দালালের ফাঁদে প্রবাসে মৃত্যু, এখনও দেশে পৌঁছায়নি সাফিউলের মরদেহ

"লক্ষ্যের সন্ধানে বেরিয়েছিল, ফেরেনি আর..." বাস্তবে এমনই পরিণতি হয়েছে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কামারদহ ইউনিয়নের রসুলপুর বালুপাড়া গ্রামের সাফিউল ইসলামের। ভাগ্য ফেরাতে ঋণ করে সৌদি আরব পাড়ি জমিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বৈধ কাগজপত্র ছাড়া সেখানে কাজ না পেয়ে টানা ১৫ মাস অনাহারে, রোগে, অবহেলায় কাটে তার জীবন। অবশেষে গত ২৮ জুলাই সৌদি আরবের এক হাসপাতালের গেটে নিঃসঙ্গ মৃত্যু হয় এই তরুণের। এখনো দেশে ফেরেনি তার মরদেহ; অসহায় পরিবারের চোখে-মুখে শুধুই আহাজারি আর আর্তনাদ।
মৃত সাফিউল ইসলাম (২৫) স্থানীয় জলিল শেখের ছেলে। গ্রামের সবাই তাকে সহজ-সরল, আশাবাদী তরুণ হিসেবে চিনতেন। পরিবার-পরিজনের মুখে হাসি ফোটানোর স্বপ্ন নিয়েই তিনি প্রবাসে যান। জানা যায়, গত বছরের মে মাসে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে আড়াই লাখ এবং স্থানীয়ভাবে আরও ১ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে এক দালালের মাধ্যমে সৌদি আরব যান সাফিউল ও একই গ্রামের অপর যুবক রনি। তবে কোনো বৈধ কর্মসংস্থান ছাড়া সেখানে গিয়ে দালালের ফাঁদে পড়েন তারা। কাজ না পেয়ে শুরু হয় দুর্বিষহ জীবন।
পরিবারের সদস্যরা জানান, সাফিউল কোন চাকরি না পেয়ে খাবারের জন্য ইমামদের কাছে সাহায্য চাইতেন, কখনো মসজিদে, আবার কখনও ফ্লাইওভারের নিচে রাত কাটাতেন। দীর্ঘদিন না খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লেও চিকিৎসা পাননি। এমন অবস্থায় এক হাসপাতালের গেটেই মৃত্যু হয় তার। মৃত্যুর পর প্রায় দুই সপ্তাহ পার হলেও আর্থিক সংকটে মরদেহ দেশে আনা সম্ভব হয়নি।
এমন বেদনাদায়ক ঘটনায় পরিবারের পাশাপাশি পুরো গ্রামজুড়ে বইছে শোক। সাফিউল মারা গেলেও একই দালালের মাধ্যমে যাওয়া অপর তরুণ রনি এখনো সৌদি আরবে মানবেতর জীবন যাপন করছেন বলে জানা গেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এই দুইজনকে পাঠানোর দায়িত্বে থাকা গ্রামের প্রবাস ফেরত ব্যক্তি ‘মিস্টার’ ঘটনার পর থেকেই গা-ঢাকা দিয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
সাফিউলের বাবা-মা বারবার শুধু একটি কথাই বলছেন “আমাদের বুকের মানিকটাকে ফিরিয়ে দিন!”
গাইবান্ধা জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সহকারী পরিচালক মো. নেশারুল হক বলেন, “পরিবারের আবেদনের ভিত্তিতে মরদেহ দেশে আনতে সরকারি সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।”
সাম্প্রতিক মন্তব্য
কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
মন্তব্য লিখুন