োজন করতে পারে, তবে আইনের শাসনের কথা আমরা কীভাবে বলব?”
জেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক জুয়েল রানা বলেন, “সরকারের উচিত অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। এটা শুধু আইন লঙ্ঘন না, জনগণের রক্তের সাথে প্রতারণা।”
জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক জাহিরুল ইসলাম কাচ্চু বলেন, এটি কেবল আইন লঙ্ঘনের উদাহরণ নয়, বরং রাষ্ট্রীয় আইনশৃঙ্খলার প্রতি এক ধরনের অবজ্ঞার প্রকাশ। নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামী লীগের এ ধরনের প্রকাশ্য আয়োজন প্রশাসনিক দুর্বলতা ও আইন লঙ্ঘনের নিদর্শন হিসেবেই দেখছি আমরা । এখন দেখার বিষয়, রাষ্ট্র ব্যবস্থা কতটা দ্রুত পদক্ষেপ নেয় এবং এই ‘ডেভিল’ তকমা পাওয়া নেতাদের আইনের আওতায় আনা হয় কি না।
তিনি আরো বলেন, জনগণের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ থাকলেও এখন পর্যন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় প্রশ্ন উঠেছে- আইন কি শুধুই কাগুজে বিষয় হয়ে গেছে? সামাজিক মিডিয়ার ক্ষোভ কি আদৌ প্রশাসনের টনক নড়াবে?
স্থানীয় নাগরিক সমাজ বলছে, “আইনের প্রয়োগে দ্বিমুখিতা থাকলে গণতন্ত্রের ভিত্তি দুর্বল হয়, আর তখনই রাষ্ট্রীয় সুশাসন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে।”
এই প্রসঙ্গে কথা বলেছেন পঞ্চগড় জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মো. আদম সুফি। তিনি বলেন: “যদি কোনো রাজনৈতিক সংগঠন সরকার বা আদালতের মাধ্যমে নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়, তবে সেই সংগঠনের পক্ষ থেকে জনসমক্ষে কার্যক্রম পরিচালনা করা কিংবা অনুষ্ঠান আয়োজন করা স্পষ্টতই রাষ্ট্রদ্রোহিতার পর্যায়ে পড়ে।”
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ১২৪ এর ক ধারা অনুযায়ী, রাষ্ট্র বা সরকারের বিরুদ্ধে সংঘটিত বা উস্কানিমূলক কার্যক্রম শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তদুপরি, নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের কোনো ধরনের প্রচার-প্রচারণাও ‘অবৈধ সমাবেশ’ হিসেবে গণ্য হতে পারে, যার জন্য পুলিশ কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিতে বাধ্য।
পঞ্চগড় সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল্লাহ হিল জামান বলেন, “আমার জানামতে ঘটনাটি তেঁতুলিয়া উপজেলায় ঘটেছে। আমার জানামতে আমি যতটুকু শুনেছি, তবে এখন পর্যন্ত আমি নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্য পাইনি।”
অন্যদিকে, বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করে তেঁতুলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুসা মিয়া বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে আমরা সারাদিন বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ করেছি। কিন্তু এমন কোনো স্পট বা ঘটনার অস্তিত্ব আমরা পাইনি। আমাদের এলাকায় এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি।”