Tuesday, May 6, 2025
Homeকুড়িগ্রামস্মার্ট যুগেও ফুলবাড়ীতে শিলপাটা ধার দিয়ে সংসার চলে শুশীল মোহন্তের

স্মার্ট যুগেও ফুলবাড়ীতে শিলপাটা ধার দিয়ে সংসার চলে শুশীল মোহন্তের

- Advertisement -

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

অনিল চন্দ্র রায়, ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি :

কথাই আছে মাছে-ভাতে বাঙালী। তিন বেলা আহারের জন্য ভাতের সঙ্গে খেতে হয় মাছ মাংসসহ বিভিন্ন প্রকার তরকারি। আর এই সব রান্না করতে প্রয়োজন হয় মসলা। এই মসলা পিশানোর জন্য খুবই প্রয়োজনীয় উপকরণ শিল পাটা। দৈনন্দিন কাজের জন্য এই শিল পাটার কোন বিকল্প নেই। বর্তমান সময়ে আধুনিকতার ছোঁয়ায় গ্রাইন্ডার মে‌শিন ও ব্যালেন্ডারসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি ব্যবহার করায় শিল পাটার ব্যবহার শহরে কমলেও এখনো কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার গ্রামগঞ্জে প্রতিটি পরিবারগুলোতে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী শিল পাটার ব্যবহার কমেনি।
উপজেলা বিভিন্ন গ্রামগঞ্জে ঘুরে দেখা গেছে স্মার্ট ও আধুনিক যুগেও শিল পাটার ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন।

ফুলবাড়ী উপজেলার পানিমাছকুটি গ্রামের ৭৫ বছর বয়সী শুশীল চন্দ্র মোহন্ত গ্রামগঞ্জে ঘুরে ঘুরে শিল পাটা ধার করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। শুধু তিনি নন তার মতো অনেকেই শিল পাটা ধার করে সংসার চালাচ্ছেন। শুশীল চন্দ্র মোহন্ত টানা ৩০ বছর ধরে পায়ে হেঁটে গ্রামের অলিতে গলিতে গিয়ে হাতুড়ি, বাটাল আর ছেনিথ ওইসব জিনিসের সাহায্যে ঠুকে ঠুকে শিলপাটার ধার দেয়ার কাজ করে। এখন তিনি ১০ থেকে ১৫ বছর ধরে বাইসাইকেলে করে গ্রামে গ্রামে ঘুরে শিল পাটা ধার দিয়ে জীবন জীবিকা নির্বাহ করেন। তিনি জানান, ৪০ থেকে ৪৫ বছর ধরে এ পেশার সঙ্গে যুক্ত। অনেকে বলেন শিল পাটা বিলুপ্তির পথে এমন প্রশ্ন করলে শুশীল চন্দ্র মোহন্ত জানান, শহরে কিছুটা কমেছে। কিন্তু গ্রামে দুই একজন বাড়ীতে ব্যালেন্ডার থাকলেও অধিকাংশ বাড়ীতে এখনো শিলপাটা ব্যবহার করছে। তিনি প্রতিদিন দুপুরে বাড়ীতে বের হয়ে বাইসাইকেল করে ফুলবাড়ী উপজেলাসহ পাশ্ববর্তী নাগেশ্বরী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে শিল পাটা ধার দেওয়ার কাজ করেন। একটি শিল পাটা ধার দেওয়ার জন্য তিনি ১ কেজি চাল নেন। এভাবে তিনি প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ কেজি চাল ও ১০০ থেকে দেড়শ টাকার মতো আয় করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করছেন।

উপজেলা কুরুষাফেরুষা এলাকায় গৃহিণী মনি বালা রায় (৫৭) ও উলপন বেওয়া (৬০) জানান, আমরা প্রত্যেকটি দিন বাড়ীতে রান্নার কাজের জন্য শিলপাটার ব্যবহার করে আসছি। তবে তারা আরও জানান যখন বাড়ীতে বড় ধরণের অনুষ্ঠান হয় তখন আমরা মেশিনেই হলুদ, ধনিয়া, গরম মসলা গুড়া করে নিয়ে আসা হয় । শিলপাটার ব্যবহার এখন কমেনি।
একই গ্রামের শাপলা রানী (৩০) ও কহিনুর বেগম (২৭) জানান, আমাদের বাড়ীতে শিল পাটা আছে। আমরা এখনো নিয়মিত ব্যবহার করছি। বিশেষ করে বাড়ীতে বিয়ে-শাদির অনুষ্ঠানে হলুদ ও মেন্দি এছাড়াও সামাজিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ভোজন বিলাসী গৃহিণীরা হরেক রকম স্বাদের মসলা বাটার কাজ করেন। তবে আধুনিকতার ছোঁয়ায় ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক, বাঙালির সমাজ ব্যবস্থার পারিবারিক অঙ্গন থেকে কিছুটা হারিয়ে যাচ্ছে শিলপাটার ব্যবহার।

Facebook Comments Box
spot_img
এ বিভাগের আরও খবর
- Advertisment -spot_img

সর্বাধিক পঠিত খবর