এনামুল মবিন (সবুজ), প্রতিনিধি দিনাজপুরঃ
দিনাজপু্র চিরিরবন্দরে অপরিকল্পিতভাবে সাঁইতাড়া ইউনিয়নের জগনাথপুর গ্রামের চিরি নদীর ওপর নির্মিত স্লুইচ গেটটি দীর্ঘ এক যুগ ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকায় কৃষকসহ কারো কাজেই আসছে না কোটি টাকার স্লুইচ গেটটি। দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত থাকার কারণে চুরি হয়ে গেছে স্লুইচ গেটের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো নজরদারি নেই স্লুইচ গেটটির প্রতি। এই স্লুইচ গেটটি কৃষকসহ কারো কোনো কাজেই আসছে না। এটি অকেজো হওয়ায় কৃষিপণ্য নিয়ে নদী পারাপারে ভোগান্তিতে পড়েছেন কৃষকেরা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কারো কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। কত সালে এটি তৈরি করা হয়েছে সংশ্লিষ্টরা সঠিকভাবে বলতে পারেননি।
স্থানীয় ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিগত ২০১০ সালের দিকে প্রায় ১ কোটি টাকা ব্যয়ে স্লুইচ গেটটি নির্মাণ করা হয়েছিল। নির্মাণ পরবর্তী বর্ষা মৌসুমে নদীর পানির স্রোতের তোড়ে নদীর পশ্চিম পাশের মাটি সরে যায়। ফলে স্লুইচ গেটটির অবস্থান বর্তমানে নদীর মাঝখানে। এরপর থেকে স্লুইচ গেটটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, চিরি নদীতে কৃষকের উন্নয়নে ও সেচ সুবিধা বৃদ্ধি করার জন্য শুষ্ক মৌসুমের পানি আটকে আলু, ভুট্টা, রসুন, সরিষা ও বোরো ক্ষেতে স্বল্প খরচে পানি দেয়ার জন্য একটি স্লুইচ গেট ছিল। সেটি দিয়েই কৃষকরা উপকৃতও হতো। ওই সময় কৃষকের ভোগান্তি দূর করতে এলজিইডি চিরি নদীতে একটি অপরিকল্পিত স্লুইচ গেট নির্মাণ করে। এই স্লুইচ গেট নির্মাণকাজ শেষে শুধু সংযোগ সড়কের দুই পাশে মাটি দিয়ে ভরাট করে দেয়। পরবর্তীতে বর্ষা মৌসুমে নদীর পানি বেশি হলে সংযোগ সড়কের পশ্চিম পাশের মাটি সরে চলে যায়। ফলে পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে স্লুইচ গেটটি।
স্থানীয় কৃষক ওনিল চন্দ্র রায় বলেন, কৃষকদের ক্ষেতে পানি সেচ দেয়ার জন্য সরকারি প্রকল্পে স্লুইচ গেট নির্মাণ করা হয়। এটি নদীর মাঝখানে ছোট করে তৈরি করা হয়। যা ১০-১২ বছর ধরে এটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। অনেক যন্ত্রপাতি খোয়া গেছে। সংযোগ সড়ক ভেঙ্গে যাওয়ায় নদীর অপর প্রান্ত থেকে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য আনানেয়া করতে পারছেন না। এটি এখন কৃষকের কোনো উপকারেই আসছে না। কৃষক অতুল চন্দ্র রায় বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এটি কর্তৃপক্ষের নজরদারির বাইরে রয়েছে। স্লুইচ গেটটি অপরিকল্পিতভাবে ছোট করে নির্মাণ করার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আমরা চাই এটি সঠিক পরিকল্পনা ও মেরামত করে আবার চালু করা হোক।
স্লুইস গেটটি নির্মাণের দায়িত্বে থাকা চিরিরবন্দর উপজেলা সাবস্টেশন ইঞ্জিনিয়ার নুরুল ইসলাম বলেন, আমার সঠিক মনে নেই কত সালে এটি তৈরি করা হয়েছে। স্লুইস গেটটি সম্ভবত ১০ সালের দিকে ১ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে তৈরি করা হয়েছিল। পরর্বতী সময়ে সেটি আর ব্যবহার করা সম্ভব হয়নি। এখন এতদিন পর এটি নিয়ে লেখালেখি করে কি করবেন। স্লুইস গেটটি এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।
উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)র নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদার রহমান জানান, সাঁইতাড়া ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামে চিরি নদীতে দীর্ঘদিন পূর্বে স্লুইচ গেটটি তৈরি করা হয়েছে। স্লুইচ গেটটি খুব ছোট। নদী বড় হওয়ার কারণে সেখানে বর্ষা মৌসুমে পানি আটকে থাকে না। নদীর পাড় ভেঙ্গে পানি চলে আসে। তিনি আরও জানান, ওই স্লুইচ গেটের পশ্চিম পাশে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাবারড্যামটি অবস্থিত। রাবারড্যাম এলাকাটি নীচু হওয়ায় স্লুইচ গেটে পানি আটকানোর উপায় নেই। এটি বর্তমানে অকার্যকর। তবে জনস্বার্থে চলাচলের জন্য স্লুইচ গেটের ব্রিজটি সংস্কার করা হবে।