ইকবাল বাহার, পঞ্চগড় প্রতিনিধিঃ
আসন্ন ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে পঞ্চগড় জেলার খামারগুলোতে চলছে কোরবানির পশু প্রস্তুতের শেষ মুহূর্তের কর্মযজ্ঞ। জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবছর জেলার বিভিন্ন খামারে মোট ১ লাখ ৩৪ হাজার ৪৫১টি গবাদিপশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। অথচ জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা ধরা হয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ৩০০টি। ফলে অতিরিক্ত প্রস্তুত হচ্ছে ২৪ হাজার ১৫১টি পশু।
জেলার পাঁচটি উপজেলার শত শত খামারি এই কোরবানিকে কেন্দ্র করে সারা বছরের শ্রম ও পুঁজি বিনিয়োগ করেছেন। খামারিরা গরু, ছাগল, মহিষ ও ভেড়া পালন করে এখন বিক্রির অপেক্ষায় রয়েছেন।
সদর উপজেলার পাঠানপাড়া গ্রামের খামরি মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, “আমি কোরবানির জন্য দেশী জাতের ৭টি ষাঁড় প্রস্তুত করেছি। কিন্তু বাজারে গো-খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় খামার ব্যবস্থাপনার খরচ অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। ফলে লাভের চেয়ে লোকসানের আশঙ্কায় রয়েছি।
পঞ্চগড় পৌর শহরের খামারি আবুল কাশেম আবু জানান, “এবার আমাদের খামারে ১০টি দেশি জাতের গরু প্রস্তুত করেছি। এবার খাদ্যের দাম বেশি হলেও আশা করছি ভালো দাম পাব। যদি হাটে ক্রেতা ভালো আসে, তাহলে কিছু লাভ থাকবে।”
হাড়িভাসা ইউনিয়নের খামারি মো. রবিউল ইসলাম জানান, বর্তমানে ১ কেজি গমের ভুসি বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। খুদ, ভুট্টা, খৈলসহ অন্যান্য খাদ্য ও ব্যবস্থাপনা খরচ অনেক বেড়েছে। তাই খামার পরিচালনার ব্যয় বহন করা অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে।
তার এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেন খামারি হাজী সাখাওয়াত হোসেনসহ আরো কয়েকজন।
পঞ্চগড় জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. বাবুল হোসেন জানান, “খামারিদের প্রশিক্ষণ, চিকিৎসা এবং পরামর্শ দিয়ে আমরা সহায়তা করে যাচ্ছি। জেলা ও উপজেলায় পর্যাপ্ত পশু রয়েছে, এমনকি চাহিদার অতিরিক্ত। অতিরিক্ত পশুগুলো ঢাকাসহ অন্যান্য বড় হাটে সরবরাহের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
তিনি আরও জানান, কোরবানির আগে ও পরে মনিটরিং টিম গঠনের মাধ্যমে পশু পরিবহণ, স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও বাজার ব্যবস্থাপনায় নজরদারি থাকবে। অসুস্থ বা অনুপযুক্ত পশু যেন বাজারে না আসে, তা নিশ্চিত করা হবে। গত কয়েক বছর আগে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত বলে ছিল যে তার আমার গবাদি পশু সরবরাহ করবে না, তাদের এ কথাটি আমরা চ্যালেঞ্জ সহকারে নিয়েছিলাম। বর্তমানে আমরা আমাদের চাহিদার অতিরিক্ত পশু উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছি। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত যদি চায় এখন আমরা তাদের দেশে রপ্তানি করতে পারি।
অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও বাজার ব্যবস্থাপনা
জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্য অনুযায়ী, পঞ্চগড়ে প্রতিবছর কোরবানির মৌসুমে প্রায় কয়েকশত কোটি টাকার পশু বেচাকেনা হয়। অনেকে শুধু এই সময়কে কেন্দ্র করেই খামার করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তবে খামারিরা বলছেন, সরকার যদি বাজার ব্যবস্থাপনা আরও শক্ত করে এবং সরাসরি বিক্রির সুযোগ বাড়ায়, তাহলে তারা ন্যায্যমূল্য পাবেন।
পঞ্চগড়ের খামারিরা যেমন পশু প্রস্তুতিতে ব্যাপক পরিশ্রম করেছেন, তেমনি প্রশাসনের পক্ষ থেকেও নেওয়া হয়েছে নানা প্রস্তুতি। এখন দেখার বিষয়, বাজার কতটা সাড়া দেয়। সময়মতো বিক্রি হলে এবারের ঈদে জেলার খামারিদের মুখে হাসি ফুটবে বলেই আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।