হাবিপ্রবি প্রতিনিধি:
দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) দশতলা বিশিষ্ট একমাত্র একাডেমিক ভবনটি আজ অব্যবস্থাপনা ও অযত্নের কারণে সম্ভাবনার পরিবর্তে ভার হয়ে দাঁড়িয়েছে। জানা গেছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনো বিভাগই সেখানে স্থানান্তরে আগ্রহ দেখাচ্ছে না।
২০১৮ সালের ২৭ মে, প্রায় শত কোটি টাকা ব্যয়ে এই ভবনের নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মু. আবুল কাসেম। পাঁচ বছর পর, ২০২৩ সালের ১৪ নভেম্বর, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি ভবনটি উদ্বোধন করেন। ভবনটির নামকরণ করা হয় “ড. কুদরত-ই-খুদা একাডেমিক ভবন”। ৪০ হাজার স্কয়ার মিটার জায়গাজুড়ে নির্মিত ভবনটির প্রতিটি তলা ৪ হাজার স্কয়ার মিটার আয়তনের।
ভবনটির মূল উদ্দেশ্য ছিল, গবেষণা ও শ্রেণিকক্ষ সংকট নিরসন করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা। পরিকল্পনা অনুযায়ী সাতটি উন্নতমানের লিফট স্থাপন করা হলেও বর্তমানে এর পাঁচটিই অকেজো অবস্থায় রয়েছে। লিফটের বারবার বিকল হওয়া এবং লিফটে আটকে পড়ার মতো দুর্ঘটনা সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে।
এ বিষয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং শাখার সুপারিনটেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার তরিকুল ইসলাম জানান, লিফট পরিচালনার জন্য দক্ষ লিফটম্যানের প্রয়োজন থাকলেও বারবার দাবি সত্ত্বেও তা পূরণ হয়নি। পাশাপাশি, পূর্বের রক্ষণাবেক্ষণ প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় নতুন ঠিকাদার নিয়োগের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। দ্রুত সমস্যার সমাধানের আশ্বাস দেন তিনি।
ভবনটির প্রতিটি তলায় থাকার কথা ছিল ক্লাসরুম, ল্যাব, ডিন ও চেয়ারম্যানের চেম্বার। বাস্তবে, অধিকাংশ কক্ষই ফাঁকা পড়ে আছে; নেই প্রয়োজনীয় চেয়ার, টেবিল বা ডেস্ক। ল্যাবগুলোও নির্দিষ্ট কাঠামো বা সুযোগ-সুবিধাবিহীন। ফলে, অধিকাংশ বিভাগ এখানে স্থানান্তর করতে অনিচ্ছুক। বর্তমানে ভবনের রুম ও ফ্লোর বণ্টন কাজও অসম্পূর্ণ। আগে অগোছালোভাবে রুম বরাদ্দ দিলেও জুলাই মাসের প্রশাসনিক পরিবর্তনের পর নতুন বণ্টন কমিটি গঠিত হলেও চূড়ান্ত বণ্টন এখনো হয়নি।
এছাড়াও নিচতলায় শিক্ষার্থীদের জন্য থাকছে উন্নতমানের ক্যাফেটেরিয়া ও শিক্ষার্থীরা ক্লাস শেষে পড়াশোনা সম্পর্কে বিভিন্ন আলোচনা ও ক্লাসের অবসর সময়ে বিনোদনের জন্য থাকছে স্টুডেন্ট গেদারিং পয়েন্ট। ছেলে ও মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য থাকছে পৃথক পৃথক নামাজ ঘর ও ওজুখানার ব্যবস্থা এবং ছাত্র ও ছাত্রীদের জন্য থাকছে আলাদা কমনরুমেরও ব্যবস্থা। এছাড়াও থাকবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য সেমিনার রুম এবং কনফারেন্স রুম। এসকল রুম আর স্পেস থাকলেও নেই কোনো সুবিধা ফাঁকা পড়ে থাকা নিচতলা অযত্নে আর পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভাবে ধুলা ময়লার স্তূপ হয়ে আছে। শুধু নিচ তলায় নয়, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভাবে পুরো ভবনটি অধিকাংশ ফ্লোর ময়লা, অপরিষ্কার।
বিভিন্ন অনুষদের ডিনরা জানান, অপরিকল্পিত রুম বণ্টন ও ল্যাব সুবিধার অভাবে তারা সুষ্ঠুভাবে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছেন না। বিশেষ করে প্রযুক্তি-নির্ভর অনুষদগুলো ল্যাব প্রতিষ্ঠা না হওয়ায় চরম সমস্যায় রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. জাহাঙ্গীর কবির বলেন, নতুন ডিস্ট্রিবিউশন কমিটি ইতোমধ্যেই আমাদের কাছে একটি প্রাথমিক রিপোর্ট দিয়েছে। আমরা সেই আলোকে শীঘ্রই কমিটির সাথে বসে যৌক্তিকভাবে প্রয়োজনীয়তা অনুসারে রুম আর ফ্লোর বণ্টন করে দিব। আর দশ তলা একাডেমিক ভবনের অনেক কাজ এখনো বাকি। আগের প্রশাসন এসব কাজ বাকি রেখেই ভবন বুঝে নিয়েছে, চালু করে দিয়েছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সিকিউরিটি মানিও অনেকটায় ফেরত দিয়ে দিয়েছে যার ফলে আমরা চাইলেও বাকি কাজ করতে পারছি না। সামনে ধীরে ধীরে সমস্যা গুলো সমাধান করা হবে।
এ বিষয়ে রেজিস্ট্রার বলেন, আমরা ইতোমধ্যেই ইউজিসির সাথে কর্মচারী, নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগের ব্যাপারে কথা বলেছি। ফ্রিল্যান্সিং কর্মচারী অর্থাৎ টেন্ডারের মাধ্যমে দ্রুততম ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা নিরাপত্তা কর্মীসহ কর্মচারী নিয়োগ দিবো। এর মধ্যে থাকবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কর্মী। আর বর্তমানে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাদা করে লিফটম্যান নিয়োগ দেওয়ার সক্ষমতা নেই। তবে ফ্রিল্যান্সিং কর্মচারীদের ট্রেনিং দিয়ে লিফটম্যানের চাহিদা পূরণ করার পরিকল্পনা রয়েছে।