Home পঞ্চগড় গরিবের স্বাস্থ্যসেবা মুখ থুবড়ে পড়েছে ঝাকুয়াপাড়ায় — তালাবদ্ধ ক্লিনিক, ভোগান্তিতে সাধারণ মানুষ

গরিবের স্বাস্থ্যসেবা মুখ থুবড়ে পড়েছে ঝাকুয়াপাড়ায় — তালাবদ্ধ ক্লিনিক, ভোগান্তিতে সাধারণ মানুষ

গরিবের স্বাস্থ্যসেবা মুখ থুবড়ে পড়েছে ঝাকুয়াপাড়ায়

ইকবাল বাহার, পঞ্চগড় প্রতিনিধিঃ

পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নের ঝাকুয়াপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকে বিগত সাড়ে তিন মাস ধরে নেই কোনো ওষুধ। নিয়মিত বন্ধ থাকছে ক্লিনিকের দরজাও। ফলে এলাকার গরিব ও সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে পুরোপুরি বঞ্চিত হচ্ছেন।

১ জুলাই (মঙ্গলবার) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ক্লিনিকটি তালাবদ্ধ। ভেতরে নেই কোনো কার্যক্রম। বাইরে থেকে ঘুরে যেতে দেখা যায় একাধিক সেবা প্রত্যাশীকে। স্থানীয়দের অভিযোগ—ঔষধ নেই, সেবাদানকারী কর্মী সময়মতো আসেন না, আবার তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখে ফিরে যেতে হয় খালি হাতে।

স্থানীয় বাসিন্দা বিজয় বর্মন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “গত তিন-চার মাস ধরে কোনো ওষুধ পাচ্ছি না। ক্লিনিকের দায়িত্বে থাকা মমতাজ বেগম সময়মতো আসেন না, হঠাৎ হঠাৎ দুপুর ১২টার পর আসেন। আমরা চাই, তিনি নিয়মিত এসে ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করুন।”

স্থানীয় এক গৃহবধূ বলেন, “ছোট ছোট বাচ্চা নিয়ে আসি, কিন্তু তালা ঝুলে থাকতে দেখি। আমরা গরিব মানুষ, বাইরে থেকে সবসময় ওষুধ কেনা সম্ভব হয় না। সরকার যেই ওষুধ দেয়, সেটাও যদি ঠিকমতো না পাই, তাহলে কষ্ট আমাদেরই।”

কৃষক দেলোয়ার হোসেন বলেন, “জ্বর-সর্দি-কাশি হলে এখানেই আসতাম। এখন দেখি তালাবদ্ধ। তিন মাস ধরে এক অবস্থা। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়া দরকার।”

স্থানীয় যুবক সাদ্দাম হোসেনের অভিযোগ, “কখন আসি, দেখি তালা। আবার যদি ভাগ্য ভালো হয়, তালা খোলা পাই, তাও আবার ওষুধ থাকে না। তাহলে আমরা কেন আসি? এটা দায়সারা দায়িত্ব পালন নয়?”

বয়স্ক নারী রিজিয়া খাতুন বলেন, “আমার প্রেসারের ওষুধ লাগত। আগে এখানে পেতাম। এখন তিন মাস ধরে কিছুই নাই। বাইরে থেকে কিনে খেতে হয়, অনেক কষ্ট হয়। সরকার ব্যবস্থা নিলে এই ভোগান্তি হতো না।”

স্বপ্নছোঁয়া স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সভাপতি এ্যাড. মো. আদম সুফি বলেন, জনগণের করের টাকায় পরিচালিত এই সেবাকেন্দ্রগুলো যখন কার্যত অচল হয়ে পড়ে, তখন সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েন দরিদ্র শ্রেণির মানুষ। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নজরদারি ও কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমেই কেবল ঘুরে দাঁড়াতে পারে এই স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা।

এ বিষয়ে ক্লিনিকের দায়িত্বে থাকা কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) মমতাজ বেগম মুঠোফোনে বলেন, “আমি নিয়মিত যাই। কিন্তু গত সাড়ে তিন মাস ধরে কোনো ওষুধ নেই। আজ গিয়েছিলাম শুধু স্বাক্ষর করে চলে এসেছি। এখন আমি ঠেকড়পাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকে আছি।”

তবে তাৎক্ষণিকভাবে ঠেকড়পাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকে গেলে তাঁকে পাওয়া যায়নি। সেখানে দায়িত্বে থাকা সুবর্ণা আফরোজ বলেন, “মমতাজ বেগম আজ এখানে আসেননি। গতকাল এসেছিলেন। আজ তাঁর আসার কথা নয়।”

তিনি আরও বলেন, “আমি সর্বশেষ ২০২৪ সালের ২৭ নভেম্বর ঔষধ পেয়েছি। বর্তমানে আমার কাছে মাত্র তিন-চার ধরনের ওষুধ রয়েছে, তাও অতি স্বল্প পরিমাণে। এভাবে সেবাপ্রত্যাশীদের চাহিদা পূরণ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে ঔষধ সরবরাহ নিশ্চিত করার জোর দাবি জানাচ্ছি, যাতে প্রতিটি রোগীকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা সঠিকভাবে দেওয়া সম্ভব হয়।”

এ বিষয়ে পঞ্চগড় সদর উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আফরোজা বেগম বলেন, “জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের পর থেকে ঔষধ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। তাই ক্লিনিকগুলোতে ওষুধ নেই। ক্লিনিক তালাবদ্ধ থাকছে কেন, সে বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

Facebook Comments Box

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here