আজঃ শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ -এ ৫ পৌষ ১৪৩২ - ২৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭
  • আজ রংপুরের আবহাওয়া
• দিনাজপুরে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস ও জাতীয় প্রবাসী দিবস পালিত • কাউনিয়ায় আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস ও জাতীয় প্রবাসী দিবস পালিত • গাইবান্ধায় বিদ্যুৎ স্পৃষ্টে রং মিস্ত্রি'র মৃত্যু • ঠাকুরগাঁও-১ আসনে মনোনয়ন কিনলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল • নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে সবাইকে সৎ ও দায়িত্বঁশীল ভূমিকা পালন করতে হবে -জেলা প্রশাসক এনামুল আহসান • দিনাজপুরে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস ও জাতীয় প্রবাসী দিবস পালিত • কাউনিয়ায় আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস ও জাতীয় প্রবাসী দিবস পালিত • গাইবান্ধায় বিদ্যুৎ স্পৃষ্টে রং মিস্ত্রি'র মৃত্যু • ঠাকুরগাঁও-১ আসনে মনোনয়ন কিনলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল • নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে সবাইকে সৎ ও দায়িত্বঁশীল ভূমিকা পালন করতে হবে -জেলা প্রশাসক এনামুল আহসান

আমাদের ৯০ এর শৈশব

আমাদের ৯০ এর শৈশব

আমাদের ৯০-এর শৈশব: যে সময় আর ফিরে আসবে না

মোবাইল, ইন্টারনেট, কনটেন্ট আর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভিড়ে দাঁড়িয়ে আজ যখন শৈশবকে দেখছি—তখন মনে হয়, ৯০-এর দশকের শৈশব যেন ইতিহাসের শেষ সরল সময়। সেই সময়ে জীবন ছিল ধীর, সরল, আন্তরিক; প্রতিটি দিন ছিল নতুন অভিজ্ঞতার রঙে ভরা। প্রযুক্তির ঝলমলে আলো এখন যেভাবে শিশুদের চোখকে ব্যস্ত রাখে, আমাদের শৈশব ছিল সেই আলো থেকে অনেক দূরে—কিন্তু স্বাধীনতার অবারিত নীল আকাশের নিচে।

মাটির গন্ধে বেড়ে ওঠা এক প্রজন্ম

আজকের শিশুরা জানালার বাইরে তাকিয়ে প্রকৃতি দেখে না; তারা স্ক্রিনে প্রকৃতির ছবি দেখে।
কিন্তু ৯০-এর দশকের শিশুরা প্রকৃতির মাঝেই বড় হয়েছে।
পাড়ার মাঠ, খেলার দোলনা, খেজুরগাছের ডগা, ডাঙা-নদীর জল, ঝরা পাতার শব্দ—এগুলো ছিল শৈশবের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

মাটির গন্ধ ছিল তখন প্রতিদিনের সঙ্গী। বৃষ্টি হলে খালি পায়ে দৌড়ানো ছিল স্বাভাবিক। ধুলা লাগলে বকা খেতে হলেও—সে ধুলাই ছিল আমাদের আসল স্বাধীনতা।

পাড়ার মাঠই ছিল আমাদের সোশ্যাল মিডিয়া

আজকের শিশুরা ভার্চুয়াল গেমে বন্ধু বানায়।
কিন্তু আমরা বন্ধু বানাতাম মাঠে, রাস্তায়, স্কুলের সামনে ছুটির গেটে দাঁড়িয়ে।

পাড়ার মাঠ ছিল আমাদের আসল সোশ্যাল মিডিয়া—
সেখানে ছিল টিম বানানোর আলোচনা,
ঝগড়া-মান-অভিমান,
আরও ছিল হার-জিতের আনন্দ-বেদনা।

সন্ধ্যার ডাক “বাড়ি যাই”—ছিল যেন নোটিফিকেশন।
যে ডাক শুনে খেলা থামিয়ে বাড়ি ফিরতে হত।

টিভি ছিল সীমিত, আনন্দ ছিল সীমাহীন

৯০-এর দশকে টিভিতে চ্যানেল ছিল দুই-তিনটা; অনুষ্ঠান ছিল হাতে গোনা।
তবু সেই সামান্যর মধ্যেই আনন্দ ছিল অনেক বেশি।

রবিবারের বাংলা সিনেমা,
শুক্রবারের ম্যাজিক অনুষ্ঠান,
কার্টুনের সময়,
“ইট’স এ কিডস ওয়ার্ল্ড”,
“রোবটিক্স”,
“ঘুড়িতে ডানা”,
ডোরেমন-পোকেমন আসার আগেই “মোগলি”-র জগতে হারিয়ে যাওয়া।

একটি অনুষ্ঠান মিস হলে সপ্তাহজুড়ে অপেক্ষা করা লাগত।
আর আজ—হাজার চ্যানেল, লক্ষ ভিডিও, তবু সন্তুষ্টির অভাব।

চিঠির আবেগ, অডিও ক্যাসেটের জাদু

যে সময়ে আমরা বড় হয়েছি, তখন চিঠি লেখা ছিল আবেগ ঢেলে দেওয়ার একমাত্র পথ।
খামের ওপর স্ট্যাম্প লাগিয়ে পোস্টবাক্সে ফেলা ছিল ছোট্ট এক রোমাঞ্চ।

অডিও ক্যাসেট ছিল সংগীতের জগতে প্রবেশের পাসপোর্ট।
ডাবিং স্টুডিও থেকে প্রিয় গান রেকর্ড করানো ছিল উৎসবের মতো।
একটা রেডিও ছিল সবার সঙ্গী—বাজলেই পাড়ার অন্ধকার গলিগুলো সুরে ভরে যেত।

আজ এসব স্মৃতি যেন গল্প হয়ে গেছে।

খেলার সাম্রাজ্য ছিল অফলাইন—আর তাতেই ছিল উত্তেজনার চূড়া

৯০-এর শৈশবে গেম মানেই ছিল—
● লাঠিখেলা
● বউচি
● মাটি খোঁচা
● গুড়ি-টানা
● সাতকুড়ি
● কানামাছি
আর একটু বড় হলেই ক্রিকেট-ফুটবলের রাজত্ব।

বাড়ির ছাদে ঘুড়ি ওড়ানো ছিল উৎসব।
ঘুড়ি কাটার পর দৌড়ে গিয়ে “মা-ছেং” ধরে আনার উত্তেজনা আজকের গেমিং স্কোরেও পাওয়া যায় না।

অল্পেই সুখী থাকার যে শিক্ষা, ৯০-এর শৈশব তা শিখিয়েছে সবচেয়ে বেশি

আমাদের খেলনা ছিল সীমিত, সুযোগ ছিল কম, স্বপ্ন ছিল ছোট—কিন্তু আনন্দ ছিল পরিপূর্ণ।
● নতুন স্কুল ব্যাগ মানেই উৎসব
● ঈদের জামা মানেই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আনন্দ
● কারো কাছে নতুন ভিডিও গেম থাকলে পুরো পাড়া লাইন ধরত
● নারকেলের বরফ বা আইসক্রিম মানেই ছিল রাজকীয় ট্রিট

আমাদের প্রয়োজন ছিল কম—আর সুখ ছিল আরও বেশি।

পরিবার ছিল সময় দেওয়ার জায়গা, স্ক্রিনের বাঁধা নয়

ডিনার ছিল পরিবারের সবার একসঙ্গে বসার সময়।
বাবা-চাচাদের গল্প, মা-খালাদের রান্নার সুবাস—শৈশবকে পূর্ণ করত।

আজ মোবাইল টেবিলে থাকে; তখন কথাই ছিল টেবিলের রাজা।

বাবা-মায়ের সঙ্গে সময় কাটানো ছিল স্বাভাবিক।
আজ সেটা পরিকল্পনা করে করতে হয়।

রাত ছিল অন্ধকার, আকাশ ছিল তারায় ভরা—এটাই ছিল শৈশবের রূপকথা

৯০-এর দশকে বিদ্যুতের লোডশেডিং ছিল নিত্যদিনের সঙ্গী।
কিন্তু সেই লোডশেডিং আমাদের রাতগুলোকে সুন্দর করে তুলত—

● মোমবাতির আলো
● রুমাল নেড়ে বাতাস করা
● গানের সুর
● গল্পের আসর
● ছাদের ওপর শুয়ে তারাগোনা

এ ছিল এক অদ্ভুত শান্তির সময়।
শহর-গ্রাম—সব জায়গায় রাত তখন সত্যিই রাত ছিল।

আজ আলোতে ঢাকা আকাশে তারা দেখা যায় না—শৈশবেও দেখা যায় না।

সেই সরলতার পৃথিবী আর নেই—কারণ সময় বদলেছে, মানুষ বদলেছে

৯০-এর শৈশব ফিরে আসবে না।
কারণ পৃথিবীর গতি বদলে গেছে।
প্রযুক্তি বদলে দিয়েছে সম্পর্ক, মানুষের সময়, শিশুর আগ্রহ, পরিবারিক দৃশ্যপট—সবকিছু।

কিন্তু সবচেয়ে বড় পরিবর্তন এসেছে অনুভূতিতে—
একসময় মানুষ ব্যস্ততার মধ্যেও সময় বের করত, এখন সময় থাকার পরও ব্যস্ত দেখাতে চায়।

আমাদের দায়িত্ব—সেই শৈশবের মানবিকতা যেন নতুন প্রজন্ম হারিয়ে না ফেলে

যদিও ৯০-এর শৈশব ফিরবে না,
তবু তার মূল্যবোধ ফিরিয়ে আনা সম্ভব—

● পরিবারে একসঙ্গে সময় কাটানো
● শিশুকে প্রকৃতির সঙ্গে পরিচয় করানো
● মাঠে খেলার সুযোগ দেওয়া
● স্ক্রিন টাইম কমানো
● বই পড়ার অভ্যাস তৈরি করা
● বাস্তব আনন্দকে গুরুত্ব দেওয়া

৯০-এর শৈশব ছিল যে কারণে বিশেষ—তার মূল ছিল মানবিকতা, সম্পর্ক, প্রকৃতির সান্নিধ্য ও সহজ আনন্দের শিক্ষা।

এই মূল্যবোধ নতুন প্রজন্মকে দিলে শৈশব হয়তো বদলাবে—
কিন্তু মানবিকতা বদলাবে না।

শেষ কথা

৯০-এর শৈশব আজ এক রঙিন স্মৃতি,
এক যুগের দলিল,
এক প্রজন্মের যৌথ আবেগ।

আমরা সেই স্মৃতিকে ধারণ করেই বড় হয়েছি।
আজকের আধুনিকতার ভিড়ে দাঁড়িয়ে যখন কেউ বলে—
“সেই সময়টা কি মনে আছে?”

তখন বুকের ভেতর অদ্ভুত নরম একটা আলো জ্বলে ওঠে।

কারণ সত্যি কথা হলো—
৯০-এর শৈশব শুধু সময় নয়,
এটা আমাদের অস্তিত্বের সবচেয়ে সুন্দর অংশ।

মন্তব্য লিখুন

সাম্প্রতিক মন্তব্য

কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

সম্পাদকের কলাম