আনোয়ার হোসেন, গাইবান্ধা প্রতিনিধি:
উত্তরাঞ্চলের অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গাইবান্ধা কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (এটিআই)-কে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে আবারও সরব হয়েছেন সংশ্লিষ্ট মহল ও সাধারণ মানুষ। অবকাঠামো, জনবল ও প্রাকৃতিক পরিবেশের সকল সুবিধা থাকা সত্ত্বেও আজও এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি পায়নি—যা স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের আক্ষেপে পরিণত হয়েছে।
১৯৫৪ সালে ‘ভিএইড’ নামে প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠানটি সময়ের পরিক্রমায় চারবার নাম পরিবর্তন করে বর্তমানে “এটিআই” নামে পরিচিত। বর্তমানে এখানে ৪ বছরের কৃষি ডিপ্লোমা কোর্স চালু রয়েছে, যেখানে প্রতিবছর প্রায় ২৫০ শিক্ষার্থী ভর্তি হয়ে কৃষিশিক্ষা গ্রহণ করছে। প্রতিষ্ঠানটির রয়েছে ৪৭.৯৫ একর জমি, আবাসিক হোস্টেল, ল্যাব, ক্লাসরুম, দপ্তর ভবন, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, গবাদিপশুর খামার, বিশাল লেকসহ পর্যটন সম্ভাবনাময় অবকাঠামো।
শুধু গাইবান্ধা নয়, আশেপাশের চরাঞ্চল ও নদীভাঙনকবলিত জেলা যেমন কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, রংপুর, বগুড়া, জামালপুর, চিলমারী, রৌমারী, সাঘাটা, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি থেকেও শিক্ষার্থীরা এখানে পড়াশোনা করে কৃষি পেশায় যুক্ত হচ্ছেন।
প্রাক্তন শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেন বলেন, “বাড়ির পাশে হওয়ায় কম খরচে পড়েছি, দ্রুত চাকরিও পেয়েছি।”
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নয়ন বলেন, “এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার মান অত্যন্ত ভালো, চরাঞ্চলের অনেক শিক্ষার্থীর ভাগ্য বদলেছে এটিএই থেকে।”
শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মাজহার উল মান্নান বলেন, “গাইবান্ধা একটি পিছিয়ে পড়া জেলা, অথচ এখনো এখানে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নেই। এটিআই-কে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর সময়ের দাবি।”
অধ্যাপক জহরুল কাইয়ুম বলেন, “এখানে সকল অবকাঠামো ও জমি প্রস্তুত রয়েছে। সরকারি সদিচ্ছা ও ইউজিসির অনুমোদনেই এ উদ্যোগ সম্ভব।”
উন্নয়ন গবেষক এম. আবদুস সালাম জানান, “গাইবান্ধার মতো কৃষিনির্ভর জেলায় কর্মসংস্থানের অভাব প্রকট। এটিআই বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপ নিলে শিক্ষার পাশাপাশি কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিরও বিপুল প্রসার ঘটবে।”
প্রসঙ্গত, দিনাজপুরের কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট রূপান্তরিত হয়ে বর্তমানে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়েছে। একইভাবে গাইবান্ধা এটিআই-ও সরকারের রাজনৈতিক অঙ্গীকার, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অনুমোদন এবং প্রশাসনিক সদিচ্ছার মাধ্যমে দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপ নিতে পারে।