Tuesday, June 24, 2025
Homeঅর্থনীতিবদলির আদেশ বাতিল ও এনবিআর চেয়ারম্যানকে অপসারণে লাগাতার কর্মসূচি ঘোষণা

বদলির আদেশ বাতিল ও এনবিআর চেয়ারম্যানকে অপসারণে লাগাতার কর্মসূচি ঘোষণা

- Advertisement -

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

অনলাইন ডেস্কঃ

প্রতিহিংসামূলক সব বদলির আদেশ বাতিল ও এনবিআরের বর্তমান চেয়ারম্যানকে অপসারণ না করা হলে ২৮ জুন (শনিবার) থেকে কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তরে লাগাতার কমপ্লিট শাটডাউনের ঘোষণা দিয়েছেন এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। একইসঙ্গে মঙ্গলবার (২৪ জুন) থেকে লাগাতার কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

সোমবার (২৩ জুন) আগারগাঁওয়ের এনবিআর ভবনে এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এমন ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া রাজস্ব অধ্যাদেশে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনতে এনবিআর কর্তৃক গঠিত রাজস্ব অধ্যাদেশ সংস্কার বিষয়ক কমিটি বাতিল করে আজকের মধ্যে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের যথাযথ প্রতিনিধিত্ব অন্তর্ভুক্ত করে এবং বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ এনবিআর সদস্যদের বাদ দিয়ে নতুন করে কমিটি গঠনের দাবি করা হয়েছে সংবাদ সম্মেলনে।

এসময় উপস্থিত ছিলেন এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সভাপতি অতিরিক্ত কমিশনার হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার ও মহাসচিব অতিরিক্ত কর কমিশনার সেহেলা সিদ্দিকা।

সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা করা কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে– মঙ্গলবার (২৪ জুন) আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা ও রপ্তানি ব্যতীত কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তরে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ঢাকার কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাজস্ব ভবনে অবস্থান কর্মসূচি ও কলম বিরতি এবং ঢাকার বাইরে স্ব স্ব দপ্তরে অবস্থান কর্মসূচি, কলম বিরতি এবং চেয়ারম্যান ও তার দোসরদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ।

জারি করা প্রতিহিংসা ও নিপীড়নমূলক সব বদলি আদেশ বাতিল না হলে এবং নিপীড়নমূলক নতুন কোনো বদলির আদেশ হলে ২৫ ও ২৬ জুন দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা ও রপ্তানি ব্যতীত কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তরে কলম বিরতি, অবস্থান কর্মসূচি এবং চেয়ারম্যান ও তার দোসরদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ।
২৭ জুনের মধ্যে বদলি আদেশ বাতিল না করা হলে এবং দেশ ও রাজস্ব ব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টায় লিপ্ত এনবিআরের বর্তমান চেয়ারম্যানকে অপসারণ না করা হলে ২৮ জুন থেকে আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা ব্যতীত কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তরে লাগাতার কমপ্লিট শাটডাউন চলবে।

এ ছাড়া বিচিত্র সব বাধা ও নানাবিধ অসহযোগিতার কারণে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ কর্তৃক পরিকল্পিত ‘কেমন এনবিআর চাই’ শীর্ষক সেমিনার আয়োজনের কোনো সম্ভাবনা দেখতে না পাওয়ায় আগামী ৭ জুলাই প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে জনবান্ধব ও সেবাধর্মী এনবিআরের রূপরেখা (আইন সংক্রান্ত, প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো, আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চা, অটোমেশন, সার্ভিস ডেলিভারি, ইন্টেগ্রিটি, জবাবদিহিতা, চ্যালেঞ্জ ও সীমাবদ্ধতা প্রভৃতি বিষয়) দেশবাসীর সামনে তুলে ধরা হবে বলেও সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এনবিআরের বর্তমান চেয়ারম্যানকে দায়িত্বে রেখে রাজস্ব সংস্কার সম্ভব নয়, কারণ তিনি এটি বাস্তবায়ন হতে দেবেন না। আপনারা সবাই জানেন, পলাতক আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী যে ৪৪ জন আমলার তালিকা করা হয়েছে, তার মধ্যে তিনি ৩ নম্বরে রয়েছেন। তিনিই এনবিআর বিলুপ্তি প্রচেষ্টার মূলহোতা, তিনি নিপীড়নমূলক বদলিসহ বিভিন্ন ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে রাজস্ব ব্যবস্থা সংস্কারের পরিবেশ বিনষ্টকারী ও সরকারকে বিভিন্ন ভুল তথ্য দিয়ে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব সৃষ্টির অপচেষ্টাকারী।

এনবিআর নেতারা বলেন, এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের নিয়ে তাদের পূর্বঘোষিত ‘কেমন এনবিআর চাই’ শীর্ষক সেমিনার আয়োজনের লক্ষ্যে অফিস সময়ের পর প্রস্তুতিমূলক সভা আয়োজনের জন্য কক্ষ বরাদ্দ চেয়ে প্রথমে মৌখিকভাবে ও পরে লিখিত পত্র প্রদানের পরও কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। অধ্যাদেশ সংশোধনে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদকে তাদের মতামত প্রস্তুতের লক্ষ্যে কোনো ধরনের সভা করার জন্যও কক্ষ বরাদ্দ দিতে নিষেধ করা হয়েছে। এমনকি কক্ষ বরাদ্দ চেয়ে দেওয়া চিঠি তিনি ছুড়ে ফেলে দিয়েছেন। ফলে গত ২, ১৯ ও ২১ জুন রাজস্ব ভবনের নিচ তলার মেঝেতে সভা করতে হয়েছে। অন্যদিকে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকা সত্ত্বেও রাজস্ব ভবন ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করার ব্যবস্থা করে এক ধরনের উসকানিমূলক পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছে।

এর আগে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সকাল থেকে এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা হাজির হন। তাদের হাতে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড দেখা গেছে। যেখানে দেখা গেছে– ‘গোলামী আইন বাতিল কর, করতে হবে’, ‘বদলির নামে প্রহসন মানি না, মানবো না’ কিংবা ‘বদলির নামে জুলুমবাজি বন্ধ করতে হবে’ ইত্যাদি।

গত রোববার এনবিআরের আয়কর বিভাগে উপকর কমিশনার পর্যায়ে পাঁচ কর্মকর্তার রদবদল নিয়ে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ দাবি করেছে আন্দোলন দমাতে এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। নেতারা বলছেন, সরকারি কর্মচারীদের ঢাকার বাইরে বা ভিন্ন জেলায় বদলি করলে যোগদানের জন্য ন্যূনতম পাঁচ কর্মদিবস সময় থাকলেও এনবিআরের সর্বশেষ আদেশে তা মানা হয়নি।

শনিবার (২১ জুন) সংবাদ সম্মেলনে সোমবার (২৩ জুন) ঢাকার সব দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এনবিআরে অবস্থান কর্মসূচি ও কলম বিরতি এবং অন্যান্য দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা স্ব স্ব দপ্তরে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি ও কলম বিরতি পালন করার কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছিল।

সরকার গত ১২ মে এনবিআরকে দুই ভাগ করার অধ্যাদেশ জারি করে। এর বিরোধিতা করে গত ২৬ মে পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি ও কলম বিরতির আন্দোলন করে এনবিআরের অধীন কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়কর বিভাগের কর্মকর্তারা। আর ২৫ মে রাতে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে অর্থ মন্ত্রণালয় জানায়, এনবিআর বিলুপ্ত নয়, বরং এ প্রতিষ্ঠানকে ‘স্বাধীন ও বিশেষায়িত’ বিভাগের মর্যাদায় উন্নীত করা হবে। এর ফলে ২৬ মে কলম বিরতির কর্মসূচি প্রত্যাহার করে এনবিআর। তবে এনবিআর চেয়ারম্যানকে অপসারণ ও চেয়ারম্যানকে অসহযোগিতা করার ঘোষণা দেয় এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ।

গত ২০ জুন এনবিআর কাঠামোগত সংস্কার কার্যক্রমে সমন্বয় সাধনের জন্য ছয় সদস্যের একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করে সরকার। এনবিআর সদস্য (কর, লিগ্যাল ও এনফোর্সমেন্ট) ব্যারিস্টার মুতাসিম বিল্লাহ ফারুকীকে এ কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে ও এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবি করে ২১ জুন বিকেলে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে ঐক্য পরিষদ।

 

Facebook Comments Box
spot_img
এ বিভাগের আরও খবর
- Advertisment -spot_img

সর্বাধিক পঠিত খবর