ইকবাল বাহার, পঞ্চগড় প্রতিনিধিঃ
ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে রাজকীয়ভাবে বিদায় নিলেন পঞ্চগড় জেলার অন্যতম প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিষ্ণু প্রসাদ (বিপি) সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. ছায়ফুল্লাহ। বৃহস্পতিবার (২৯ মে) বিকেলে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক ব্যতিক্রমধর্মী ও আবেগঘন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শেষ হলো তাঁর ৩৪ বছরের শিক্ষকতা জীবন।
বিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই বিদায় অনুষ্ঠান রূপ নেয় এক স্মরণীয় উৎসবে। লালগালিচা মাড়িয়ে ফুলের বৃষ্টি ভেদ করে এগিয়ে যান মো. ছায়ফুল্লাহ। এর পরেই ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে তিনি পঞ্চগড় শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করেন এবং শেষে নিজ বাড়ি কায়েতপাড়ায় পৌঁছান। এ সময় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা পেছনে পায়ে হেঁটে “শ্রদ্ধা পদযাত্রা”র মাধ্যমে প্রিয় শিক্ষককে বাড়ি পৌঁছে দেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মচারী, প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। সবার চোখেই ছিল শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও বিচ্ছেদের অশ্রু।
ছায়ফুল্লাহ ১৯৯১ সালের ২৫ মে দিনাজপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতা জীবন শুরু করেন। ১৯৯৪ সালের জুলাইয়ে পঞ্চগড় বিপি উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগ দেন এবং পরে ২০১২ সালের ৭ মে বদলি হয়ে যান পঞ্চগড় বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। এরপর ২০১৯ সালের ১৮ এপ্রিল তিনি বিপি উচ্চ বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব নেন।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন বলেন, “স্যারের মতো উদার, সহানুভূতিশীল ও প্রজ্ঞাবান শিক্ষক পাওয়া ভাগ্যের বিষয়। তিনি আমাদের শুধু পঠনপাঠনে নয়, মানবিকতাতেও নেতৃত্ব দিয়েছেন।”
বিদায় অনুষ্ঠানে আবেগঘন কণ্ঠে ছায়ফুল্লাহ বলেন, “৩৪ বছরের শিক্ষকতা শেষে আজ আমি অবসর নিচ্ছি। আমার ছাত্ররা আমাকে চোখের জলে বিদায় দিয়েছে—এটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। আমি শিক্ষক হতে পেরে গর্বিত। তারা আমাকে যেভাবে ভালোবেসেছে, তাতে বুঝেছি আমি সফল একজন শিক্ষক।”
তিনি আরও বলেন, “আমার সহকর্মীরা সবসময় পাশে ছিলেন, সহযোগিতা করেছেন। সবার কাছে কৃতজ্ঞ। অবসরের পর কৃষিকাজ ও পারিবারিক সময় দিয়েই সময় কাটাবো, তবে সুযোগ পেলে শিক্ষকতাকেই ভালোবেসে যাব।”
প্রিয় শিক্ষককে এমন বিদায়ের মাধ্যমে সম্মান জানানোর এ ব্যতিক্রমী আয়োজন পঞ্চগড়বাসীর কাছে হয়ে থাকবে চিরস্মরণীয়।
একজন নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষকের প্রতি এমন সম্মান প্রমাণ করে—ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও মূল্যায়নের চেয়ে বড় কিছু নেই একজন প্রকৃত শিক্ষকের জন্য।