আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
গাজায় ইসরায়েলি অবরোধের মুখে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে। অনাহারে মৃত্যুমুখে পড়েছে ২ লাখ ৯০ হাজার শিশু। তাদের মধ্যে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু ৩ হাজার ৫০০। গুরুতর অপুষ্টির শিকার আরও ৭০ হাজারের বেশি শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চিকিৎসাসেবায় বিপর্যয় দেখা দেওয়ায় তাদের জীবন এখন ভয়ানক সংকটে।
ফিলিস্তিনে খাদ্য প্রবেশে বাধা দেওয়ায় প্রতিদিন ১১ লাখ শিশুর ন্যূনতম পুষ্টির চাহিদা পূরণ হচ্ছে না। আন্তর্জাতিক আইনের তোয়াক্কা না করে অনাহারকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এর পরও বিশ্ব নীরব ভূমিকা পালন করছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
গাজায় বাস্তুচ্যুত বাসিন্দারা জানান, ইসরায়েল গাজাকে একটি পরীক্ষার ল্যাবে পরিণত করেছে। শুধু বোমাই ফেলছে না, খাবার ও পানি সংকট সৃষ্টি করে মানুষের দুর্ভোগ উপভোগ করছে। এক বাসিন্দা জানান, টানা ৬২ দিন ধরে আমরা গাজায় কোনো খাদ্য, পানি কিংবা ওষুধ পাচ্ছি না। ইসরায়েল জোর করে বাসিন্দাদের দুর্ভিক্ষের মধ্যে ফেলে মারতে চাচ্ছে। অবরোধের কবলে পড়ে অন্তত ৩০ হাজার ত্রাণবাহী ট্রাক সীমান্তে আটকে আছে। বাস্তুচ্যুত শিবিরে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, গতকাল থেকে তাদের রান্নাবান্না একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে। সবাইকে না খেয়ে রাত কাটাতে হচ্ছে। অনেক রান্নাঘরে আর আগুন জ্বলছে না।
এদিকে গাজায় একদিকে চলছে অনাহার, অন্যদিকে স্বাস্থ্যসেবায় বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করা সার্জন ডা. মোহাম্মদ তাহিরের অভিযোগ, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় চুপ থাকার কারণে ইসরায়েলি অবরোধ দীর্ঘ হচ্ছে। নেতানিয়াহু তাঁর রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করার জন্য যুদ্ধকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছেন।
খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালের পরিস্থিতি এখন আগের চেয়ে ভয়াবহ। আহত শিশু, নারী, পুরুষ মেঝেতে চিকিৎসার জন্য চিৎকার করলেও মিলছে না সেবা। ওষুধসহ চিকিৎসা সরঞ্জাম নেই। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তিন দিনের মধ্যে হাসপাতালগুলোতে জ্বালানি ফুরিয়ে যাবে। অবরোধে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। নতুন জ্বালানি না পেলে হাসপাতালগুলো বন্ধ হয়ে যাবে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক এনজিও অক্সফাম ইন্টারন্যাশনাল অভিযোগ করেছে, গাজায় শিশুদের অনাহারের ‘সহযোগী’ গোটা বিশ্ব। অক্সফামের গাজা উপত্যকার খাদ্য নিরাপত্তা প্রধান মাহমুদ আলসাক্কা বলেন, ত্রাণবাহী অনেক গাড়ি মিসর ও জর্ডানে আটকে আছে। এই পরিস্থিতির জন্য বিশ্বনেতারা দায় এড়াতে পারেন না।
অবরোধের মধ্যেই গাজায় ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত রয়েছে। গত সপ্তাহে উপত্যকায় শতাধিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে স্বীকার করেছে দখলদার বাহিনী। গাজায় স্থল অভিযানে তারা মাটির নিচে হামাসের অবস্থান শনাক্ত করে বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে। দক্ষিণ গাজা, রাফাহ ও মোরাগ করিডোরে অভিযান অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। পাশাপাশি চলছে বিমান হামলাও।
গত ২৪ ঘণ্টায় গাজায় হামলায় অন্তত ৪০ ফিলিস্তিনি নিহত ও ২৫ জন আহত হয়েছেন। শনিবার রাতে বোমা হামলায় খান ইউনিসে ১১ জনকে হত্যা করেছে দখলদার বাহিনী। গত ১৮ মাস থেকে গাজায় ইসরায়েলি যুদ্ধে ৫২ হাজার ৫৩৫ জন নিহত ও ১ লাখ ১৮ হাজার ৪৯১ জন আহত হয়েছে।
এদিকে ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধ সম্প্রসারণ করায় হামাসের হাতে বন্দিদের স্বজনরা প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিহুর বিরুদ্ধে প্রতিদিন বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছে। শনিবার রাতেও তেল আবিবের বাইরে বিক্ষোভ করে হাজার হাজার ইসরায়েলি।
মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেসেথ শিগগির ইসরায়েল সফর করছেন। আগামী ১৩ থেকে ১৬ মে মধ্যপ্রাচ্য সফরে তিনি সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতেও যাবেন। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লিভিট বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।