আজঃ শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ -এ ৫ পৌষ ১৪৩২ - ২৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭
  • আজ রংপুরের আবহাওয়া
• দিনাজপুরে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস ও জাতীয় প্রবাসী দিবস পালিত • কাউনিয়ায় আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস ও জাতীয় প্রবাসী দিবস পালিত • গাইবান্ধায় বিদ্যুৎ স্পৃষ্টে রং মিস্ত্রি'র মৃত্যু • ঠাকুরগাঁও-১ আসনে মনোনয়ন কিনলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল • নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে সবাইকে সৎ ও দায়িত্বঁশীল ভূমিকা পালন করতে হবে -জেলা প্রশাসক এনামুল আহসান • দিনাজপুরে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস ও জাতীয় প্রবাসী দিবস পালিত • কাউনিয়ায় আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস ও জাতীয় প্রবাসী দিবস পালিত • গাইবান্ধায় বিদ্যুৎ স্পৃষ্টে রং মিস্ত্রি'র মৃত্যু • ঠাকুরগাঁও-১ আসনে মনোনয়ন কিনলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল • নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে সবাইকে সৎ ও দায়িত্বঁশীল ভূমিকা পালন করতে হবে -জেলা প্রশাসক এনামুল আহসান

প্রোকৃতির ঋণ কেউ শোধরাতে পারবে না

প্রোকৃতির ঋণ কেউ শোধরাতে পারবে না

আমরা এই মহামূল্যবান পৃথিবীর যোগ্য সন্তান হতে চেয়েছি।

মানুষ সভ্যতা গড়েছে, শহর নির্মাণ করেছে, প্রযুক্তিকে আঙুলের ডগায় নিয়ে এসেছে—তবু এক সত্যের কাছে আজও নিঃসহায়: প্রকৃতির কাছে মানুষের ঋণের পরিমাণ অসীম, আর সে ঋণ কোনোদিন শোধ করা সম্ভব নয়। জন্মের পর প্রথম নিঃশ্বাস থেকে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত মানুষ প্রকৃতির দানেই বেঁচে থাকে। অথচ এই দানের মূল্য দিতে মানুষের উদাসীনতা প্রতিদিনই যেন আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

জন্ম থেকে মৃত্যুপথ—মানুষ প্রকৃতির দয়ার ওপর নির্ভরশীল

মানুষের প্রথম শ্বাস আসে গাছের অক্সিজেন থেকে, প্রথম খাদ্য জন্মায় মাটির কোলে, প্রথম আলো আসে সূর্য থেকে। পৃথিবীর প্রতিটি জীবন প্রকৃতির মহার্ঘ দান। কিন্তু মানুষ তার এই ঋণ ভুলে প্রতিনিয়ত প্রকৃতিকে ক্ষতবিক্ষত করছে শিল্পায়ন, দখলদারিত্ব আর অযত্নের মাধ্যমে। প্রকৃতির সহনশীলতা অসীম হলেও তার প্রতিশোধও নীরব, ভয়াবহ এবং অপ্রতিরোধ্য।

নিঃস্বার্থ প্রকৃতির বিপরীতে মানুষের নির্দয় আকাঙ্ক্ষা

সূর্য কোনোদিন আলো দেওয়ার বিনিময় দাবী করেনি। সমুদ্র আমাদের খাদ্য, জলবায়ু ও পরিবহন দেয় নিঃস্বার্থভাবে। বন-জঙ্গল মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাসের ভার বহন করে। অথচ মানুষ এসবকে নিজের সম্পদ ভাবতে শুরু করেছে—নদী ভরাট করছে, পাহাড় কাটছে, বন উজাড় করছে।
প্রকৃতি আমাদের দাস নয়; প্রকৃতি আমাদের জন্মদাত্রী। তাকে অবহেলা করলে তার প্রতিক্রিয়া আসে দুর্যোগের মাধ্যমে—বন্যা, খরা, তাপপ্রবাহ, ঝড়, অগ্নিকাণ্ড।

মানুষের সভ্যতা প্রকৃতির সামনে কতটা ক্ষুদ্র—ঘটনাই তার প্রমাণ

একদিকে আমরা মহাকাশে রকেট পাঠাই, অন্যদিকে সামান্য অতিবৃষ্টি শহর তলিয়ে দেয়। বিজ্ঞান যত উন্নত হয়েছে, প্রকৃতির শক্তিও ততবার আমাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছে—মানুষ প্রকৃতির চেয়ে বড় নয়।
ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প, অতিবৃষ্টি, নোনা জল ছড়িয়ে পড়া—সবই দেখিয়ে দেয়, প্রকৃতির সামান্য খেয়াল বদলে গেলে মানুষের সেরা প্রযুক্তিও অসহায় হয়ে পড়ে।

উন্নয়ন নয়, আত্মবিনাশের পথে—মানুষের ভুল সিদ্ধান্তগুলো

যে উন্নয়ন প্রকৃতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, সেই উন্নয়ন প্রকৃতপক্ষে উন্নয়ন নয়।
● নদী দখল
● পাহাড় কাটা
● বন উজাড়
● কৃষিজমিতে বিষ
● নদী-সমুদ্রে বর্জ্য ফেলা
● আকাশে কার্বন বৃদ্ধি
এগুলো সবই মানুষের নিজ অস্তিত্বকে হুমকি দেওয়ার নামান্তর। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটি বিষাক্ত, অস্বাস্থ্যকর এবং দুর্যোগপূর্ণ পৃথিবী উপহার দেওয়া ছাড়া এদের কোনো পরিণতি নেই।

প্রকৃতি ঋণ শোধ করতে বলে না—কিন্তু নিয়ম ভাঙলে শাস্তি নিশ্চিত

প্রকৃতির নিয়ম অটল।
গাছ কাটলে অক্সিজেন কমবে।
নদী ভরাট করলে জলাবদ্ধতা বাড়বে।
বন উজাড় হলে বন্যার তীব্রতা বাড়বে।
সমুদ্র দূষিত হলে খাদ্যশৃঙ্খলা ভেঙে পড়বে।

প্রকৃতি কাউকে শত্রু ভাবে না, কিন্তু অবহেলাকারীকেও ছাড় দেয় না।
মানুষের ভুলের কারণে আজ পরিবেশের চক্র ভেঙে যাচ্ছে, আর তার মূল্য দিতে হচ্ছে দুর্যোগ আর সংকটে।

মানুষের সবচেয়ে বড় ভুল: প্রকৃতিকে দাস ভাবা

মানুষ যত উন্নত হয়েছে, তার লোভ তত বেড়েছে। প্রকৃতিকে নিজের সম্পদ ভেবে সে মনে করেছে—চাইলেই নদী আটকে দেবে, পাহাড় কাটবে, বন উজাড় করবে, সমুদ্র দখল করবে। কিন্তু সে ভুলে গেছে—প্রকৃতি চিরকাল নিজের মালিকানায় থাকে; মানুষ শুধু ক্ষণিকের অতিথি।
যে পৃথিবী কোটি বছরের বিবর্তনে তৈরি হয়েছে, মানুষ তা কয়েক দশকে ধ্বংস করে ফেলছে।

ঋণ শোধ অসম্ভব, তবে কৃতজ্ঞতা প্রদর্শন বাধ্যতামূলক

প্রকৃতির ঋণ শোধ হবে না—এ সত্য অটল।
তবে আমরা চাইলে প্রকৃতির প্রতি সম্মান দেখাতে পারি—
● গাছ রোপণ করে
● নদীর প্রবাহ বাঁচিয়ে
● মাটি ও জল দূষণ কমিয়ে
● প্লাস্টিক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করে
● নতুন সবুজ এলাকা গড়ে
● কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে
● বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা এনে

এই কৃতজ্ঞতা দেখানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।

ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রতি আমাদের দায়—এ পৃথিবী ধার করা সম্পদ

আজকের শিশুরা কী ধরনের পৃথিবীতে বড় হবে?
তাপপ্রবাহ, বিষাক্ত খাবার, দূষিত নদী-হাওয়া, বারবার বন্যা—এ কি তাদের প্রাপ্য?
আমাদের ভুলের বোঝা তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া কোনোভাবেই ন্যায়সংগত নয়।
পৃথিবী আমাদের সম্পত্তি নয়—এটা আমরা ধার নিয়েছি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছ থেকে। দায়িত্বশীল ব্যবহারই তাদের প্রতি ন্যূনতম সম্মান।

প্রকৃতি ধ্বংস হলে অর্থনীতি, রাজনীতি, প্রযুক্তি—সবকিছু ভেঙে পড়ে

অনেকে ভাবে প্রযুক্তি আর অর্থনীতিই পৃথিবী চালায়। কিন্তু প্রকৃতি অসুস্থ হয়ে পড়লে—
● কৃষি ধ্বংস
● খাদ্য সংকট
● পানির ঘাটতি
● শিল্প-বাণিজ্য থমকে যাওয়া
● পর্যটন বিপর্যস্ত
● স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়া
যে কোনো দেশের শক্তি, উন্নয়ন, ক্ষমতা—সবই মুহূর্তে মাটিতে মিশে যেতে পারে।

প্রকৃতি ক্ষমাশীল, কিন্তু প্রতিশ্রুতির বিচার করে

প্রকৃতি কখনো প্রতারের আশ্রয় নেবে না। তুমি তাকে যতটা ভালোবাসবে, সে দ্বিগুণ ফেরত দেবে।
কিন্তু তাকে যত আঘাত করবে, সে তার নিয়মে তার জবাব দেবে।
প্রকৃতিকে রক্ষা করা মানে আসলে নিজের ভবিষ্যৎকে রক্ষা করা—এটাই সত্য।

শেষ কথা: প্রকৃতির প্রতি কৃতজ্ঞতা—টেকসই ভবিষ্যতের একমাত্র পথ

মানুষ যতই অগ্রসর হোক, প্রকৃতির ঋণ সে কখনো শোধ করতে পারবে না।
কিন্তু সম্মান, দায়িত্ব ও সচেতন ব্যবহার দিয়ে আমরা অন্তত বলতে পারি—আমরা এই মহামূল্যবান পৃথিবীর যোগ্য সন্তান হতে চেয়েছি।

প্রকৃতি এখনো সময় দিচ্ছে।
ভুল শুধরানোর সুযোগ এখনো আছে।

প্রকৃতির প্রতি সম্মানই আমাদের ভবিষ্যৎ বাঁচাবে,
আমাদের অস্তিত্ব বাঁচাবে,
আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে রক্ষা করবে।

প্রকৃতির ঋণ কেউ শোধরাতে পারবে না—
তবে ভালোবাসা, রক্ষা ও দায়বদ্ধতা দিয়ে তাকে সম্মান জানানো যায়।

মন্তব্য লিখুন

সাম্প্রতিক মন্তব্য

কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

সম্পাদকের কলাম