আজঃ সোমবার, ১৮ আগস্ট, ২০২৫ -এ ১৮ ভাদ্র ১৪৩২ - ১৮ শা’বান ১৪৪৬
  • আজ রংপুরের আবহাওয়া

বাবার ভ্যান থেকে বিশ্বমঞ্চের স্বপ্নে সোনালি

Nuclear Fusion Closer to Becoming a Reality6

ইকবাল বাহার

ইকবাল বাহার , পঞ্চগড় সদর , পঞ্চগড় প্রতিনিধিঃ

আপডেটঃ 16 আগস্ট, 2025

“আমি ভ্যান চালাই, আমার মেয়ে বিমানে চড়ে দেশ–বিদেশে খেলতে যায়”—শুধু কথায় নয়, গর্ব আর আবেগে কণ্ঠ ধরে আসে পঞ্চগড়ের ভ্যানচালক ফারুক ইসলামের। তিনি যাঁর কথা বলছেন, সে শুধু তাঁর মেয়ে নয় বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের গোলরক্ষক ফেরদৌসি আক্তার সোনালী।

পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের বনগ্রামের দরিদ্র পরিবারে জন্ম তার। বাবা ফারুক ইসলাম ব্যাটারিচালিত ভ্যান চালিয়ে সংসার চালান, মা মেরিনা বেগম গৃহিণী। তিন সন্তানের মধ্যে সোনালী বড়। সংসারের সম্পদ বলতে সামান্য ভিটেবাড়ি। কিন্তু স্বপ্ন ছিল আকাশছোঁয়া।

বাড়িতে অভাব আর সমাজের কটূ মন্তব্য দুয়ের সঙ্গেই লড়াই করে ফুটবলের প্রতি ভালোবাসাকে বাঁচিয়ে রেখেছে সোনালী। ছোটবেলায় গইচপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা থেকেই শুরু তার যাত্রা। এরপর হাড়িভাসা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের আন্তঃবিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্টে খেলেন। গ্রামের মানুষ বলতো, “মেয়ে হয়ে ফুটবল খেলবে?” কিন্তু সে শুনতে শেখেনি ‘হার মানা’ শব্দটা।

পঞ্চগড় শহরের টুকু ফুটবল একাডেমিতে নিয়মিত অনুশীলন করতেন প্রচণ্ড কষ্টের মধ্যেও। কোচ টুকু রেহমানের চোখে তখনই সোনালী ছিল এক বিরল প্রতিভা। কখনো খেয়ে, কখনো খালি পেটে, আবার কখনো ধার করা টাকায় চলে যেত অনুশীলনে।

২০২৩ সালে সোনালী সুযোগ পায় বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপি)। বর্তমানে নবম শ্রেণিতে পড়ছেন সেখানে। এখান থেকে তাঁর নাম উঠে আসে জাতীয় দলে। সিনিয়র দলের হয়ে জর্ডানে খেলতে যান এবং দলকে চ্যাম্পিয়ন হতে সাহায্য করেন। অনূর্ধ্ব–২০ সাফ ও এএফসি টুর্নামেন্টে গোলপোস্ট সামলেছেন দক্ষতার সঙ্গে। লাওস থেকে দেশে ফিরেই বাবার ভ্যানে চড়ে নিজ গ্রামে ফেরার সে চিত্রটি যেন স্বপ্নময় নাটকের দৃশ্য।

গ্রামে তাঁকে শুভেচ্ছা জানাতে মানুষ ভিড় করে, মিষ্টি বিলি করেন তাঁর বাবা। ফারুক ইসলাম বলেন, “আমি গরীব মানুষ, কিন্তু আমার মেয়ের জন্যই আজ সবাই আমাকে চেনে। এর চেয়ে বড় আনন্দ কিছু নেই।” মা মেরিনা বেগমের চোখে পানি, তবুও মেয়ের উপর অগাধ বিশ্বাস “ও আরও অনেক দূর যাবে।”

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান গোবিন্দ চন্দ্র রায় জানান, “সোনালী আমাদের ইউনিয়নের গর্ব। তার পরিবারকে আরও সরকারি সহায়তা দেওয়া উচিত।”

একই ইউনিয়ন থেকে জাতীয় দলের আরেক গোলরক্ষক ইয়ারজান বেগম উঠে এসেছে যা এলাকাবাসীর জন্য দ্বিগুণ গর্বের বিষয়।

সোনালী বলেছেন, “আমি চাই দেশের জন্য বড় কিছু করতে। একদিন বিশ্বকাপে খেলতে চাই।”

বাবার পুরনো ভ্যান আর গ্রামের কাঁচা রাস্তা পেরিয়ে যে মেয়ে আজ আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের সবুজ ঘাসে দৌড়ায়, তার নাম সোনালী যে শুধু নিজের নয়, পুরো দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে।

মন্তব্য লিখুন

সাম্প্রতিক মন্তব্য

কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

সম্পাদকের কলাম