Home দিনাজপুর দিনাজপুরে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানসহ ২১ জনের নামে জামায়াত নেতার মামলা

দিনাজপুরে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানসহ ২১ জনের নামে জামায়াত নেতার মামলা

দিনাজপুরে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানসহ ২১ জনের নামে জামায়াত নেতার মামলা

মাসুদ রানা, খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধি:
দিনাজপুরের খানসামা উপজেলায় এক যুগ আগের একটি পুরনো ঘটনার রেশ ধরে আবারও সরগরম হয়ে উঠেছে স্থানীয় রাজনীতি। সময়ের পেছনে ফিরে দেখা যায় ২০১৪ সালের জানুয়ারি। জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনের পর বিএনপি-জামায়াত জোট যখন হরতাল-অবরোধের মতো চরম রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ব্যস্ত, তখন দেশের নানা স্থানে বিরোধীদের বিরুদ্ধে শুরু হয় ধরপাকড়, দমন-পীড়ন এবং দাঙ্গা-সংঘর্ষ। সেই উত্তাল সময়েই ঘটে যায় খানসামার একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা—যেটি দীর্ঘদিন ধামাচাপা পড়ে থাকলেও এবার তা আবার সামনে এসেছে একটি নতুন মামলার মাধ্যমে।

সাবেক ছাত্রশিবির নেতা ও বর্তমান জামায়াতে ইসলামীর কর্মী ফারুক ইসলাম সম্প্রতি খানসামা থানায় একটি মামলা করেছেন, যেখানে তিনি দাবি করেছেন, ২০১৪ সালের ১৫ জানুয়ারি রাতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাঁর বাড়িতে হামলা চালান। অভিযোগে বলা হয়, চাঁদার এক লাখ টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় তাঁকে মারধর করা হয়, সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিতে বাধ্য করা হয়, এবং তাঁর ঘরবাড়ি লুটপাট করে প্রায় সাত লাখ টাকার মালামাল নিয়ে যায় হামলাকারীরা। এসব কর্মকাণ্ড ঘটে থানার তৎকালীন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতেই। শুধু তাই নয়, তিনি অভিযোগ করেন যে, তাঁকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয় এবং থানার মধ্যেই আওয়ামী লীগ নেতা মোকছেদার রহমান তাঁকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন।

মামলার এজাহারে ফারুক ইসলাম উল্লেখ করেন, ওই রাতেই তাঁর মতো আরও অন্তত ছয়জন জামায়াত কর্মীর বাড়িতে একই রকম হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। তাদের মালামাল ও সম্পদের ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৩০ লাখ টাকা। এই ঘটনায় নাম উঠে এসেছে জামায়াত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের—মাইজার রহমান, জিকরুল হক, রায়হান, আব্দুল্লাহ আল কাফি, মাওলানা আনিছুর রহমান এবং মজিবর রহমানের।

ঘটনার দীর্ঘ ১১ বছর পর মামলা দায়েরের বিষয়ে জানতে চাইলে বাদী ফারুক ইসলাম বলেন, “স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ন্যায়বিচার চাওয়াটাই ছিল অসম্ভব। ভয়, হুমকি আর নিপীড়নের মধ্যে থাকতে হতো আমাদের। এখন সময় কিছুটা বদলেছে বলেই সাহস করে অভিযোগ করেছি। আমি ন্যায়বিচার চাই।”

এজাহারে সরাসরি অভিযুক্ত করা হয়েছে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এবং বর্তমান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সফিউল আযম চৌধুরী লায়নকে। তাঁর সঙ্গে আরও ২০ জনের নাম উঠে এসেছে, যাঁরা বিভিন্ন সময়ে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের পদে ছিলেন। এ ছাড়া মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ৪০ থেকে ৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন খানসামা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নজমূল হক। তিনি জানান, “লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা নিয়মিত মামলা রুজু করেছি। তদন্ত শুরু হয়েছে, দোষীদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।”

Facebook Comments Box

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here