আনোয়ার হোসেন, গাইবান্ধা প্রতিনিধিঃ
উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন চরে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ নদী ভাঙন। বিশেষ করে কাপাসিয়া ইউনিয়নের লালচামার গ্রামে নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে শতাধিক ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন রোধে ওই এলাকায় মাত্র ৩৯ মিটার জুড়ে জিও ব্যাগ ও জিও টিউব ফেললেও বাস্তবে ভাঙন চলছে প্রায় ২০০ মিটার জুড়ে। ফলে স্থানীয়রা বলছেন, এ ধরনের অল্প পরিসরে জিও ব্যাগ ফেলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব নয়।
কাপাসিয়া ইউনিয়নের ভাটি কাপাসিয়া লালচামার গ্রামের ইউপি সদস্য মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, “তীব্র ভাঙনের মুখে ২০০ মিটার এলাকা জুড়ে নদী গিলে খাচ্ছে বসতবাড়ি ও ফসলি জমি। অথচ পানি উন্নয়ন বোর্ড মাত্র ৩৯ মিটার এলাকায় কাজ করছে। এটা যথেষ্ট নয়।”
ইতোমধ্যে ইউনিয়নের ১০০টির বেশি পরিবারের ঘরবাড়ি নদীগর্ভে চলে গেছে এবং আরো ২০০টি পরিবার ও কয়েক হাজার একর জমি ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। তীব্র ভাঙনে ইতোমধ্যে স্কুল, মসজিদসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাও হুমকির মুখে।
স্থানীয় বাসিন্দা সোলেমান মিয়া বলেন, “প্রতিবছর ভাঙনের কারণে একজন চরবাসীকে মৌসুমে অন্তত চারবার ঘরবাড়ি সরাতে হয়। এত কষ্ট আর কতদিন সহ্য করব আমরা?”
হরিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মোজাহারুল ইসলাম জানান, “নদী খনন ও স্থায়ীভাবে ভাঙন রোধে আমরা বহুবার দাবি জানিয়েছি। কিন্তু সরকার এখনও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। কেবল ভাঙনের সময় কিছু জিও ব্যাগ ফেলে দায় সারে।”
স্থানীয় চেয়ারম্যান মো. মঞ্জু মিয়া বলেন, “আমার ইউনিয়নের উত্তর লালচামার গ্রামে তিস্তার তীব্র ভাঙনে শতাধিক ঘরবাড়ি ও শত একরের বেশি ফসলি জমি বিলীন হয়েছে। লোকজন বাধ্য হয়ে ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছে।”
ভাঙনের কারণে চরাঞ্চলের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এখন নৌকা ছাড়া এক চর থেকে অন্য চরে যাওয়া সম্ভব নয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজ কুমার বিশ্বাস বলেন, “ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে শুধু শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগ ফেলছে।”
এদিকে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক বলেন, “আমরা জিও ব্যাগ ও জিও টিউব ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করছি। তবে স্থায়ী সমাধান সরকারের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্ত ছাড়া সম্ভব নয়।”
স্থানীয়দের অভিযোগ, স্বাধীনতার পর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও নদীভাঙন রোধে কোনো স্থায়ী উদ্যোগ নেয়নি সরকার। প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে সাময়িক ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও ভাঙন ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না। এতে চরাঞ্চলের মানুষ দারুণ অনিশ্চয়তা আর আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।