আনোয়ার হোসেন, গাইবান্ধা প্রতিনিধিঃ
কী-ইবা ছিল আমাদের কৃষ্ণর মোহন বাঁশির সুরে, যা শুনে সমাজ-সংসার ভুলে ছুটে আসতেন রাধা কুঞ্জবনে, ভালো-মন্দ, বর্তমান-অতীত বেমালুম ভুলে! কী সেই আকর্ষণ? কী এর নাম? প্রেম? ভালোবাসা? নাকি মোহ? কেমন অন্ধ এই আকর্ষণ যে কবি বলেন, ‘সম্মুখে তুলে ধর বিষপাত্র, নিষ্পলক দ্বিধাহীন উজাড় করে দেব।’ এমনকি রবীন্দ্রনাথও যেখানে বলেন, ‘ ন্যায়-অন্যায় জানিনে, জানি শুধু তোমারে জানি।’ কিন্তু কত দিন? কত দিন টিকে থাকে এ আকর্ষণের তীব্রতা? কতকাল বেঁচে থাকে এ যুক্তিহীন অন্ধ আবেগ? তবে কি এমন আবেগে পড়ে ছিলেন চম্পা আক্তার? শেষমেশ ভালোবাসার মানুষটিকে কাছে না পাওয়ার বেদনায় কি তার আত্মহত্যা? এমন প্রশ্ন এলাকার সচেতন মহলের। ঘটনাটি ঘটেছে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তালুক সর্বানন্দ গ্রামে। চম্পা আক্তার ওই গ্রামের বাদশা মিয়ার মেয়ে এবং খাজেমুল ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
চম্পার পরিবারের অভিযোগ, উপজেলার বামনজল গ্রামের হাছেন আলীর ছেলে শাকিল মিয়া(২০) এর সাথে চম্পা আক্তারের ছিল প্রেমের সম্পর্ক। এ সুযোগে কয়েক বছর ধরে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে চম্পার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেন শাকিল। সম্প্রতি তারা দু’জন ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে আসেন। তাদের সম্পর্কের বিষয়টি শাকিলের পরিবার জানতো। বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করা হলে চম্পাকে বাড়ির বউ করতে রাজি হয়নি শাকিলের পরিবার। একপর্যায়ে বিয়ের জন্য বললে শাকিল বিয়েতেও রাজি না হওয়ায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিল চম্পা। তাই মান-অভিমান আর মোনের ক্ষোভে গত ১৫ মে পরিবারের অজান্তে চম্পা আক্তার কীটনাশক পান করে অসুস্থ হন। পরে তাকে উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে দীর্ঘ ৩১ দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে গত সোমবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় চম্পা হাসপাতালে মারা যান। ঘটে তার প্রেমের পরিসমাপ্তি। এ ঘটনায় থানায় মামলার আশ্রয় নেন চম্পার পরিবার।
অনেকেই বলছেন, শাকিলের সাথে চম্পার ভালোবাসা যদি সত্য হয়, তবে কেন শেষমেশ সম্পাকে আত্মহত্যা করতে হলো? একদিন যে নারীর জন্য হাতের মুঠোয় নিতে পারতেন প্রাণখানি, তাকেই কেন ঘৃণাভরে করা হলো প্রত্যাখ্যান? যার হাতে রেখেছিল হাত, হাত ধরে পার করতেছিল তারুণ্য-যৌবন, সেই প্রেমের পরিণতি কেন শেষাবধি আত্মহত্যা। এ আবার কোন রহস্য। কেনইবা এ মায়া মিলায়, উড়ে যায় প্রেম কপূরের মতো।
তবে কি প্রেম যে ক্ষণবিলাস, শাশ্বত প্রেমের সন্ধান যে নিষ্ফল-তা-ই মহাসত্য বলে জানব সুধীন্দ্রনাথের মতো, ‘অসম্ভব প্রিয়তমে, অসম্ভব শাশ্বত স্মরণ: অসঙ্গত চিরপ্রেম; সংবরণ অসাধ্য, অন্যায়।’