ইকবাল বাহার, পঞ্চগড় প্রতিনিধিঃ
গ্রামীণ সড়ক সংস্কারের লক্ষ্যে মাটি ভরাটের কাজ শুরু করলে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না পেলে প্রভাব দেখিয়ে সৃষ্টি করেন কাজে বিঘ্নতা- এমন অভিযোগ ওয়ার্ড বিএনপির দুই নেতার বিরুদ্ধে।
বিষয়টিকে কেন্দ্র করে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এবং খোদ বিএনপির এক সিনিয়র নেতার সঙ্গেও অসদাচরণসহ উচ্চবাচ্যেরও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ঘটনাটি পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের গইচপাড়া বাজার সংলগ্ন এলাকার। গত সোমবারের (৫ মে) ঘটনা এটি। অভিযুক্তরা হলেন- এই ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি রব্বানী এবং সাধারণ সম্পাদক আসমাউল।
জানা গেছে, গ্রামীন অবকাঠামো সংস্কার (কাবিটা) প্রকল্পের আওতায় ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বনগ্রামের বাসিন্দা বাবুলের বাড়ি থেকে নাককাটিপাড়া গ্রামের নওশেরের বাড়ি পর্যন্ত কাঁচা সড়ক সংস্কার এবং একটি ইউড্রেন নির্মাণের জন্য দুই লাখ ৩২ হাজার টাকা বরাদ্দ এসেছে। প্রকল্পটির সভাপতি করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শফিউল আলম শফিককে। তবে কাজ শুরু করতে গিয়ে জটিলতায় পড়েন তিনি। কাজে স্থানীয়দের উস্কে দেয়াসহ বিঘ্নতা সৃষ্টি করেন ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি রব্বানী এবং সাধারণ সম্পাদক আসমাউল। বিষয়টি সুরাহায় এগিয়ে গেলে হাড়িভাসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইয়েদ নূর-ই-আলমকে আঙ্গুল তুলে কথা বলেন তারা। করেন উচ্চবাচ্যও। একই বিষয়ে উপজেলা বিএনপির যুগ্ন আহ্বায়ক আব্দুল মান্নানকেও আঙ্গুল তুলে উচ্চবাচ্য করেন। এমন পৃথক দুইটি ভিডিও ক্লিপ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।
ইউপি সদস্য শফিউল আলম শফিক বলেন, কাজে বাধা না দেয়ার শর্তে আমার কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন রব্বানী এবং আসমাউল। আমি তাদেরকে টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছি। বলেছি, প্ল্যান অনুযায়ী কাজ করবো, আমার কাজ বুঝিয়ে নিবে উপজেলা প্রকল্প অফিস। কাজে ভুল হলে প্রয়োজনে আবার কাজ করবো। পরে তারা অহেতুক কাজের ভুল খুঁজে, প্রভাব দেখাতে চায়। চেয়ারম্যান মহোদয় এসবের কারণ জানতে চাইলে তার সঙ্গেও অসদাচরণ করে।
তিনি আরও বলেন, একই দিন রাতে হাড়িভাসা বাজার আমি বিষয়টি নিয়ে বিএনপির প্রবীণ নেতা আব্দুল মান্নানের সঙ্গে কথা বলছিলাম। এমন সময় রব্বানী এবং আসমাউল এসে হট্টগোল শুরু করেন। এক পর্যায়ে বিএনপির এই নেতার সঙ্গেও বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে আঙ্গুল তুলে উচ্চবাচ্য করেন।
বিএনপি নেতা আব্দুল মান্নান ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বর্তমান উপজেলা বিএনপির কমিটিতে রয়েছেন। তার বাড়িও হাড়িভাসা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে।
তিনি বলেন, এগুলো বাড়াবাড়ি। বিএনপি এখনো ক্ষমতায় আসেনি, সাংগঠনিকভাবে এসব ব্যাপারে বারবার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তারপরও এরা দলীয় পরিচয়ে এসব কর্মকাণ্ড করে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। আর প্রকল্পের কাজ বুঝিয়ে নেয়ার দায়িত্ব কর্তৃপক্ষের, সেখানে যাওয়ার যৌক্তিকতা নেই। বিষয়টি নিয়ে তাদের আচরণ নিন্দনীয়।
এ বিষয়ে হাড়িভাসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইয়েদ নূর-ই-আলম বলেন, কাজ শেষ না হতেই ভুল খোঁজা হয় কিভাবে? প্রকল্পের সভাপতি কাজ সঠিকভাবে না করলে, সে দায়ভার তার। কাজ বুঝিয়ে নিবে প্রকল্প অফিস। প্ল্যান মোতাবেক কাজ না হলে পূণরায় কাজ করতে হবে। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে দলীয় প্রভাব দেখানো মানে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করা।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেন ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি রব্বানী। মুঠোফোনে তিনি বলেন, কাজে বাধা দেয়ার কোন ঘটনা ঘটেনি। মাটি বহনের ট্রলি নিয়ে ঝামেলা হয়েছিলো, চেয়ারম্যান এসে সমাধান করে দিয়েছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান বলেন, কাজে বাধা দেয়ার কোন অভিযোগ পাইনি, এখন পর্যন্ত কেউ অবগতও করেনি। আমরা প্ল্যান মোতাবেক কাজ দেখবো। এ ক্ষেত্রে বাধার সম্মুখীন হলে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান দেখবেন, তারপরও কোন সমস্যা থাকলে আমাদেরকে জানালে আমরা দেখবো।