মোজো ডেস্কঃ
করোনাকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে মৃত্যুর যে সংখ্যা প্রকাশ করা হয়েছিল; প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি। এমন দাবি করেছেন আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) গবেষকরা। তাদের মতে, যারা হাসপাতালে আসেননি, যারা করোনার সব উপসর্গ নিয়ে ভুগেছেন তাদের মৃত্যু সরকারি পরিসংখ্যানে নেই। সীতাকুণ্ড এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় আলাদা দুটি গবেষণা করেন তারা। এছাড়াও চিকিৎসা ও জনস্বাস্থ্য সাময়িকী ল্যানসেটে উল্লেখ করা হয়, করোনাকালে ২০২০ ও ২০২১ সালে দেশে বাড়তি ৪ লাখ ১৩ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। এর কোনো তথ্যই লিপিবদ্ধ হয়নি।
২০২০ সালের ১৮ মার্চ। মহামারি করোনা ভাইরাসে প্রথম মৃত্যু দেখে দেশ। এরপর দিন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লাফিয়ে বাড়তে থাকে মৃত্যুর সংখ্যা। প্রতিনিয়ত চলতে থাকে মৃত্যুর সঙ্গে বেঁচে থাকার লড়াইও।
বছর পাঁচেক পরে এসে আবারও চোখ রাঙাচ্ছে করোনা। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর করোনায় দেশে মৃত্যু হয় ৪ জনের। সব মিলিয়ে ১৫ জুন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২৯ হাজার ৫০৩ জন।
এর আগে করোনায় মৃত্যু শূন্য ছিল ২০২৪ সাল। ২০২৩ সালে মারা যান ৩৭ জন এবং ২০২২ সালে মারা যান এক হাজার ৩৬৮ জন। করোনায় মোট মৃত্যু হওয়া বাকি ২৮ হাজার ৯৪ জনের মৃত্যু হয় ২০২০-২১ সালে।
করোনাকালীন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমন পরিসংখ্যান বাস্তবে ছিল ভিন্ন। সে সময়ে মৃত্যুর যে সংখ্যা বলা হয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি আইসিডিডিআরবি’র গবেষকদের। করোনার সময়ে মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় আলাদা দুটি গবেষণা হয়।
তাদের মতে, সরকারি হিসাবে আছে শুধু হাসপাতালে মৃত্যুর তথ্য। যারা হাসপাতালে আসেননি, যারা করোনার সব উপসর্গ নিয়ে ভুগেছেন তাদের মৃত্যুর তথ্য সরকারি পরিসংখ্যানে নেই। এছাড়া ২০২২ সালের ১০ মার্চ বাড়তি মৃত্যুর অনুমতি সংখ্যা প্রকাশ করে চিকিৎসা ও জনস্বাস্থ্য সাময়িকী ল্যানসেটে উল্লেখ করা হয়, করোনাকালে শুধু ২০২০ ও ২০২১ সালে বাংলাদেশে বাড়তি ৪ লাখ ১৩ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
আইসিডিডিআর’র বিজ্ঞানী আহমেদ এহসানুর রহমান বলেন , কোভিডের সময় বিশেষ করে ২০২০ সালে অনেক অতিরিক্ত মৃত্যু হয়েছে। যেগুলো প্রত্যক্ষভাবে কোভিডের জন্য, আবার একইসঙ্গে পরোক্ষভাবে কোভিডকালীন। অনেক ঘটনা এমন ঘটেছে, কেউ করোনায় ভুগছেন কিন্তু কোনো কারণে ডায়াগনোসিস করা হয়নি। তাই সেই তথ্য সরকারি নথিতে আসেনি।
বাস্তবের এমন চিত্র আর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান, তবে কি করোনায় মৃত্যুর তথ্য গোপন করেছিল তৎকালীন সরকার? এমন প্রশ্নে আইসিডিডিআরবি’র গবেষক বলছেন, অতীতে করোনাকালীন সব মৃত্যুর তথ্য সংরক্ষণ করা হয়নি। সরকার তথ্য গোপন করেছে কিনা জানি না। তবে সরকার সেসময় নিজেদের মতো করে রিপোর্ট করেছে।
এদিকে বর্তমানেও শুধু করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বিবেচনা না করে অন্যান্য মৃত্যুর তথ্যও পর্যালোচনা করার তাগিদ আহমেদ এহসানুর রহমানের।
করোনাকালে মৃত্যু নিয়ে সীতাকুণ্ডে করা গবেষণাটি ২০২৪ সালে জার্নাল অব গ্লোবাল হেলথ–এ প্রকাশিত হয়। আর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মৃত্যু নিয়ে গবেষণাটি প্রকাশ হয় চলতি বছর।