আজঃ শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ -এ ৫ পৌষ ১৪৩২ - ২৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭
  • আজ রংপুরের আবহাওয়া
• দিনাজপুরে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস ও জাতীয় প্রবাসী দিবস পালিত • কাউনিয়ায় আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস ও জাতীয় প্রবাসী দিবস পালিত • গাইবান্ধায় বিদ্যুৎ স্পৃষ্টে রং মিস্ত্রি'র মৃত্যু • ঠাকুরগাঁও-১ আসনে মনোনয়ন কিনলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল • নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে সবাইকে সৎ ও দায়িত্বঁশীল ভূমিকা পালন করতে হবে -জেলা প্রশাসক এনামুল আহসান • দিনাজপুরে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস ও জাতীয় প্রবাসী দিবস পালিত • কাউনিয়ায় আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস ও জাতীয় প্রবাসী দিবস পালিত • গাইবান্ধায় বিদ্যুৎ স্পৃষ্টে রং মিস্ত্রি'র মৃত্যু • ঠাকুরগাঁও-১ আসনে মনোনয়ন কিনলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল • নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে সবাইকে সৎ ও দায়িত্বঁশীল ভূমিকা পালন করতে হবে -জেলা প্রশাসক এনামুল আহসান

তিস্তা ও তিস্তা পাড়ের কান্না

তিস্তা ও তিস্তা পাড়ের কান্না

এ যেন নদী নয়, অনিশ্চয়তার আর্তনাদ।

বাংলাদেশের উত্তর সীমান্ত ঘেঁষে বয়ে চলা তিস্তা নদী একসময় ছিল উত্তরের জীবনরেখা—খাদ্য, মাছ, সেচ, কৃষি, জীবিকা, সংস্কৃতি—সবকিছুর প্রানস্পন্দন। কিন্তু আজ এই নদী শুকিয়ে খালের মতো, আবার কখনো বর্ষায় রুদ্রমূর্তি ধারণ করে সব ভাসিয়ে নিয়ে যায়।
তিস্তা আজ কাঁদে—তার বুকে বালুচর জমে, তার স্রোত হারায়, তার চরবাসীর জীবন থমকে থাকে। আর সেই কান্নার সঙ্গে মিশে আছে লক্ষ মানুষের দীর্ঘশ্বাস।

তিস্তা শুধু একটি নদী নয়; এটি উত্তরাঞ্চলের মানুষের স্বপ্ন, আশা, চোখের জল, বেঁচে থাকার সংগ্রাম।

কোটি মানুষের জীবনের নদী—আজ কেন মৃতপ্রায়?

একসময় তিস্তায় ছিল প্রকাণ্ড স্রোত। শীতেও জোয়ারের মতো পানি—সেচে চলত লাখো একর জমি।
আজ শুষ্ক মৌসুমে তিস্তায় হাঁটু–সমান পানিও থাকে না।
মাছ পাওয়া যায় না, নৌকা চলে না, কৃষি হয় না—অর্থনীতি থমকে যায়।

তিস্তায় শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাব এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে নদীটি এখন কেবল মানচিত্রে নদী, বাস্তবে বালুচর আর স্মৃতির গল্প।

নদীর বুক শুকিয়ে গেলে শুধু পানি কমে না—
কমে জীবনের গতি, কমে মানুষের স্বপ্ন, কমে একটি অঞ্চলের ভবিষ্যৎ।

বর্ষায় রুদ্র রূপ—দু'চোখ ভরা অশ্রু

তিস্তার আরেকটি রূপ আছে—ভয়ংকর রূপ।
জুলাই–আগস্ট এলেই তিস্তা ফুলে-ফেঁপে ওঠে।
জলাধার উজান থেকে নেমে আসে সারারাতের বৃষ্টি নিয়ে।
এক রাতেই বাঁধ ভেঙে যায়, ঘর ভেসে যায়, মাঠ প্লাবিত হয়, মানুষের আশা ভেসে যায় দূরের অজানায়।

তিস্তাপারের মানুষ জানে—
“শুকনো মৌসুমে পানি নেই, বর্ষায় পানি সহ্য করা যায় না।”
এই দ্বৈত যন্ত্রণা বহন করে তারা বছরের পর বছর।

বন্যা মানে শুধু নদী ভাসে না—
ভাসে মানুষের ঘর, সংসার, স্মৃতি, জমি, গবাদিপশু, ফসল, ভবিষ্যৎ।

তিস্তার পরিবর্তন—মানুষের জীবনের পালাবদল

তিস্তাপারের মানুষ যেসব পেশায় জীবন কাটিয়েছে—
মাছ ধরা, চাষাবাদ, নৌকা চালানো, নদীঘাট ব্যবসা—
সবই আজ হুমকির মুখে।

শুকনো মৌসুমে কৃষক জমিতে পানি পায় না।
বর্ষায় পানির তীব্র স্রোতে জমির মাটি ধসে পড়ে, চর বদলে যায়, গ্রাম নদীতে তলিয়ে যায়।
এক জীবনে যারা কয়েকবার বাড়ি বদলেছে—তিস্তাই তার সাক্ষী।

এ যেন নদী নয়, অনিশ্চয়তার আর্তনাদ।

চরবাসীর জীবনে চরম অসহায়ত্ব

তিস্তার চর মানে—
● স্থায়ী বাসস্থান নেই
● চিকিৎসা নেই
● স্কুলে যাওয়া কঠিন
● যোগাযোগ নেই
● নিরাপত্তা নেই
● খাদ্যের অভাব
● জমির মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব

একদিকে নদী খায়, অন্যদিকে দারিদ্র্য পীড়া দেয়।
চরের মানুষ আজ তিন জিনিসের সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী—বন্যা, খরা, এবং ক্ষুধা।

তিস্তা পাড়ের কান্না আসলে আমাদের জাতির কান্না

একটি নদীর মৃত্যু মানে একটি অঞ্চলের মৃত্যু।
তিস্তা যদি বাঁচে না—উত্তরবঙ্গ বাঁচবে কীভাবে?

এই নদী কোনো রাজনৈতিক দল, কোনো সীমান্ত, কোনো সরকারের সম্পদ নয়—
এটা মানুষের অস্তিত্ব।

নদীর স্রোত থেমে গেলে থেমে যায় কৃষকের হাসি, শ্রমিকের কাজ, জেলের নৌকা, শিশুর স্বপ্ন, মায়ের রান্নার চুলা, পুরো অঞ্চলের অর্থনীতি।

প্রকল্প–পরিকল্পনার আশা ও বাস্তবের হতাশা

বছরের পর বছর ধরে তিস্তাকে ঘিরে নানা পরিকল্পনা, নদী খনন, বাঁধ সংস্কার, ভূমি পুনর্বাসন—সবই শোনা যায়।
কিন্তু বাস্তবে পরিবর্তন সীমিত।

যেসব প্রকল্প থাকে—
● ধীরগতির কাজ
● রক্ষণাবেক্ষণের অভাব
● অনিয়ম
● বাজেট সংকট
● বর্ষায় স্থায়ী সমাধানের অভাব

এসবের কারণে তিস্তা এখনো নদী নয়—একটি প্রশ্নবোধক চিহ্ন।

মানুষ চায় স্থায়ী সমাধান—
যেন শুষ্ক মৌসুমে নদীতে পানি থাকে, বর্ষায় নদীর তাণ্ডব কমে।

তিস্তা নদীকে বাঁচানো মানে শুধু নদী বাঁচানো নয়—একটি অঞ্চলকে পুনর্জীবিত করা

যদি তিস্তা আবার Sজীবন ফিরে পায়—
● কৃষি হবে
● কর্মসংস্থান বাড়বে
● মাছ ফিরে আসবে
● চরের মানুষ নিরাপদ হবে
● খাদ্য উৎপাদন বাড়বে
● মানুষ নদীকে আবার আশার প্রতীক বলে মনে করবে

তিস্তাকে বাঁচালে উত্তরবঙ্গের অর্থনীতি বিকশিত হবে।
বাঁচবে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সমাজ—সবই।

তিস্তার কান্না শোনার সময় এখনই—কাল নয়

প্রকৃতি অপেক্ষা করে না।
নদী শুকিয়ে গেলে চরে বালু জমে।
একবার মারা যাওয়া নদীকে পুনর্জীবিত করা প্রায় অসম্ভব।

তাই সময় এখনই—
● তিস্তার পানির সুষ্ঠু সমাধান
● নদী খনন
● চরবাসীর জন্য স্থায়ী আবাস
● বন্যা নিয়ন্ত্রণ
● টেকসই বাঁধ
● জীবন–জীবিকার সুযোগ বৃদ্ধি

এই পদক্ষেপগুলো না নিলে তিস্তা ধীরে ধীরে স্মৃতির নদী হয়ে যাবে।

তিস্তা বাঁচলে তিস্তাপারের মানুষ বাঁচবে

তিস্তাপারের কান্না শুধুই একটি অঞ্চলের নয়—এটি পুরো জাতির মানবিক দায়িত্বের বিষয়।
একটি নদী কাঁদছে, আর তার সঙ্গে কাঁদছে লাখো অসহায় মানুষ।

আমরা হয়তো নদীর স্বর শুনতে পাই না—
কিন্তু মানুষের দীর্ঘশ্বাস কি আমরা সত্যিই শুনতে পাচ্ছি না?

তিস্তা কেবল নদী নয়—
এটি একটি অঞ্চল, একটি ইতিহাস, একটি মানুষ—
যাদের বেঁচে থাকার সংগ্রাম আজো অব্যাহত।

তিস্তাকে বাঁচাতে হবে।
এটাই সময়।
এটাই মানবতা।

মন্তব্য লিখুন

সাম্প্রতিক মন্তব্য

কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

সম্পাদকের কলাম