Monday, June 16, 2025
Homeকুড়িগ্রামসার্কাস-যাত্রা বন্ধ, স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বিপাকে প্রতিবন্ধী শাহজাহান

সার্কাস-যাত্রা বন্ধ, স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বিপাকে প্রতিবন্ধী শাহজাহান

- Advertisement -

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

অনিল চন্দ্র রায়, ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি:
কী কই বাহে ! আমার দুশ্চিন্তায় শেষ নেই। বর্তমানে দেশে সার্কাস ও যাত্রাপালা বন্ধ হওয়ায় আয় রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে আমার সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে। বলতে গেলে নুন আনতে পান্তা ফুরায়। জীবন জীবিকার তাগিদে কোন রকমেই সামান্য আয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন পাড় করছি। আমি জানি না একমাত্র সন্তানের আশা পূরণ করতে পারবো কি না। কারণ গেল ঈদে স্ত্রীর নতুন কাপড়চোপড় ও একমাত্র সন্তানের নতুন শার্ট প্যান্ট কিনে দিতে পারিনি। ফির ঘনিয়ে আসছে কুরবানির ঈদ। স্ত্রীকে নতুন কাপড়চোপড় কিনে দিতে না পারলেও সে কখনও কষ্ট পাবে না। কিন্তু একমাত্র সন্তানকে যেহেতু গেল ঈদে নতুন শার্ট প্যান্ট দিতে না পাড়ায় এই ঈদে নতুন শার্ট প্যান্ট- কিনে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। ঘরে নেই জমানো টাকা পয়সা নেই। সংসারে আয় বলতে নিজের প্রতিবন্ধী ভাতাটুকুই সম্ভল। সেই সাথে বাড়ির পাশে ছোট একটি মুদি দোকান দিলেও বেচাবিক্রি কম হওয়ায় একেবারে সামান্য আয়। দিনে এই দোকান থেকে আয় মাত্র ১০০ থেকে দেড়শত টাকা আয়। কোন কোন দিন ৫০ টাকাও আয় হয় না। সামান্য আয়ে যেখানে স্ত্রী সন্তানদের মুখে ডাল ভাত জোটে না। সেখানে এই ঈদে সন্তানের নতুন জামা কাপড় কিনে দেওয়া ও পরিবারের সদস্যদের মুখে এক টুকরো মাংস খাওয়াতে পারবো কি না এই চিন্তায় বাকরুদ্ধ হয়ে দিন পাড় করেছেন শাহজাহান আলী।তিনি অতিকষ্টে খেয়ে না খেয়ে স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। কথাগুলো ভারাক্রান্ত মন নিয়ে অতিকষ্ট জানালেন সার্কাস ও যাত্রাপালার অভিনয় শিল্পী শাহজাহান আলা (৫২)।
তিনি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার সদর ইউনিয়নের সীমান্তঘেষা কুটিচন্দ্রখানা গ্রামের একাবর আলীর ছেলে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বাড়ির সাথে মেইন সড়কের পাশের ছোট একটি মুদি দোকান। বাপ-ছেলে দোকানটি পরিচালনা করছেন। ছেলে তাজুল ইসলাম স্কুল শেষে দোকান চালান। সেখানে দেড় দুই ঘণ্টা থাকার পড়েও দোকানে বিক্রি করতে দেখা যায়নি। দোকান মালপত্র কম থাকায় বেচাবিক্রিও কম।
দীর্ঘ ১৭ বছর দেশের বিভিন্ন সার্কাস দলে ও যাত্রাপালায় অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। দেশের একাধিক সার্কাস ও যাত্রাদলে অভিনয় করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করেছেন সার্কাস শিল্পী শাহজাহান আলী। সার্কাস বন্ধ হওয়ায় তার আয় কমেছে। ফলে তিনি স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন। অনেক কষ্টে জীবন জীবিকা নির্বাহ করছেন বামন প্রতিবন্ধী শাহজাহান আলী (৪২ ইঞ্চি) লম্বা ও তার একমাত্র তাজুল ইসলাম:(৩৬ ইঞ্চি) লম্বা।

সার্কাস-যাত্রাদলের অভিনয় শিল্পী, বামন প্রতিবন্ধী শাহজাহান আলী জানান, বাবা থেকেও নেই। পাশেই বাবার বাড়ি। আমি প্রতিবন্ধী হওয়ায় কোন প্রকার আমিসহ আমার পরিবারের কোনো ধরনের খোঁজ খবর নেয় না। আমার বয়স যখন ১২ বছর তখন থেকে বুলবুল, রওশন, সোনারবাংলা সার্কাসসহ একাধিক যাত্রাপালায় অভিনয় করে জীবন জীবিকার নির্বাহ করেছি। জীবন অনেক কষ্ট করেছি। কষ্টের টাকা দিয়ে সংসার চালানোর পাশাপাশি এই বাড়ির ভিটার ৮ শতক জমি কিনে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে বসবাস করছি। আমার ১ ছেলে ও দুই মেয়ে। বড় মেয়ে শাহানা আক্তার ও ছোট মেয়ে সোনা বানু। প্রায় ২০ বছর অনেক কষ্ট করে তাদের বিয়ে দিয়েছি। সার্কাসও বন্ধ আমার বয়সও বেড়ে গেছে। বর্তমানে খুব কষ্টে আছি বাহে !
দুই বছর ধরে বাড়বর পাশে ছোট একটি দোকান করে কোন রকম দোকানের আয় দেড় দুইশত টাকার সামান্য আয়, আত্মীয়, স্বজন ও মাঝে মধ্যে মেয়ে দুইটির সহযোগিতায় কোন রকমে ডাল-ভাত খেয়ে দিন পাড় করছি। যে প্রতিষ্ঠানে জীবনের অধিকাংশ বয়স কেটে গেছে এই দুঃসময়ে তারাও আর খোঁজ খবর নেয় না। কপাল খারাপ হলে যা হয়। তিনি তার একমাত্র সন্তানের প্রতিবন্ধী ভাতাসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পাওয়ার জন্য সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন। এছাড়াও সন্তানের নতুন শার্ট প্যান্টসহ সন্তানের পড়াশোনার খরচ জোগানোসহ দোকানে কিছু মালপত্র ক্রয়ের জন্য বিত্তবানদের কাজে আকুতি জানিয়েছেন।

চতুর্থ শ্রেণীর বামন প্রকৃতির তাজুল ইসলাম বলেন, আমার বাবার হাতে এখন টাকা নেই। টাকার অভাবে গত ঈদে নতুন জমা কিনে দিতে পারেনি। যদি সরকার আমার প্রতিবন্ধী ভাতা করে দিতো তাহলে আমার নতুন জামাও কেনা হতো এবং আমার পড়াশুনার খরচও হতো। সেই সাথে সরকার যদি আমাদের দোকানের ব্যবসার ব্যবস্থা করে দিত, তাহলে আমরা একটু খেয়ে পড়ে ভালো থাকতে পারতাম।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রেহেনুমা তারান্নুম জানান, ওই পরিবারের যে কেউ সমাজসেবা অফিসে যোগাযোগ করলে বামন প্রকৃতির শিক্ষার্থী তাজুল ইসলামের প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা হয়ে যাবে আশাকরি। এছাড়া ওই পরিবারটিকে বিভিন্ন ধরনের সরকারি সুযোগ-সুবিধা দেয়ার আশ্বাস দেন ইউএনও।

 

Facebook Comments Box
spot_img
এ বিভাগের আরও খবর
- Advertisment -spot_img

সর্বাধিক পঠিত খবর