আজঃ সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ -এ ১৫ আশ্বিন ১৪৩২ - ১৫ রমজান ১৪৪৬
  • আজ রংপুরের আবহাওয়া

চুইঝাল আবাদে ঝুঁকছে লালমনিরহাটের মানুষ

Nuclear Fusion Closer to Becoming a Reality6

রহিম বাবু

রহিম বাবু , লালমনিরহাট সদর , লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ

আপডেটঃ 3 সেপ্টেম্বর, 2025

মসলাজাতীয় পণ্য চুইঝালের চাষ মূলত খুলনা অঞ্চলে জনপ্রিয় হলেও এখন এর বিস্তার সারাদেশে। চাহিদার সঙ্গে সঙ্গে জনপ্রিয়তাও বেড়েছে এই মসলার। দেশের উত্তরের জেলা লালমনিরহাটেও দিন দিন বাড়ছে দেশি মসলা চুইঝালের চাষ, যা অনেক পরিবারে বাড়তি আয় নিশ্চিত করছে। জানা গেছে, চুইঝাল চাষে আলাদা জমির প্রয়োজন হয় না। বিনা খরচে চুইঝাল চাষ করা সম্ভব। গাছটি দেখতে অন্যান্য গাছের মতো, তাই লালমনিরহাটে এটি চইপান নামে পরিচিত। যে কোনো গাছে এর চারা রোপণ করা যায়। বিনা খরচে আয় হওয়ায় দিন দিন মানুষের আগ্রহও বাড়ছে।

সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি বাড়ির সুপারি, নারিকেল বা অন্যান্য গাছ বেয়ে চুইঝালের গাছ জন্ম নিয়েছে। লতা জাতীয় পরজীবী এই উদ্ভিদটি ফলদ, বনজ ও সুপারি গাছে চাষ করা হয়। প্রতিটি বাড়িতে দুই থেকে চারটি করে চুইঝালের গাছ রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, চারা রোপণের মাত্র দুই বছরের মধ্যে চুইঝাল বিক্রির উপযোগী হয়। আকারভেদে একটি গাছ থেকে ৫ হাজার থেকে ৯০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করা সম্ভব। চুইঝাল চাষে আলাদা জমি, সার, কীটনাশক বা ছত্রাকনাশক স্প্রে করার প্রয়োজন পড়ে না। একবার চুইঝাল বড় হলে একাধিকবার সেটি থেকে চুইঝাল সংগ্রহ করা যায়। গাছের শিকড় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে লতা ও কা-ও মোটা হয়ে ওঠে।

কালীগঞ্জ উপজেলার মদাতি ইউনিয়নের চুইঝাল চাষি মনিরুজ্জামান জানান, এ বছর বাড়ির সুপারি ও আম-কাঁঠালের ৩০টি গাছে চুইঝাল রোপণ করেছেন। বিনামূল্যে তিন বছর পর তিনি আশা করছেন এই গাছগুলো থেকে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা আয় করতে পারবেন।

আরেক কৃষক প্রদীপ কুমার বাড়ির ১৫০টি সুপারি ও আম-কাঁঠালসহ বিভিন্ন গাছে চুইঝাল রোপণ করেছেন। তিনি আশা করছেন দুই বছর পর এর মাধ্যমে ভালো আয় হবে।

সদর উপজেলার বড়বাড়ী ইউনিয়নের চুইঝাল চাষি আব্দুল জলিল বলেন, আমি ১৫ বছর আগে বসত বাড়ির সুপারি ও আমের গাছে চুইঝাল লাগিয়েছি। এখন প্রতিটি গাছ থেকে ১২ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকার চুইঝাল বিক্রি করেছি। বিভিন্ন জেলার ক্রেতারা বাড়ি থেকেও এটি সংগ্রহ করে নিয়ে যায়।

কৃষি বিভাগের হিসেব মতে, লালমনিরহাট জেলায় ৪৭০ বিঘা জমিতে ২৬ হাজার চুইঝাল গাছ রয়েছে। চারা লাগানোর ২থেকে ৩ বছরের মধ্যে চুইঝাল বিক্রির যোগ্য হয়ে ওঠে।

জেলায় কয়েকজন খুচরা ব্যবসায়ী জানান, তারা গ্রামে গ্রামে গিয়ে চুইঝাল সংগ্রহ করে আড়ৎদারের কাছে বিক্রি করেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের আড়ৎদাররা পুনরায় সেগুলো সংগ্রহ করে। এভাবে প্রতি বছর জেলায় প্রায় ১০ কোটি টাকার চুইঝালের লেনদেন হয়।

কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তুষার কান্তি রায় বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চুইঝাল চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করতে বিভিন্ন ক্যাম্পেইন চালাচ্ছে। বিনামূল্যে ও অতিরিক্ত জমি ছাড়াই চুইঝাল চাষ হওয়ায় দিন দিন এর চাষ বাড়ছে।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড.সাইখুল আরিফিন বলেন, জেলা কৃষি বিভাগ লাভজনক এই উদ্ভিদটি চাষে কৃষকদের উৎসাহ, প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।

মন্তব্য লিখুন

সাম্প্রতিক মন্তব্য

কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

সম্পাদকের কলাম