মোঃ আসতারুল আলম, দিনাজপুর প্রতিনিধিঃ
ঈদুল আজহার ছুটি শেষে কর্মস্থলে ফেরার জন্য দিনাজপুর থেকে ঢাকাগামী ট্রেনে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে। ট্রেনের ভেতরে বসার জায়গা না পেয়ে প্রচণ্ড রোদ উপেক্ষা করে শত শত কর্মজীবী মানুষ ট্রেনের ছাদে চড়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হচ্ছেন।
শনিবার ১৪ জুন ২০২৫ এবং এর আগের দিন শুক্রবার রাত থেকেই দিনাজপুর রেলস্টেশনে এমন চিত্র দেখা যাচ্ছে। ট্রেনের সিট সংখ্যা সীমিত থাকায় অনেকে স্ট্যান্ডিং টিকিট কেটেও গন্তব্যে যাত্রা করতে পারছেন না। কেউ কেউ আবার বগির গরম ও ভিড় সইতে না পেরে বাধ্য হয়ে উঠে যাচ্ছেন ছাদে।
দিনাজপুর স্টেশনে ট্রেনের ছাদে উঠে রওনা হওয়া আতাউর রহমান বলেন, “টিকিট কেটেও ট্রেনের ভেতরে যাত্রীদের গরম ও ভিড়ে টিকে থাকা সম্ভব হয়নি, তাই ছাদেই উঠেছি।”
পঞ্চগড় থেকে ঢাকাগামী পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ট্রেনের কয়েকজন যাত্রী জানান, “ছাদে প্রচণ্ড রোদে আমরা সিদ্ধ হয়ে যাচ্ছি। আমাদেরকে ১০ থেকে ১১ ঘণ্টা ছাদে থাকতে হবে। কিন্তু আগামীকাল কর্মস্থলে যোগ দিতেই হবে। আল্লাহর উপর ভরসা করে রওনা হয়েছি।”
ট্রেনের শোভন চেয়ার শ্রেণির ফুয়াদ দম্পতি জানান, তারা তাদের ৪বছর শিশুকে নিয়ে নিজ কর্মস্থলে (ঢাকা) যাচ্ছেন। এসি বগির টিকিট না পেয়ে, তারা বাধ্য হয়ে শোভন চেয়ারের টিকিট কাটেন। বর্তমানে তারা তাদের বাচ্চাকে নিয়ে সমস্যায় পড়েছেন।এত যাত্রী চাপ, বগির ভিতর তীব্র গরম৷
গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টায় একতা এক্সপ্রেস ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে শাহিনুর ইসলাম ও শরিফুল ইসলাম নামের দুই ব্যক্তি গুরুতর আহত হয়ে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। একতা এক্সপ্রেসে গোলাম রাব্বি নামে শিক্ষার্থী জানান, “স্ট্যান্ডিং টিকিট কেটেও আমরা যেতে পারি নাই৷ এতরাতে স্টেশনে অবস্থান করা ছাড়া, আর কোনো উপায় নাই। আমি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে বলতে চাই, যদি জায়গাই না থাকে তাহলে স্ট্যান্ডিং টিকিট কেন দেওয়া হচ্ছে?”
দিনাজপুর রেলওয়ে স্টেশনের কর্তব্যরত স্টেশন মাস্টার জানান, ঈদের পরবর্তী থেকে সকল পঞ্চগড় থেকে ঢাকাগামী ট্রেনে লোড ১৭/৩৪ করা হয়েছে। তাও যাত্রী সংকুলান হচ্ছে না।
এদিকে, দিনাজপুর রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন সুপার এ বি এম জিয়াউর রহমান বলেন, “সরকার দীর্ঘ ছুটি দিয়েছিল যেন যাত্রীরা ধীরে সুস্থভাবে ফিরতে পারেন। কিন্তু শেষের দিকেই সবাই ভিড় করায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। অতিরিক্ত বগি দিয়েও চাপ সামলানো যাচ্ছে না। এখন ট্রেনের ছাদেও যাত্রী উঠছে, এটা ভাবতেই অবাক লাগছে। ট্রেনে আসনের দ্বিগুণ যাত্রী রয়েছে।”
তিনি আরও জানান, যাত্রীদের চাপ, গরম এবং নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে ট্রেন ছাড়তেও দেরি হচ্ছে। বিশেষ করে এসি বগিতে টিকিটবিহীন যাত্রীদের তাড়াতে গিয়ে হট্টগোলের সৃষ্টি হচ্ছে।