ইকবাল বাহার, পঞ্চগড় প্রতিনিধিঃ
পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে গুরুতর অবহেলার অভিযোগ উঠেছে। সুস্থ না হওয়া সত্ত্বেও এক নির্যাতিত নারী রোগীকে জোরপূর্বক ছাড়পত্র দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ করেছেন রোগীর পরিবার ও স্থানীয়রা।
ভুক্তভোগী নারীর নাম রেনু আক্তার (৩৫)। তিনি সদর উপজেলার হাড়িভাষা ইউনিয়নের বড়বাড়ি এলাকার অটোচালক আনিসুর রহমানের স্ত্রী। দীর্ঘদিন ধরে স্বামীর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার ছিলেন তিনি। সম্প্রতি মাত্র ১৫০ টাকার একটি কাপড় কেনাকে কেন্দ্র করে স্বামী তাকে বেধড়ক মারধর করে। রশি দিয়ে হাত-পা বেঁধে অজ্ঞান অবস্থায় ফেলে রাখে বলে অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে গত সোমবার বিকেলে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করান। তবে চিকিৎসা অসম্পূর্ণ থাকা সত্ত্বেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে জোর করে ছাড়পত্র দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে দাবি করেছেন তার স্বজনরা।
রেনুর মা ফরিদা বেগম বলেন, “আমার মেয়েকে প্রতিনিয়ত নির্যাতন করা হতো। এখনো সে পুরোপুরি সুস্থ না হলেও ডাক্তার তাকে রিলিজ দিতে চাইছেন।”
হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত নার্সরাও রেনুর অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তারা জানান, “রেনু এখনো বারান্দায় হাঁটতেও পারছেন না। আমরা সকালে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তার অবস্থার উন্নতি লক্ষ্য করিনি।”
তবে হাসপাতালের আরএমও ডা. আবুল কাশেম সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, “রোগী হাঁটলে সে সুস্থ। তাকে তো রিলিজ দিবোই। আপনারা যা পারেন লেখেন।”
তবে হাসপাতালের অন্যান্য রোগীর অভিজ্ঞতা এর সঙ্গে ভিন্ন। পাশের বেডের ফিরোজা বেগম বলেন, “রেনু গতকাল ভর্তি হয়েছেন, একবারও তাকে হাঁটতে দেখিনি।”
আরেক রোগী মর্জিনা বেগম জানান, “তিনি টয়লেটেও যাচ্ছেন অনেক কষ্ট করে। এখনো একা চলাফেরা করতে পারছেন না।”
এই ঘটনার পর সামাজিক ও সচেতন মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, একজন নির্যাতিত নারীর সঙ্গে এমন আচরণ মানবিকতা ও চিকিৎসা নীতিমালার পরিপন্থি। ভুক্তভোগী চিকিৎসার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলেও মত দিচ্ছেন নাগরিকরা।
এ বিষয়ে পঞ্চগড় সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল্লাহ হিল জামান বলেন, “এখনো পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”